নাটোর : বিধবা-বয়স্ক ও প্রতিবন্ধি ভাতার কোটি টাকা ভুয়া বিকাশ অ্যাকাউন্টে গায়েব!

নাটোর : বিধবা-বয়স্ক ও প্রতিবন্ধি ভাতার কোটি টাকা ভুয়া বিকাশ অ্যাকাউন্টে গায়েব!
ডন প্রতিবেদক, নাটোর : নাটোরে দুই হাজার ৯ জন বিধবা, বয়স্ক ও প্রতিবন্ধির মাসিক ভাতার প্রায় কোটি টাকা ভুয়া বিকাশ অ্যাকাউন্টে পাঠানোর ফলে গায়েব হয়ে গেছে। এটা ভুল, না কি সংঘবদ্ধ চক্রের অর্থ হাতানোর কৌশল, তার সঠিক ব্যাখা নেই সংশ্লিষ্ট দপ্তরের কাছে। সমাজসেবা কার্যালয়ের স্থানীয় কর্মকর্তা ও দায়িত্বপ্রাপ্ত বিকাশ এজেন্ট এ ঘটনার জন্য একে অপরকে দুষছেন। বঞ্চিত এসব অসহায় প্রতিবন্ধি, বিধবা ও বয়স্ক নারি-পুরুষ বেঁচে থাকার অবলম্বন ভাতার টাকার জন্য নিয়মিত স্থানীয় সমাজসেবা কার্যালয়ে ছুটে আসছেন। টাকা পাওয়ার বিষয়ে সমাধান দিতে জেলা সমাজসেবা কার্যালয় থেকে সদর দপ্তরে বঞ্চিত দুই হাজার ৯ জনের তালিকা পাঠানো হয়েছে। দুই হাজার ৯ জনের এক অর্থবছরের ভাতার পরিমাণ ১ কোটি ৩৪ লাখ ৪৯ হাজার টাকা। কিন্তু নাটোর জেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের সহকারি পরিচালক শাহাদৎ হোসেন বলছেন, তাঁরা সবাই গত অর্থবছরের প্রথম তিন মাসের টাকা ব্যাংকের মাধ্যমে পেয়েছে। মোবাইলে টাকা পাঠানো শুরু করার পর কেউ ৯ মাসের কেউ ৬ মাসের টাকা পান নি। নাটোর জেলা সমাজসেবা কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, নাটোর জেলার দুই হাজার ৯ জন বঞ্চিতেরমধ্যে লালপুর উপজেলার ৮০১ জন, নলডাঙ্গার ৫৬৩ জন, নাটোর শহরের ১৯০ জন, সদরের ১৪০ জন, বাগাতিপাড়ার ১৭৭ জন, গুরুদাসপুরের ৮০ জন এবং বড়াইগ্রামের ৫৮ জন। বঞ্চিত দুই হাজার ৯ জনের মধ্যে ১ হাজার ১৭৬ জন বয়স্ক; ৩৬৮ জন বিধবা এবং ৪৬৫ জন প্রতিবন্ধি ভাতাভোগি। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নাটোর শহরের কান্দিভিটুয়া মহল্লার মৃত দুখু মিয়ার স্ত্রী রত্না বেওয়ার (৭৯)। সরকারের দেওয়া টিনের ঘরে তাঁর একার বসবাস। বর্তমানে সংসার চালাতে খরচ যোগানোর তাঁর কোনও পথ নেই। তিনি বলেন, ব্যাংকে নিয়মিত বয়স্ক ভাতার টাকা পেতাম। মোবাইল অ্যাকাউন্ট খোলার পর থেকে আর টাকা পাই না। বারবার সমাজসেবা অফিসে গিয়েও কোনও সমাধান পাই নি। কেউ দায়িত্ব নেয় না। একে অপরকে দোষেন। দোষ যারই হোক, আমার মতো অনেকেরই এই টাকাই চলার পথে একমাত্র আয়। সেটা বন্ধ হওয়ায় আমরা বিপদে আছি। শহর সমাজসেবা অফিসের এক কর্মকর্তা বলেন, ‘ব্যাংক বাদ দিয়ে যখন মোবাইলে টাকা পাঠানোর সিন্ধান্ত হয়, তখন এতো কম সময় দেওয়া হয়েছে যে আমরা সারারাত অফিস করেছি। রাত দুইটার সময়ও ফোনে বিকাশ নম্বর নিয়েছি। যে যেভাবে পারে বিকাশ নম্বর সংগ্রহ করে দিয়েছে। বেশি তাড়াহুড়ো করতে গিয়েই হয়তো এমনটা ঘটেছে। যারা বিকাশ অ্যাকাউন্ট খুলে দিয়েছে, তারা কোনও দায়িত্বশিলতার পরিচয় দেয় নি। আমরা যে নম্বর পেয়েছি, সেটাই (সেটাতেই) পাঠিয়েছি। এখন কোনও নম্বর ভুল, কোনোটা বন্ধ, আবার কোনোটার হদিসই পাওয়া যাচ্ছে না।’ এ ব্যাপারে নাটোর জেলার বিকাশ এজেন্ট মিজানুর রহমান দায় অস্বিকার করে বলেন, সমাজসেবা কার্যালয় তাদের যে নম্বর দিয়েছে, তারা সেই বিকাশ অ্যাকাউন্টগুলোই খুলে দিয়েছেন মাত্র। ‘সম্পূর্ণ নম্বর ভুল অথবা ডিজিট ভুলের দায় স্থানীয় সমাজসেবা কার্যালয়ের লোকজনের। এখানে তাদের কোনও ভুল নেই।’ নাটোরের জেলা প্রশাসক শামীম আহমেদ বলেন, কোনও পক্ষ দায় না নিলে তো চলবে না। নাটোরের দুই হাজার ৯ জন অসহায় ভাতাভোগি যে ক্ষতির শিকার হয়েছেন, তা পূরণের ব্যবস্থা করতে হবে। নইলে কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না। সমাজসেবা অধিদপ্তরের বিধবা ও স্বামি নিগৃহিতা মহিলা ভাতা প্রকল্পের উপ-পরিচালক দেবব্রত দাস বলেন, যেসব ভুয়া মোবাইল অ্যাকাউন্টে টাকা চলে গেছে, সেগুলো শনাক্ত করার জন্য আমরা ইতোমধ্যে বিটিসিএল এরসাথে (এরসঙ্গে) যোগাযোগ করেছি। তাদের পরিচয় নিশ্চিত হওয়ার পর এসব প্রতারকদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। সেইসাথে (সেইসঙ্গে) আগামিদিনে আর যেনো কেউ এভাবে টাকা হাতিয়ে নিতে না পারে, তা নিশ্চিত করা হবে।