ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে যুবককে পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় চার শিক্ষার্থী আটক

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে যুবককে পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় চার শিক্ষার্থী আটক

নিজস্ব প্রতিবেদন, বাঙলার কাগজ : ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফজলুল হক মুসলিম (এফএইচ) হলে তোফাজ্জল হোসেন নামের এক যুবককে পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় চার শিক্ষার্থীকে আটক করেছে পুলিশ। বৃহস্পতিবার (১৯ সেপ্টেম্বর) বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সহযোগিতায় তাঁদের আটক করে শাহবাগ থানা পুলিশ।

আটক শিক্ষার্থীরা হলেন : পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী জালাল মিয়া; মৃত্তিকা, পানি ও পরিবেশ বিভাগের শিক্ষার্থী মোহাম্মদ সুমন; পুষ্টি ও খাদ্য বিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থী মোত্তাকিন সাকিন এবং সাজ্জাদ নামের এক শিক্ষার্থী। তাঁরা সবাই এফএইচ হলের আবাসিক ছাত্র। তাঁদের মধ্যে জালাল মিয়া হল শাখা ছাত্রলীগের সাবেক বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিষয়ক উপসম্পাদক। কোটা সংস্কার আন্দোলনের চলাকালে তিনি ছাত্রলীগ থেকে পদত্যাগে করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কর্মসূচিতে সক্রিয় ছিলেন। অপর তিনজনের রাজনৈতিক পরিচয় জানা যায় নি।

বিকেল সোয়া চারটার দিকে এফএইচ হল থেকে চার শিক্ষার্থীকে থানায় নিয়ে যায় পুলিশ। তাঁরা এখন শাহবাগ থানায় আছেন। এ বিষয়ে জানতে চাইলে শাহবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এ কে এম সাহাবুদ্দিন শাহীন সন্ধ্যায় বলেন, এ বিষয়ে ঢাকা মহানগর পুলিশের উপকমিশনার (গণমাধ্যম) সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলবেন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর সাইফুদ্দিন আহমেদ সন্ধ্যার পর বলেন, ওই যুবককে পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় চার শিক্ষার্থীকে পুলিশের কাছে সোপর্দ করা হয়েছে। এ ঘটনায় হল প্রশাসন গঠিত তদন্ত কমিটি কাজ করছে। শুক্রবার সকালে কমিটি তদন্ত প্রতিবেদন দেবে। তার ভিত্তিতে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

তোফাজ্জল নামের ওই যুবক রাত ৮টার দিকে বঙ্গবাজার এলাকার পার্শ্ববর্তী এফএইচ হলের ফটক দিয়ে মাঠের ভেতরে যান। তখন কয়েকজন শিক্ষার্থী চোর সন্দেহে তাঁকে আটক করে হলের অতিথি কক্ষে নিয়ে যান। সেখানে জিজ্ঞাসাবাদের একপর্যায়ে তাঁকে মারধর করা হয়। পরে তাঁকে হলের ক্যানটিনে নিয়ে রাতের খাবার খাওয়ানো হয়। এরপর আবার তাঁকে হলের অতিথি কক্ষে এনে ব্যাপকভাবে মারধর করেন কয়েকজন শিক্ষার্থী। প্রত্যক্ষদর্শীদের ভাষ্য মতে, এ সময় ওই যুবককে স্ট্যাম্প দিয়ে মারধর করা হয়েছিলো। তাঁরা জানান, বুধবার দুপুরে হল থেকে কয়েকজন ছাত্রের মোবাইল ও মানি ব্যাগ চুরি হয়েছিলো। সেই ঘটনায় তোফাজ্জলকে সন্দেহ করে এভাবে মারধর করা হয়।

পরে গভীর রাত ১২টার দিকে কয়েকজন শিক্ষার্থী তোফাজ্জলকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন।

চোর সন্দেহে ওই যুবককে এফএইচ হলের ভেতরে ধরে আনার বিষয়টি নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়কেন্দ্রিক একটি ফেসবুক গ্রুপে পোস্ট দিয়েছিলেন এক শিক্ষার্থী। মধ্যরাতে শিক্ষার্থীদের পিটুনিতে ওই ব্যক্তির মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়লে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। বিশ্ববিদ্যালয়কেন্দ্রিক ফেসবুক গ্রুপ ও নিজেদের ব্যক্তিগত প্রোফাইলে দেওয়া বিভিন্ন পোস্টে শিক্ষার্থীদের অনেকেই বিচারবহির্ভূত এই হত্যাকাণ্ডের বিচার ও দোষী ব্যক্তিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেন। হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে কিছু শিক্ষার্থী ভোরে টিএসসি এলাকায় বিক্ষোভও করেন।

এরপর দুপুরে যুবককে পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় শাহবাগ থানায় মামলা করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। তার পরপরই এফএইচ হল থেকে চার শিক্ষার্থীকে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সহযোগিতায় তুলে নিয়ে যায় পুলিশ।