ঢাকায় কেরুর বাজারে মধ্যস্বত্বভোগী! : মুনাফায় ধস নামার শঙ্কা

ঢাকায় কেরুর বাজারে মধ্যস্বত্বভোগী! : মুনাফায় ধস নামার শঙ্কা

নিজস্ব প্রতিবেদন, বাঙলার কাগজ ও ডন : বাংলাদেশে একমাত্র লাইসেন্সধারী অ্যালকোহল উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান কেরু অ্যান্ড কোম্পানি (বাংলাদেশ) লিমিটেড। রাষ্ট্রায়ত্ত এ প্রতিষ্ঠান সদ্য শেষ হওয়া অর্থবছরে মদ বিক্রির মাধ্যমে অতীতের রেকর্ড ভেঙ্গে মুনাফা করেছে। অথচ চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরে এর ধারাবাহিকতা রক্ষা হবে কি-না, তা নিয়েই দেখা দিয়েছে বড় সংশয়। কারণ বাংলাদেশে মদ বিক্রির সবচেয়ে বড় বাজার রাজধানীতেই মধ্যস্বত্বভোগীদের কবলে পড়েছে কেরুর বাজার। এতে ২০-২২ দিন আগেও যেখানে খুচরায় ১ লিটার (৭৫০ মিলিলিটার) মদ বিক্রি হতো ২২ শ টাকা থেকে সর্বোচ্চ ২৪ শ কিংবা ২৫ শ টাকায়; সেখানে গত কয়েকদিন ধরে রাজধানীর প্রায় সবগুলো বারেই ১ লিটার মদে রাখা হচ্ছে ৩৫ শ, ৩৬ শ এমনকি ৪ হাজার টাকা পর্যন্ত। এ অবস্থায় প্রাপ্ত বয়স্ক ক্রেতারা মদের বাজারে সিন্ডিকেট তথা মধ্যস্বত্বভোগীদেরই দায়ী করেছেন। তাঁরা বলছেন, এ অবস্থা চলতে থাকলে মানুষ বিদেশি মদ ক্রয় করবে। আবার অনেকে মদ ক্রয় অর্ধেকে নামিয়ে আনবেন। ফলে কেরুর লাভে ধস নামবে।

জানা গেছে, রাজধানীর বারগুলোতে সিন্ডিকেটের মাধ্যমে গত কয়েকদিন ধরে কেরু ব্র্যান্ডের মদ বিক্রি হচ্ছে। এক্ষেত্রে ছাড় পাচ্ছে না হাফ লিটারের (৩৫০ মিলিলিটার) বোতলও। এ অবস্থায় বাড়তি টাকা রাখা হচ্ছে এসব বোতলেও। অথচ কেরুর পরিসংখ্যান বলছে, গত কয়েকদিনে মদের উৎপাদন ঢের বেড়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেলো, কেরু অ্যান্ড কোং থেকে মদ কম না দিলেও রাজধানীতে মদের সঙ্কট দেখিয়ে গত কয়েকদিন ধরে বাড়তি টাকা নেওয়া হচ্ছে। যা কেরু কর্তৃপক্ষ জানে না বলেই জানা গেলো।

এ ব্যাপারে কেরু অ্যান্ড কোং এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোসারুফ হোসেন বাঙলার কাগজ ও ডনকে বলেন, গত কয়েকদিনে আমাদের উৎপাদন বেশ বেড়েছে। মদের কোনও সঙ্কট কোনোভাবেই নেই। যাঁরা মদের সঙ্কট সৃষ্টি করে দাম বাড়ায়, তাঁরা অন্যায় করছেন। তাঁদের ব্যাপারে যাতে সঠিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়, সেজন্য অবশ্যই উদ্যোগ নেওয়া হবে। 

