তালেবানের বিরুদ্ধে হাজারা জনগোষ্ঠীর ১৩ সদস্যকে হত্যার অভিযোগ অ্যামনেস্টির

তালেবানের বিরুদ্ধে হাজারা জনগোষ্ঠীর ১৩ সদস্যকে হত্যার অভিযোগ অ্যামনেস্টির
ডন প্রতিবেদন : আফগানিস্তানের ক্ষমতা দখলে নেওয়া তালেবান দেশটির হাজারা জনগোষ্ঠীর ১৩ সদস্যকে হত্যা করেছে বলে অভিযোগ করেছে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল। সংগঠনটি বলছে, তাঁরা আগস্টে দেকুন্দি প্রদেশে হওয়া এ হত্যাযজ্ঞের প্রমাণও পেয়েছে। নিহতদের মধ্যে আগের সরকারের ৯ সৈন্য তালেবান বাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ করলেও তালেবান যোদ্ধারা তাঁদের হত্যা করে; এই হত্যাকাণ্ড যুদ্ধাপরাধ হিসেবে বিবেচিত হতে পারে, বলছে অ্যামনেস্টি। তালেবান এ অভিযোগ অস্বীকার করে বিবিসিকে বলেছে, অ্যামনেস্টির প্রতিবেদন ঘটনার কেবল ‘একটি দিক’ দেখাচ্ছে। হাজারা আফগানিস্তানের তৃতীয় বৃহত্তম জনগোষ্ঠী। তারা মূলত শিয়া মুসলিম। সুন্নি সংখ্যাগুরু আফগানিস্তান এবং পাকিস্তানে তারা দীর্ঘদিন ধরেই বৈষম্য ও নিপীড়নের শিকার। আগস্টে আফগানিস্তানের ক্ষমতা দখলের পর এ নিয়ে দ্বিতীয়বার তালেবান যোদ্ধাদের বিরুদ্ধে হাজারা জনগোষ্ঠীর সদস্যদের হত্যার অভিযোগ উঠলো। দেকুন্দি প্রদেশে যে ১৩ জনকে হত্যা করা হয়েছে, তাঁদেরমধ্যে ১৭ বছর বয়সি এক কিশোরীসহ দুই নিরীহ বেসামরিকও আছে। তালেবান যোদ্ধারা আগের সরকারের সৈন্যদের পরিবারের সদস্যদের লক্ষ্য করে গুলি চালালে ওই কিশোরী গুলিবিদ্ধ হয় বলে জানিয়েছে অ্যামনেস্টি। মঙ্গলবার (৫ অক্টোবর) তাঁরা এ সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। ‘তাদের আগের শাসনামলে চালানো ভয়াবহ যেসব নির্যাতনের জন্য তালেবান কুখ্যাত ছিলো, তারা যে এবারও সেগুলোই করছে, ঠাণ্ডা মাথার এসব খুন তার প্রমাণ,’ বলেছেন অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের মহাসচিব অ্যাগনেস ক্যালামার্ড। ‘তালেবান বলছে, তারা আগের সরকারের কর্মীদের টার্গেট করছে না, কিন্তু এসব হত্যাকাণ্ড তাদের দাবির বিপরীত,’ বলেছেন তিনি। আগস্টে প্রকাশিত আরেক প্রতিবেদনে অ্যামনেস্টি তালেবানের বিরুদ্ধে জুলাইয়ে গজনি প্রদেশে হাজারা জনগোষ্ঠীর ৯ সদস্যকে হত্যার অভিযোগ এনেছিলো। দেকুন্দি প্রদেশের ঘটনা নিয়ে তালেবান স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র কারী সৈয়দ খোস্তি বলেন, ‘অ্যামনেস্টির প্রতিবেদন একপাক্ষিক। আমরা সব আন্তর্জাতিক সংস্থাকে আফগানিস্তানে এসে এ বিষয়ে একটি যথাযথ তদন্ত করার আহ্বান জানাচ্ছি।’ অ্যামনেস্টির প্রতিবেদন অনুযায়ি, গত ৩০ আগস্ট প্রায় ৩০০ তালেবান যোদ্ধা দাহানি কাল গ্রামের কাছে একটি এলাকায় যায়, যেখানে আগের সরকারের নিরাপত্তা বাহিনীর কিছু সদস্য তাদের পরিবার নিয়ে থাকছিলেন। তালেবান যোদ্ধাদের আসার খবর পেয়ে আগের সরকারের নিরাপত্তা বাহিনীর ওই সদস্যরা পরিবার-পরিজন নিয়ে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলেও ধরা পড়ে যান। তালেবান যোদ্ধারা তাদের লক্ষ্য করে গুলিও ছুড়ে। সাবেক এক সৈন্য পাল্টা গুলি ছুড়লে এক তালেবান যোদ্ধা নিহত ও আরেকজন আহত হয়। গোলাগুলির মধ্যে পড়ে আগের সরকারের নিরাপত্তা বাহিনীর দুই সদস্য প্রাণ হারান। এরপর আগের সরকারের নিরাপত্তা বাহিনীর ৯ সদস্য আত্মসমর্পণ করলেও তালেবান যোদ্ধারা তাৎক্ষণিকভাবে তাদেরকে নদীর কাছে একটি জায়গায় নিয়ে যায় ও মেরে ফেলে, বলা হয়েছে অ্যামনেস্টির প্রতিবেদনে।