চান্দিনায় নৌকার ভরাডুবি। বিএনপি-জামায়াতসহ ৯টিতে স্বতন্ত্র প্রার্থী জয়ী।

চান্দিনায় নৌকার ভরাডুবি। বিএনপি-জামায়াতসহ ৯টিতে স্বতন্ত্র প্রার্থী জয়ী।
ডন প্রতিবেদন : কুমিল্লা জেলার চান্দিনা উপজেলার ১২টি ইউনিয়নের ৯টিতেই ভরাডুবি হয়েছে নৌকা প্রতীকের। ১২টি ইউনিয়নের ফলাফলে মাত্র ৩টিতে আওয়ামী লীগ জয়ী হয়েছে। বাদবাকি ৯টিতে জয়লাভ করেছে বিএনপি-জামায়াতসহ স্বতন্ত্র প্রার্থীরা। ৯ জন স্বতন্ত্র প্রার্থীর মধ্যে ৬ জন আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী, দুইজন বিএনপি ‘সমর্থিত’ স্বতন্ত্র এবং একজন জামায়াত ‘সমর্থিত’ স্বতন্ত্র প্রার্থী। পঞ্চম ধাপের ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে বুধবার (৫ জানুয়ারি) সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত ‘শান্তিপূর্ণ পরিবেশে’ একটানা অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়। সন্ধ্যার পর থেকে রাত ১২টা পর্যন্ত উপজেলা পরিষদ মিলনায়তনে ফলাফল ঘোষণা করেন উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা আহসান হাবীব। তবে ভোট চোখের দেখায় সুষ্ঠু হলেও ব্যালট বাক্স ভর্তি করে এনে ফলাফল রঞ্জিত করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। এক্ষেত্রে কুমিল্লা-০৭ আসনের সংসদ সদস্য ডা. প্রাণ গোপাল দত্ত যাঁদের ব্যাপারে মনোনয়ন চেয়েছিলেন, তাঁদের মনোনয়ন না দেওয়ায় তিনি স্বতন্ত্র প্রার্থীদের সমর্থন করেছিলেন বলেই গুঞ্জন রয়েছে। আর তাতেই আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থীরা জয়লাভ করেছে বলেই অভিযোগ পাওয়া গেছে। চান্দিনায় বিজয়ী প্রার্থীরা হলেন : ১ নম্বর সুহিলপুর ইউনিয়নে আনারস প্রতীকে আওয়ামী লীগ বিদ্রোহী স্বতন্ত্র প্রার্থী আবু বকর ছিদ্দিক ৩ হাজার ২৮৭ ভোট, ২ নম্বর বাতাঘাসী ইউনিয়নে চশমা প্রতীকে বিএনপি সমর্থক স্বতন্ত্র প্রার্থী অ্যাডভোকেট মো. সাদেক ২ হাজার ৭৬০ ভোট, ৩ নম্বর মাধাইয়া ইউনিয়নে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী বীর মুক্তিযোদ্ধা মজিবুর রহমান নৌকা প্রতীকে ৫ হাজার ৩৭৯ ভোট, ৫ নম্বর কেরণখাল ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী স্বতন্ত্র প্রার্থী সুমন ভূইয়া আনারস প্রতীকে ৪ হাজার ৩৮৫ ভোট, ৬ নম্বর বাড়েরা ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী স্বতন্ত্র প্রার্থী আহসান হাবীব ভূইয়া আনারস প্রতীকে ৪ হাজার ৫২৯ ভোট, ৭ নম্বর এতবারপুর ইউনিয়নে আওয়ামী লীগ বিদ্রোহী স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. ইউসুফ আনারস প্রতীকে ২ হাজার ৫১১ ভোট, ৮ নম্বর বরকইট ইউনিয়নে সাবেক বিএনপি নেতা ও সাবেক চেয়ারম্যান নূরে আলম ঘোড়া প্রতীকে ৩ হাজার ১৯৮ ভোট, ৯ নম্বর মাইজখার ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী স্বতন্ত্র প্রার্থী বর্তমান চেয়ারম্যান শাহ্ সেলিম প্রধান আনারস প্রতীকে ৯ হাজার ৭৫৯ ভোট, ১০ নম্বর গল্লাই ইউনিয়নে প্রবীণ আওয়ামী লীগ নেতা স্বতন্ত্র প্রার্থী বীর মুক্তিযোদ্ধা ফজলুল করিম দর্জি (চশমা) ৬ হাজার ৭২৮ ভোট, ১১ নম্বর দোল্লাই নবাবপুর ইউনিয়নে চশমা প্রতীকে স্বতন্ত্র প্রার্থী জামায়াত নেতা শাহজাহান মিয়া ৭ হাজার ১০৬ ভোট, ১২ নম্বর বরকরই ইউনিয়নে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী সাইফুল ইসলাম মজুমদার শিপন নৌকা প্রতীকে ৫ হাজার ৬৮৯ ভোট, ১৩ নম্বর জোয়াগ ইউনিয়নে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী ইঞ্জিনিয়ার আব্দুল আউয়াল খান নৌকা প্রতীকে ৪ হাজার ৮৯১ ভোট পেয়ে বেসরকারিভাবে নির্বাচিত হয়েছেন। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আশরাফুন নাহার বাঙলা কাগজ এবং ডনকে বলেন, জেলা প্রশাসক ও জেলা পুলিশ সুপারের সঠিক দিক নির্দেশনায় পর্যাপ্ত আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর উপস্থিতিতে অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে নিরপেক্ষ ভোটগ্রহণ সম্পন্ন করেছি। চান্দিনায় কোনও রকম অপ্রীতিকর ঘটনা ছাড়াই ভোটারদের স্বতঃস্ফূর্ত উপস্থিতিতে ভোটগ্রহণ সম্পন্ন করাটাই আমাদের সফলতা। ‘কে জয়ী হলো আর কে পরাজিত হলো সেটা দেখার বিষয় নয়।’ উল্লেখ করা যেতে পারে, চান্দিনা উপজেলার ১৩টি ইউনিয়নের মধ্যে ১২টি ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে ৭৬ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। তাঁদেরমধ্যে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, কমিউনিস্ট পার্টি ও জাকের পার্টি সমর্থিত প্রার্থী ছিলেন ২৫ জন। বাদবাকি ৫১ জন ছিলেন স্বতন্ত্র প্রার্থী।