দুই সন্তান থাকবে বাবার কাছে : জাপানি মা পাবেন বছরে ৩০ দিন

ডন প্রতিবেদন : দুই সন্তানকে নিয়ে যাওয়ার অনুমতি পেলেন না জাপানি মা। হাইকোর্ট সিদ্ধান্ত নিয়েছে, সন্তানরা থাকবে বাবার কাছে। তবে তাঁদের মা বছরে তিন মাস বাংলাদেশে এসে ১০ দিন করে তাঁদেরকে নিজের কাছে রাখতে পারবেন। বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের হাইকোর্ট বেঞ্চ রবিবার (২১ নভেম্বর) এই আদেশ দেন। আদেশটি ব্যাখ্যা করে আদালত বলেছে, যেহেতু মা জাপানি নাগরিক, সেখানে তার বসবাস ও কর্মস্থল সে কারণে তিনি তার সুবিধামত সময়ে বাংলাদেশে এসে শিশুদের সঙ্গে প্রতিবার কমপক্ষে ১০ দিন একান্তে সময় কাটাতে পারবেন। এক্ষেত্রে বছরে তিন বার বাংলাদেশে তার যাওয়া আসাসহ ১০ দিন অবস্থানের যাবতীয় খরচ শিশু দুটির বাবাকে বহন করত হবে। আদালত আদেশে আরও বলা হয়, অতিরিক্ত সময়ে যাওয়া-আসা বা বাংলাদেশে অবস্থানের খরচ মা বহন করবেন। এ ছাড়া, বাবা মাসে কমপক্ষে দুবার ছুটির দিন শিশু সন্তানদেরকে ভিডিও কলে মায়ের সঙ্গে কথা বলার ব্যবস্থা নিশ্চিত করবেন। গত কয়েক মাসে বাংলাদেশে অবস্থান ও যাতায়াত বাবদ মাকে ১০ লাখ টাকা দিতে বাবাকে নির্দেশ দিয়েছে আদালত। আগামী সাত দিনের মধ্যে এই টাকা পরিশোধ করতে বলা হয়েছে। আদেশে বলেছে, রিটটি চূড়ান্ত নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত যেকোনো পক্ষ কর্তৃক আদালতের আদেশ প্রতিপালিত না হলে বা অন্যকোনো আদেশের প্রয়োজনে তারা আদালতে আসতে পারবেন। আরও বলা হয়েছে, সংশ্লিষ্ট সমাজ সেবা কর্মকর্তা শিশুদের দেখভাল অব্যাহত রাখবেন। প্রতি তিন মাস পর পর শিশুদের বিষয়ে হাইকোর্টের রেজিস্ট্রার বরাবর প্রতিবেদন দেবেন। পাশাপাশি জাপানে থাকা ছোট সন্তানকে বাংলাদেশে ফেরত চেয়ে বাবা ইমরান শরীফের করা আবেদন সরাসরি খারিজ করে দিয়েছে আদালত। বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত সাবেক স্বামী শরীফ ইমরানের কাছ থেকে নিজের দুই সন্তানকে ফিরে পেতে জাপানি নাগরিক চিকিৎসক নাকানো এরিকো হাইকোর্টে রিট করেন। ওই রিটের শুনানি শেষে দুই সন্তানকে ৩১ আগস্ট হাজির করতে নির্দেশ দিয়েছিল হাইকোর্ট। পাশাপাশি জাপানি আইন ভঙ্গ করে সন্তান নিয়ে আসা কেন বেআইনি ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করে আদালত। ওই রিটের দীর্ঘ শুনানি শেষে রায় ঘোষণা করা হলো। ২০০৮ সালের ১১ জুলাই জাপানের এরিকো ও বাংলাদেশি আমেরিকান শরীফ ইমরান জাপানি আইন অনুযায়ী বিয়ে করেন। বিয়ের পর তারা টোকিওতে বাসবাস শুরু করেন। তাদের ১২ বছরের সংসারে তিন মেয়ে সন্তানের জন্ম দেন এরিকো। তারা হলো জেসমিন মালিকা, লাইলা লিনা ও সানিয়া হেনা। এরিকো পেশায় একজন চিকিৎসক। মালিকা, লিনা ও হেনা টোকিওর চফো সিটিতে আমেরিকান স্কুল ইন জাপানের (এএসআইজে) শিক্ষার্থী ছিলো। চলতি বছরের ১৮ জানুয়ারি শরীফ ইমরান বিবাহবিচ্ছেদের (ডিভোর্স) আবেদন করেন। ২১ জানুয়ারি ইমরান এএসআইজে স্কুল কর্তৃপক্ষের কাছে তার মেয়ে জেসমিন মালিকাকে নিয়ে যাওয়ার আবেদন করেন। স্কুল কর্তৃপক্ষ এরিকোর সম্মতি না থাকায় তার প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে। পরে ইমরান তার মেয়ে জেসমিন ও লিনাকে স্কুলবাসে বাড়ি ফেরার পথে বাসস্টপ থেকে অন্য একটি ভাড়া বাসায় নিয়ে যান। ২৫ জানুয়ারি ইমরান তার আইনজীবীর মাধ্যমে এরিকোর কাছে তার সন্তানদের পাসপোর্ট হস্তান্তরের আবেদন করেন। এরিকো তা প্রত্যাখ্যান করেন। এরপর ২৮ জানুয়ারি এরিকো টোকিওর পারিবারিক আদালতে তার সন্তানদের জিম্মার অন্তর্বর্তীকালীন আদেশ চেয়ে মামলা করেন। আদালত ৭, ১১ ও ১৪ ফেব্রুয়ারি শিশুদের সঙ্গে পারিবারিকভাবে সাক্ষাতের আদেশ দেয়। ইমরান আদালতের আদেশ ভঙ্গ করে মাত্র একবার মায়েরসঙ্গে দুই মেয়ের সাক্ষাতের সুযোগ দেন। এরিকোর অভিযোগ, গত ৯ ফেব্রুয়ারি মিথ্যা তথ্যের ভিত্তিতে ইমরান তাঁর মেয়েদের জন্য নতুন পাসপোর্টের আবেদন করেন এবং গত ১৭ ফেব্রুয়ারি নতুন পাসপোর্ট নেন। গত ২১ ফেব্রুয়ারি ইমরান তার দুই মেয়ে জেসমিন ও লাইলাকে নিয়ে দুবাই হয়ে বাংলাদেশে চলে আসেন।