নির্বাচন নিয়ে আওয়ামী লীগের কথা শুনলে হাসি পায় : মির্জা ফখরুল

নির্বাচন নিয়ে আওয়ামী লীগের কথা শুনলে হাসি পায় : মির্জা ফখরুল

নিজস্ব প্রতিবেদন, বাঙলার কাগজ : বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী বলেছেন যে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে এই সরকারের অধীনে খুব ভালো নির্বাচন হবে। সবাই অবাধে ভোট দিতে পারবে। এ কথা শুনে হাসি পায়।

শুক্রবার (১৭ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে রাজধানীর রামকৃষ্ণ মিশন রোড থেকে পুরান ঢাকার নয়াবাজার অভিমুখে এক পদযাত্রা কর্মসূচির উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে মির্জা ফখরুল ইসলাম এ কথা বলেন।

গত বুধবার যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের কর্মকর্তা ডেরেক শোলের ঢাকা সফরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার যে বৈঠক হয়, সেই আলোচনায় আগামী নির্বাচন নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর একটি বক্তব্যের উল্লেখ করেন বিএনপির মহাসচিব। তিনি বলেন, ‘শুনলে হাসি পায়। ঘোড়াও হাসবে। ঘোড়া কখন হাসে জানেন তো, যখন ওই ধরনের কথা শুনতে পায়। যে বিদেশিরা আসছেন, সেখানে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন যে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে এই সরকারের অধীনে খুব ভালো নির্বাচন হবে। সবাই অবাধে ভোট দিতে পারবে। ঘোড়াও তো হাসতে শুরু করবে এ কথা শুনে।’

যুক্তরাষ্ট্রে অনুষ্ঠেয় গণতন্ত্র সম্মেলনে এবারও বাংলাদেশের আমন্ত্রণ না পাওয়ার সমালোচনা করেন মির্জা ফখরুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘আজকে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বের ব্যর্থতা এই দেশটাকে একটি অকার্যকর রাষ্ট্রে পরিণত করেছে। কোথাও তারা সফলতা পাচ্ছে না। আজকে দেখুন, গণতান্ত্রিক সম্মেলন হচ্ছে আমেরিকায়। সেখানে বাংলাদেশকে দাওয়াত করে নাই, গতবারও করে নাই।’

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমরা যুদ্ধ করেছিলাম ১৯৭১ সালে একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের জন্য। সেই বাংলাদেশ আজ গণতান্ত্রিক সম্মেলনে দাওয়াত পায় না। আজকে এমন একটা দেশ তৈরি করেছে এরা, কোনো রকমের কোনো মূল্যবোধ নাই। আজকে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে দেখুন, সবখানে ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীরা দখল করছে, ছাত্রছাত্রীদের নির্যাতন করছে, এমনকি ধর্ষণ পর্যন্ত করছে। পত্রিকায় দেখেছেন, বরিশালে আমাদের (বিএনপি) লোকজনের ৭০টি দোকান দখল করে নিয়েছে। এমনকি লিখে নিয়েছে যে দোকানের মালিককে ভাড়া দেওয়া যাবে না।’

এ অবস্থাকে একটা ‘নৈরাজ্য’ বলে মন্তব্য করেন বিএনপির মহাসচিব। তিনি বলেন, ‘যেভাবে খুশি তারা (আওয়ামী লীগ) দেশ চালানোর চেষ্টা করছে। আওয়ামী লীগ কোনো দিন জনগণের ভোটে নির্বাচিত হয়ে আসেনি। সব সময় জনগণকে ভয় দেখিয়ে, একটা ত্রাসের রাজত্ব করে তারা ক্ষমতায় যাওয়ার চেষ্টা করেছে। একবার গেছে ২০১৪ সালে, আরেকবার গেছে ২০১৮ সালে। এখন তারা আবার বলছে, এই সরকারের অধীনে খুব ভালো নির্বাচন হবে।’

সেই নির্বাচনে শুধু বিএনপি নয়, বাংলাদেশের মানুষ যাবে না বলে মন্তব্য করেন মির্জা ফখরুল ইসলাম।

বিএনপির আন্দোলন গ্রামগঞ্জে ছড়িয়ে পড়েছে বলে দাবি করে মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেন, ‘আজকে যে পদযাত্রা করছি, কিছুদিন আগেও তারা বলত, বিএনপি আন্দোলন করতে পারে না। এখন আন্দোলনকে এমন ভয় পায় যে সেটাকে তারা পাহারা দেয়। পাহারা দিয়ে কি আন্দোলন ঠেকানো যায়? যায় না।’

