জঙ্গিবাদে অর্থায়নকারী প্রতারক শফিকের অভিনব জালিয়াতি
নিজস্ব প্রতিবেদন, বাঙলার কাগজ ও ডন : বেসরকারি খাতের সোস্যাল ইসলামী ব্যাংক লিমিটেডের (এসআইবিএল) বিদায়ী ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) শফিকুর রহমান শুধু জঙ্গিবাদেই অর্থায়ন করেন নি। তিনি ব্যাংকটি থেকে জালিয়াতির মাধ্যমে কয়েক হাজার কোটি টাকা পাচার করেছেন। এক্ষেত্রে তিনি অভিনব জালিয়াতির আশ্রয় নিয়েছেন। যেখানে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে অর্থ পাচারের সুযোগ করে দিয়ে তিনি নিজেও অর্থ পাচার করেছেন। বিষয়টি বাংলাদেশ ব্যাংকের অফসাইট সুপারভিশন এবং ব্যাংক পরিদর্শন বিভাগের তদন্তে বেরিয়ে এসেছে।
অনিয়মের ব্যাপারে জানার জন্য রোববার (২০ নভেম্বর) সন্ধ্যায় এসআইবিএলের সাবেক এমডি ও সিইও শফিকুর রহমানের মুঠোফোনে ফোন দেওয়া হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেন নি।
বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিদর্শনে বেরিয়ে এসেছে, এস কে স্টিল জিইসি মোড় চট্টগ্রাম শাখার একজন ঋণগ্রহীতা। শফিকুর রহমানের আমলে তাঁদের কাছে এসআইবিএলের পাওনা দাঁড়ায় প্রায় ৬০ কোটি টাকা। মেসার্স ফরচুন ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড চকবাজার শাখা চট্টগ্রামের ঋণগ্রহীতা। প্রতিষ্ঠানটির কাছে ব্যাংকের পাওনা দাঁড়ায় প্রায় ৪৪ কোটি টাকা। মেসার্স মরিয়া স্টিল জুবলী রোড চট্টগ্রাম শাখার আরও একজন ঋণগ্রহীতা। শফিকুরের আমলে ব্যাংকের পাওনা দাঁড়ায় প্রায় ১ শ কোটি টাকা। তিনটি প্রতিষ্ঠানই শিপ ব্রেকিংয়ের জন্য ঋণ নিয়ে তা আত্মসাৎ করে বিদেশে পাচার করেছে।
তথ্যমতে, ইস্টার্ন করপোরেশন আগ্রাবাদ শাখা, চট্টগ্রামের একজন ঋণগ্রহীতা। শফিকুরের সময়ে ব্যাংকটির পাওনা দাঁড়ায় প্রায় ৫৫ কোটি টাকা। তাদেরকে কী উদ্দেশ্যে ঋণ প্রদান করা হয়েছে, তা স্পষ্ট নয়। সুপার সিক্স শিপ ব্রেকার্স আগ্রাবাদ চট্টগ্রাম শাখার একজন ঋণগ্রহীতা। শফিকুর রহমানের সময়ে ব্যাংকটির পাওনা দাঁড়ায় প্রায় ৩৫ কোটি টাকা। কুমরা শিপ ব্রেকিং লিমিটেড আগ্রাবাদ শাখা চট্টগ্রামের একজন ঋণগ্রহীতা। প্রতিষ্ঠানটির কাছে এসআইবিএলের পাওনা দাঁড়ায় প্রায় ২১ কোটি টাকা। ইয়াসিন এন্টারপ্রাইজ আগ্রাবাদ শাখার চট্টগ্রামের একজন ঋণগ্রহীতা। শফিকুরের সময়ে ব্যাংকটির পাওনা দাঁড়ায় প্রায় ২৬ কোটি টাকা। এক্ষেত্রেও শিপ ব্রেকিংয়ের জন্য ঋণ নিয়ে তা পরিশোধ না করে আত্মসাৎ করে বিদেশে পালিয়ে যায় অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানের কর্তাব্যক্তিরাই। যেখানে শফিকুর রহমান বড় পার্সেন্টেজ নিয়েছেন বলেই অভিযোগ রয়েছে। এবং এসব অভিযোগের বেশ কয়েকটির সত্যতাও পাওয়া গেছে।
বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে আরও জানা গেছে, লিজেন্ড টেক্সটাইল লিমিটেড আগ্রাবাদ শাখা চট্টগ্রামের একজন ঋণগ্রহীতা। শফিকুরের সময়ে সোস্যাল ইসলামী ব্যাংক লিমিটেডের প্রতিষ্ঠানটির কাছে পাওনা দাঁড়ায় প্রায় ১ শ কোটি টাকা। আহমদ মুজতবা স্টিল ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের আগ্রাবাদ শাখা চট্টগ্রামের একজন ঋণগ্রহীতা। প্রতিষ্ঠানটির কাছে পাওনা দাঁড়ায় ৩৫ কোটি টাকা। প্রতিষ্ঠানটি শিপ ব্রেকিং ব্যবসার জন্য ঋণ নিয়ে তা পরিশোধ না করে সিঙ্গাপুরে পাচার করেছে। মাইল ফেব্রিক্স লিমিটেড আগ্রাবাদ শাখা, চট্টগ্রামের একজন ঋণগ্রহীতা এবং শফিকুরের সময়ে প্রতিষ্ঠানটির কাছে ব্যাংকটির পাওনা দাঁড়ায় ১৩ কোটি টাকা।
মেসার্স দত্ত এন্টারপ্রাইজ বগুড়া শাখার একজন ঋণগ্রহীতা। শফিকুরের সময়ে প্রতিষ্ঠানটির কাছে এসআইবিএলের পাওনা দাঁড়ায় ৪৫ কোটি টাকা। ভারত থেকে পণ্য আমদানির জন্য এলসি (আমদানির ঋণপত্র) খুলে আমদানি মূল্য পরিশোধ না করে গোপনে বন্দর থেকে পণ্য খালাস করে তা বিক্রি করে ব্যাংকের পাওনা পরিশোধ না করেই অর্থ আত্মসাতের ঘটনা ঘটেছে।
বাংলাদেশ ব্যাংক আরও বলছে, মেসার্স লিটন ট্রেডার্স বগুড়া শাখার একজন ঋণগ্রহীতা। শফিকুরের সময়ে প্রতিষ্ঠানটির কাছে ব্যাংকের পাওনা দাঁড়ায় ৩০ কোটি টাকা। ভারত থেকে পণ্য আমদানির জন্য এলসি খুলে আমদানি মূল্য পরিশোধ না করে গোপনে জালিয়াতির মাধ্যমে বন্দর থেকে পণ্য খালাস করা হয়েছে। পরে তা বাজারে বিক্রি করে ব্যাংকের পাওনা পরিশোধ না করেই অর্থ আত্মসাতের ঘটনা ঘটেছে। যেখানে যোগসাজশ করে এ অর্থ আত্মসাৎ করেছেন ব্যাংকটির এমডি এবং প্রতিষ্ঠান সংশ্লিষ্টরা।
মরিয়ম স্পিনিং মিলস লিমিটেড মাধবদী, নরসিংদী শাখার একজন ঋণগ্রহীতা। শফিকুরের সময়ে প্রতিষ্ঠানটির কাছে ব্যাংকের পাওনা দাঁড়ায় ৫৫ কোটি টাকা। এক্ষেত্রে এসআইবিএলের ঋণ নেওয়ার পর প্রতিষ্ঠানটি আর পরিশোধ করছে না। এসব জালিয়াতি ও অর্থ আত্মসাতের ঘটনায় এসআইবিএলের বিদায়ী চেয়ারম্যান রেজাউল হকও জড়িত ছিলেন বলেই তদন্তে বেরিয়ে এসেছে। তবে অধিকাংশক্ষেত্রে বড় অর্থ জালিয়াতির মাধ্যমে পাচার করেছেন এসআইবিএলের বিদায়ী এমডি ও সিইও শফিকুর রহমান।