ডন প্রতিবেদক, অহিদুল ইসলাম, নওগাঁ : ৫ বছর পর মানসিক ভারসাম্যহীন মাকে ফিরে পেয়েছেন নার্সিংয়ের এক শিক্ষার্থী।
ওই শিক্ষার্থীর নাম ফারজানা আক্তার মিম।
আর তাঁর মায়ের নাম রিনা আক্তার খতে (৪৬)। খতে নামেই তাঁকে ডাকা হতো।
ফারজানাদের বাড়ি খুলনার ফুলতলা উপজেলার নাড়ীপাড়া গ্রামে। তাঁর বাবার নাম মোহসীন আখন।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গত এক সপ্তাহ ধরে এক মানসিক ভারসাম্যহীন নারী নিয়ামতপুর উপজেলা সদরের জিরোপয়েন্ট এলাকায় ব্রিজের ওপর ভবঘুরে হিসেবে থাকতন। তাঁর এ অবস্থা দেখে স্থানীয় যুবক আব্দুর রাজ্জাক নয়ন, তারেক ও ‘ওষুধের দোকানদার’ হারুন অর রশিদ ওই নারীর চিকিৎসার দায়িত্ব নেন এবং স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান বজলুর রহমান নঈমেরসঙ্গে যোগাযোগ রাখেন।
প্রাথমিকভাবে ওই নারী তাঁর নাম রিনা বলে জানান। এরপর তারেক ফেসবুকে হারানো বিজ্ঞপ্তি দিয়ে ওই নারীর স্বজন খুঁজতে থাকেন। এক পর্যায়ে বিষয়টির ব্যাপারে জানতে পেরে তিনি রিনাদের পরিবারের লোকজনেরসঙ্গে যোগাযোগ করেন। তখন নিশ্চিত হওয়া যায় যে, ওই নারী তাঁদেরই স্বজন।
পরে রিনা আক্তারের মেয়ে ফারজানা এবং তাঁর বোনের মেয়ে শাহানাজ নিয়ামতপুরে আসেন। তখন তাঁরা পুরোপুরি নিশ্চিত হয়ে রিনা আক্তারকে নিয়ে যান।
সার্বিক বিষয়ে ফারজানা আক্তার মিম বাঙলা কাগজ ও ডনকে বলেন, আমার মায়ের ২০১৫ সাল থেকে একটু সমস্যা হচ্ছিলো।
‘আমি তখন ৭ম শ্রেণির ছাত্রী। তখন মা বাড়ি থেকে বের হয়ে যেতো, তবে আবারও ফিরে আসতো।’
‘২০১৭ সালে যখন ৮ম শ্রেণি পাশ করি, তখন একদিন মা বাড়ি থেকে বের হয়ে যান। সে বার আর ফিরে আসেন নি।’
‘অনেক খোঁজাখুজি করেও তাঁর সন্ধান আমরা পাই নি।’
‘এদিকে মাকে খুঁজে না পাওয়ায় পরিবারের সম্মতিতে আমার বাবাকে আবার বিয়ে দেওয়া হয়।’
‘পরিবারের সহযোগিতায় আমি এখন ঢাকা সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নার্সিং ১ম বর্ষে পড়াশোনা করছি। আমরা তো মনে করেছিলাম, মা মারা গেছেন। কিন্তু গত রোববার (৬ মার্চ) মোবাইল ফোনে অপরিচিত এক নম্বর থেকে ফোন আসলে পরিচয় দিয়ে বলে আপনার মায়ের নাম রিনা কি-না?’
‘এ কথা শোনামাত্রই আমি তাঁকে ছবি পাঠাতে বললে তিনি ছবি পাঠান।’
‘ছবি দেখে আমি চিনতে পারি যে, তিনিই আমার মা।’
রিনা আক্তারের বোনের মেয়ে শাহানাজ পারভীন বাঙলা কাগজ ও ডনকে বলেন, ‘আমার খালারা ৫ বোন, ২ ভাই। খালা ভাই-বোনদের মধ্যে ৫ নম্বর। ২০১৭ সালে হারিয়ে যাবার পর অনেক খুঁজে না পেলে আমরা আশা ছেড়ে দিয়েছিলাম। এখানকার নয়ন, তারেক, রশিদ এবং ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান যেভাবে সহযোগিতা করেছেন, তা সারাজীবন ভুলবো না।’
‘খালু পেশায় ট্রাকচালক। ট্রাক নিয়ে বান্দরবান থাকায় তিনি আসতে পারেন নি।’
এ ব্যাপারে ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান বজলুর রহমান নঈম বাঙলা কাগজ ও ডনকে বলেন, ‘আমাকে যখন জানানো হয় ব্রিজের ওপর মানসিক ভারসাম্যহীন বৃদ্ধা শুয়ে আছেন, তখন গিয়ে দেখে আসি।’
‘বৃদ্ধার মুখমণ্ডলে ক্ষত সৃষ্টি হওয়ায় চিকিৎসার ব্যবস্হা করেছেন স্হানীয়রা।’
‘পরিবারেরসঙ্গে যোগাযোগ করতে সক্ষম হলে নিয়ামতপুর থানার ওসি হুমায়ুন কবির, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আব্দুল্লাহ আল মামুনকে বিষয়টি অবহিত করা হয়।’
‘তা ছাড়া তাঁদের আসা ও যাওয়ার জন্য সকল ধরনের সহযোগিতা করা হয়েছে।’