সরকারকে সতর্ক করে দিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘এখনো বলছি, সময় আছে। দেয়ালের লিখন পড়ুন, মানুষের ভাষাগুলো বুঝুন। দেখুন ইউনিয়ন পর্যায়ে বিএনপির নেতৃত্বে কীভাবে মিছিল হয়েছে। হাজার হাজার মানুষ গোটা গ্রামবাংলায় ছড়িয়ে পড়েছে। আজকে সত্যিকার অর্থেই এই সরকারের পদত্যাগের দাবি সারা বাংলাদেশে ছড়িয়ে পড়েছে। তাই এখনো সময় আছে পদত্যাগ করুন। সংসদ বিলুপ্ত করে, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের হাতে ক্ষমতা দিয়ে নতুন নির্বাচনের ব্যবস্থা করুন। অন্যথায় জনগণ আপনাদের সে সুযোগ দেবে না।’

বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘আজকে একটাই কথা, এই মুহূর্তে পদত্যাগ চাই। পদত্যাগ করুন, দেশের মানুষকে বাঁচতে দিন। অন্যথায় দেশের মানুষই তার ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।’

দেশের ২২তম রাষ্ট্রপতি নির্বাচন নিয়েও কথা বলেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘বোধ হয় একজন রাষ্ট্রপতি নির্বাচন করেছে। আমরা জানি কিছু? কেউ কিছু জানে? উনি (রাষ্ট্রপতি) নিজেও জানতেন না। টেলিভিশনে সাক্ষাৎকার দিয়ে বলেছেন, আমি নিজেই জানতাম না। এই রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের ঘটনাই প্রমাণ করে, এই সংবিধান দিয়ে দেশের সমস্যার সমাধান হবে না।’

মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেন, ‘এই জন্যই সংবিধান সংশোধন করতে হবে। আমরা যে ২৭ দফা দিয়েছি, সেই ২৭ দফার মধ্যে সংবিধান সংশোধনের কথা বলেছি। আমরা বলেছি, রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা, প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতা, মন্ত্রীদের ক্ষমতা—এগুলোর ভারসাম্য আনতে হবে। সব মানুষের অংশগ্রহণ থাকে, সেই ধরনের নির্বাচনের ব্যবস্থার জন্য একটা তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থাকে কীভাবে স্থায়ী করা যায়, তার চিন্তা করতে হবে।’

দুর্নীতি, লুটপাট করে আওয়ামী লীগ দেশটাকে শেষ করে দিয়েছে বলে মন্তব্য করেন মির্জা ফখরুল ইসলাম। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ দেশের অনেক ক্ষতি করেছে। এই দেশের যে স্বপ্ন ছিল, যে আশা-আকাঙ্ক্ষা ছিল, সবকিছু ভেঙে ধূলিসাৎ করেছে। তাদের পরিবার, তাদের লোকজনকে ফুলে ফুলে কলাগাছ করে, বিদেশে টাকা পাচার করে এই বাংলাদেশকে শেষ করে দিয়েছে।

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আজকে এমন চুরি করেছে, এখন ব্যাংকে টাকা নাই, ডলার নাই। এলসি খুলতে পারে না, জিনিসপত্র আনতে পারে না। চুরির একটা সীমা আছে। এরা সব সীমা ছাড়িয়ে গেছে। আওয়ামী লীগ হচ্ছে বর্গির দল। তারা যখনই ক্ষমতায় আসে, বাংলাদেশকে লুট করে নিয়ে চলে যায়। তিনি ক্ষমতাসীনদের উদ্দেশে বলেন, ‘খুব বলেন উন্নয়ন উন্নয়ন। উন্নয়ন কোথায়, উন্নয়ন আপনাদের সঙ্গে। সাধারণ মানুষের কোনো উন্নয়ন নাই।’

ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির আহ্বায়ক আবদুস সালামের সভাপতিত্বে পদযাত্রা–পূর্ব সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান, ঢাকা মহানগর দক্ষিণের নেতা ইশরাক হোসেন।

বিকেল চারটায় সমাবেশ শেষে পদযাত্রাটি রামকৃষ্ণ মিশনের পাশে মাজার রোড হয়ে, মধুমিতা সিনেমা হলের পাশ দিয়ে মতিঝিল, রাজধানী সুপার মার্কেট হয়ে পুরান ঢাকার নয়াবাজারে গিয়ে শেষ হয়। পদযাত্রায় হাজার হাজার নেতা-কর্মী ব্যানার-ফেস্টুন নিয়ে অংশ নেন। তাঁরা দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তিসহ সরকারবিরোধী নানা স্লোগান দিয়ে পদযাত্রা করেন।