খোঁজ নিয়ে জানা গেলো, নিয়ন্ত্রণের কারণে বিদেশি মদ আমদানি কমে যাওয়ায় মদ বিক্রি ও মুনাফায় রেকর্ড গড়েছে দেশের একমাত্র লাইসেন্সধারী অ্যালকোহল উৎপাদনকারী কেরু অ্যান্ড কোম্পানি। কোম্পানির ইতিহাসে প্রথমবারের মতো মোট বিক্রি ৪ শ কোটি টাকা ছাড়িয়েছে।

সদ্য শেষ হওয়া ২০২১-২২ অর্থবছরে কেরু অ্যান্ড কোং আগের বছরের চেয়ে প্রায় ১০ লাখ প্রুফ লিটার বেশি মদ বিক্রি করেছে।

শুল্ক ফাঁকি রোধে গত বছর মদ আমদানিতে নজরদারি বাড়ায় জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। ফলে বৈধপথে মদ আমদানি হ্রাস পায়। এতে করে অনুমোদিত বারগুলোতে বিদেশি মদের সঙ্কট দেখা দেয়।

এরপর থেকেই দেশে উৎপাদিত মদের চাহিদা বৃদ্ধি পায়। বর্ধিত চাহিদা পূরণে কেরু অ্যান্ড কোং উৎপাদন বাড়িয়েছে। ফলে কোম্পানিটির উৎপাদিত মদ বিক্রি বৃদ্ধির সঙ্গে বাড়ছে মুনাফার পরিমাণও।

কোম্পানি সূত্র জানিয়েছে, শুধু ডিস্টিলারি ইউনিট বা মদ উৎপাদন থেকে তাঁদের আয় ৩৬৭ কোটি টাকা, যা এ যাবৎকালে সর্বোচ্চ।

বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য শিল্প করপোরেশনের তত্ত্বাবধানে থাকা কেরু অ্যান্ড কোং তাঁদের ডিস্টিলারি ইউনিট থেকে ১ শ কোটি টাকারও বেশি মুনাফা করেছে, এটিও এবারই প্রথম। আগের বছর যা ছিলো ৯০ কোটি টাকারও কম।

অন্যদিকে, কেরুর চিনি ইউনিটকে বড় লোকসান গুনতে হয়েছে। তবে চিনি উৎপাদনের লোকসান সমন্বয়ের পরও ২০২১-২২ অর্থবছরে কোম্পানির নিট মুনাফা বেড়ে দাঁড়াবে প্রায় ৭০ কোটি টাকা। যা বিগত ২০২০-২১ অর্থবছরে ছিলো ১৪ কোটি ৬৩ লাখ টাকা।

এ ব্যাপারে কেরু অ্যান্ড কোং এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোসারুফ হোসেন বাঙলার কাগজ ও ডনকে বলেন, ‘আগের বছরের চেয়ে এবার ২৫ থেকে ৩০ শতাংশ বিক্রি বেড়েছে।’

তিনি বলেন, ‘সাম্প্রতিক সময়ে বর্ধিত চাহিদা পূরণে কোম্পানির বিদ্যমান ক্যাপাসিটির ব্যবহার বেড়েছে, তারপরও একটি বড় অংশ এখনও অব্যহৃত রয়েছে। চাহিদা যদি আরও বাড়ে, বিদ্যমান ফ্যাক্টরিতে বাড়তি চাহিদা পূরণে মদ উৎপাদন সম্ভব হবে।’

১৯৩৮ সালে চুয়াডাঙ্গায় প্রতিষ্ঠিত হয় কেরু অ্যান্ড কোং। বর্তমানে এর ছয়টি ইউনিট রয়েছে। যেগুলো হলো : চিনি, ডিস্টিলারি (মদ), ফার্মাসিউটিক্যালস, বাণিজ্যিক খামার, আকন্দবাড়িয়া খামার (পরীক্ষামূলক) এবং জৈব সার। 

এর মধ্যে শুধু ডিস্টিলারি এবং জৈব সার ইউনিটই লাভজনক।