ধামাকার বকেয়া প্রায় ৪০০ কোটি টাকা, ব্যাংকে আছে ১ লাখেরও কম

ধামাকার বকেয়া প্রায় ৪০০ কোটি টাকা, ব্যাংকে আছে ১ লাখেরও কম
ডন প্রতিবেদন : ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান ধামাকা শপিং ডটকমে ৭৫০ কোটি টাকার লেনদেন হয়েছে। প্রায় ৪০০ কোটি বকেয়া থাকা সত্ত্বেও এর ব্যাংক অ্যাকাউন্টে ১ লাখেরও কম টাকা জমা আছে। আজ বুধবার (২৯ সেপ্টেম্বর) র‌্যাবের মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র‌্যাব) আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন এ তথ্য জানান। প্রতারণা ও অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে ‘ধামাকা শপিং ডটকম’ এর সিওও সিরাজুল ইসলাম রানাসহ তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে র‍্যাব। মঙ্গলবার (২৮ সেপ্টেম্বর) রাতে র‌্যাব সদর দপ্তরের গোয়েন্দা শাখা ও র‌্যাব-২ এর অভিযানে রাজধানীর তেজগাঁও এলাকা থেকে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাঁরা হলেন- সিরাজুল ইসলাম রানা, মো. ইমতিয়াজ হাসান সবুজ ও ইব্রাহিম স্বপন (৩৩)। গ্রেপ্তারকৃদের বরাত দিয়ে র‍্যাব জানায়, ‘ধামাকা শপিং ডটকম’ এর কোনও প্রকার অনুমোদন ও লাইসেন্স নাই; ব্যবসায়িক অ্যাকাউন্ট নাই। ব্যবসা পরিচালনায় ইনভেরিয়েন্ট টেলিকম বাংলাদেশ লিমিটেড নামক প্রতিষ্ঠানের অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে ব্যবসায়িক লেনদেন করা হয়েছে। এ পর্যন্ত ওই অ্যাকাউন্টে প্রায় ৭৫০ কোটি টাকা লেনদেন হয়েছে। বিপুল পরিমাণ অর্থ লেনদেন হওয়া সত্ত্বেও বর্তমানে ওই অ্যাকাউন্টে মাত্র যৎসামান্য টাকা জমা রয়েছে। বর্তমানে সেলার বকেয়া রয়েছে প্রায় ১৮০-১৯০ কোটি টাকা, কাস্টমার বকেয়া ১৫০ কোটি টাকা এবং কাস্টমার রিফান্ড চেক বকেয়া ৩৫ থেকে ৪০ কোটি টাকা। র‍্যাব আরও জানায়, আর্থিক সংকটের কারণে গত কয়েক মাস যাবৎ প্রতিষ্ঠানের অফিস এবং ডেপো ভাড়া বকেয়া রয়েছে। পাশাপাশি জুন ২০২১ থেকে কর্মচারীদের বেতন বকেয়া রয়েছে। গত এপ্রিল থেকে ধামাকার অর্থ অন্য জায়গায় সরিয়ে ফেলার কারণে গত জুলাই মাস থেকে সব কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের বরাত দিয়ে খন্দকার আল মঈন জানান, গ্রেপ্তারকৃত সিরাজুল ইসলাম রানা ধামাকা শপিং ডটকমের সিওও, ইমতিয়াজ হাসান সবুজ, ক্যাটাগরি হেড মোবাইল ফ্যাশন ও লাইফ স্টাইল এবং ইব্রাহীম স্বপন, ক্যাটাগরি হেড, ইলেক্ট্রনিক্স হিসেবে নিযুক্ত রয়েছেন। জানা গেছে, ২০১৮ সালে ‘ধামাকা ডিজিটাল’ পরবর্তী সময়ে ২০২০ থেকে ‘ধামাকা শপিং ডটকম’ নামে কার্যক্রম শুরু করে। গ্রেপ্তারকৃতরা ২০২০ থেকে বর্ণিত প্রতিষ্ঠানেরসঙ্গে যুক্ত রয়েছেন। অক্টোবর ২০২০ থেকে প্রতিষ্ঠানটি নেতিবাচক এগ্রেসিভ স্ট্রাটিজি নিয়ে মাঠে নামে। গ্রেপ্তারকৃতরা জানায়, ধামাকা শপিং ডটকম ছাড়াও তাঁদের আরও কয়েকটি ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান রয়েছে, যেমন- ইনভেরিয়েন্ট টেলিকম বাংলাদেশ লিমিটেড, মাইক্রোট্রেড ফুড এবং বেভারেজ লিমিটেড এবং মাইক্রোট্রেড আইসিক্স লিমিটেড ইত্যাদি। মূলত প্রতিষ্ঠানটির মূল উদ্দেশ্য তৈরিকারক ও গ্রাহক চেইন বা নেটওয়ার্ক থেকে বিপুল অর্থ হাতিয়ে নেওয়া। এ ছাড়া ‘হোল্ড মানি প্রসেস প্ল্যান’ অর্থ্যাৎ গ্রাহক ও সরবরাহকারীর টাকা আটকিয়ে রেখে অর্থ সরিয়ে ফেলা ছিলো অন্যতম উদ্দেশ। বিশাল অফার, ছাড়ের ছড়াছড়ি আর নানাবিধ অফার দিয়ে সাধারণ জনগণকে প্রলুব্ধ করা হতো এভাবে যাতে দ্রততম সময়ে ক্রেতা বৃদ্ধি সম্ভবপর হয়। জিজ্ঞাসাবাদের বরাত দিয়ে র‍্যাব জানায়, ধামাকা শপিং ডটকম গ্রাহক সংখ্যা প্রায় ৩ লাখের বেশি। মোবাইল, টিভি, ফ্রিজ, মোটরবাইক, গৃহস্থালী পণ্য ও ফার্নিচার ইত্যাদি বিভিন্ন অফারে বিক্রি করা হতো। ধামাকা শপিং ডটকম এর বিভিন্ন লোভনীয় অফারগুলো হলো- সিগনেচার কার্ড ২০%-৩০%, ধামাকা নাইট এ ৫০% পর্যন্ত, রেগুলার এ ২০%-৩০% ছাড় প্রদান করা ইত্যাদি। সিগনেচার কার্ড অফারটি গত মার্চ-এপ্রিল পর্যন্ত পরিচালনা করা হয়। মাত্র ২০% পণ্য সরবরাহ করে অর্থ সরিয়ে গ্রাহকদের চেক প্রদান করা হয়। অতঃপর ধিরে ধিরে সকল অর্থ সরিয়ে ফেলা হয়েছে। ধামাকা শপিং ডটকম ব্যবসায়িক কর্মকাণ্ডে মূলত তারা ইনভেনটরি জিরো মডেল এবং হোল্ড মানি প্রসেস প্ল্যান ফলো করতো। কয়েকটি দেশি-বিদেশি ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের লোভনীয় অফারের আলোকে ‘ধামাকা শপিং ডটকম’ ব্যবসায়িক স্ট্র্যাটিজি তৈরি করা হয়েছে। প্রতিষ্ঠানটির কোনও ইনভেস্টমেন্ট ছিলো না বলে গ্রেপ্তারকৃতরা জানায়। গ্রেপ্তারকৃতরা ধামাকা শপিং ডটকমের ব্যবসায়িক কারসাজি সম্পর্কে সম্পূর্ণভাবে অবগত থেকে বিভিন্ন প্রতারণামূলক কার্যক্রমে সম্পৃক্ত থেকেছেন। এ ছাড়া তারা বিভিন্ন অপকৌশল প্রণয়নে প্রতিষ্ঠানকে পরামর্শ, সুপারিশসহ বিভিন্নভাবে সহায়তা প্রদান করেছিলো বলেও জানিয়েছে র‍্যাব।