চোখের জল ফেলে ক্ষমা চাইলেন মেয়র জাহাঙ্গীর

চোখের জল ফেলে ক্ষমা চাইলেন মেয়র জাহাঙ্গীর
ডন প্রতিবেদক, গাজীপুর : বিতর্কিত মন্তব্য করার ‘দায়ে’ গাজীপুর সিটি করপোরেশনের মেয়র সদ্য বহিষ্কৃত মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম তাঁর বহিষ্কারাদেশ পুনর্বিবেচনা করার জন্য আওয়ামী লীগের সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নিকট দাবি জানিয়েছেন। তিনি তাঁর অপরাধের জন্য প্রধানমন্ত্রীর কাছে ক্ষমা চেয়েছেন। এ সময় তিনি চোখের জল ফেলে নগরবাসীর কাছেও ক্ষমা চেয়েছেন। শনিবার (২০ নভেম্বর) দুপুরে মেয়র জাহাঙ্গীর আলম তাঁর বাসভবনে সাংবাদিকদের কাছে এ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন। সকাল থেকেই নগরীর বিভিন্ন স্থান থেকে শতশত দলীয় নেতাকর্মী ও শুভান্যুধ্যায়ী ছয়দানার মেয়রের বাসভবনে সামনে জড়ো হতে থাকে। তাঁরা মেয়রের পক্ষে স্লোগান দিতে থাকেন। বেলা একটার দিকে মেয়র নেতাকর্মীদেরসঙ্গে দেখা করতে ভবনের নীচতলায় নেমে আসলে নেতাকর্মীরা কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন। এ সময় পুরো বাড়ি জুড়ে কান্নার রোল পড়ে যায়। মেয়রও আবেগ আপ্লুত হয়ে পড়েন। পরে মেয়রের ছোট ভাই ও মা মেয়রকে সান্তনা দিয়ে বাসার উপরে নিয়ে যান। এরপর কিছুটা স্বাভাবিক হলে মেয়র জাহাঙ্গীর সাংবাদিকদের অনুরোধে বাসার নীচতলায় নেমে এসে তার বহিষ্কার সম্পর্কে সাংবাদিকদের কাছে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন। এ সময় মহানগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মজিবুর রহমান, বন ও পরিবশে বিষয়ক সম্পাদক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী, ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক কাউন্সিলর রফিকুল ইসলাম, সদস্য কাউন্সিলর আজিজুর রহমান শিরিশ, যুব ও ক্রীড়া বিষয়ক সম্পাদক আসাদুজ্জামান তরুণ, সহ দপ্তর সম্পাদক মাজহারুল ইসলাম, যুব লীগের কেন্দ্রীয় সদস্য রুহুল আমীন, কাউন্সিলর জাহাঙ্গীর আলম, মহানগর শ্রমিক লীগের আহবায়ক আবদুল মজিদ বিএসসি, মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক মনিরুজ্জামান মনির, মহানগর কৃষক লীগের সাধারণ সম্পাদক কাউন্সিলর আবদুল কাদির মন্ডল, মহানগর যুবলীগের যুগ্ম আহবায়ক সুমন আহমেদ শান্ত বাবু, মহানগর মহিলা লীগের সভাপতি সেলিনা ইউনুস, সাধারণ সম্পাদক ফাহিমা আক্তার হোসনা প্রমুখ কাউন্সিলর ও বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন। মেয়র জাহাঙ্গীর আলম আবেগ তাড়িত কন্ঠে সাংবাদিকদের বলেন, গাজীপুর মহানগরীতে আওয়ামী লীগকে একটি শক্ত ভিতের উপর আমি দাঁড় করিয়েছি। গাজীপুরকে আওয়ামী লীগের ঘাঁটি হিসেবে তৈরী করেছি। আমি ছাত্রলীগ দিয়ে ছাত্র রাজনীতি শুরু করি। ‘পরবর্তীতে আমাকে মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক পদে নির্বাচিত করা হয়। ছাত্রজীবন থেকেই একটি মহল আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র শুরু করেছে। পরবর্তীতেও তাঁদের চক্রান্ত ও ষড়যন্ত্র থেমে থাকে নি। ২০১৩ সালের পর থেকে কিছু লোক আমাকে মারার জন্য এবং বিভিন্নভাবে প্রশ্নবিদ্ধ করার জন্য আমাকে আমার পরিবারকে এবং আমার সমর্থনে যাঁরা আছে, আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের প্রশ্নবিদ্ধ করার জন্য আমার পিছনে সব সময় লেগেছিলো।’ ‘তারইঅংশ হিসেবে আমার ঘরের ভিতরে বসে ৩ ঘণ্টার আলাপচারিতাকে খণ্ড খণ্ড করে ও সুপার এডিট করে মিথ্যা ও বানোয়াট তথ্যের ভিডিও এবং অডিও করে ইন্টারনেটে ভাইরাল করা হয়েছে। ষড়যন্ত্রকারীরা আমার সম্পর্কে ভুলভাবে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে উপস্থাপন করেছে।’ তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রীকে ভুল তথ্য দিয়ে আমাকে প্রশ্নবিদ্ধ করা হয়েছে। যাতে প্রধানমন্ত্রীর কাছে আমি আর যেতে না পারি। আমি প্রধানমন্ত্রীর কাছে সময় চেয়েছিলাম আমার কথা বলার জন্য। করোনার কারণে প্রধানমন্ত্রীরসঙ্গে কথা বলতে পারি নি। আমি যদি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে এই অডিও-ও ভিডিও’র বিষয়ে সরাসরি কথা বলতে পারতাম, তাহলে প্রধানমন্ত্রী সবকিছু বুঝতে পারতেন। উনার কাছে সঠিক তথ্য গেলে আমি সত্য ও ন্যায় বিচার অবশ্যই পেতাম। তখন তিনি হয়তো আমার ব্যাপারে এমন কঠিন সিদ্ধান্ত নিতেন না। তাই আমি দল থেকে বহিষ্কারের বিষয়টি পুনর্বিবেচনার জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নিকট করজোরে অনুরোধ জানাই। শুক্রবার (১৯ নভেম্বর) সন্ধ্যায় আওয়ামী লীগের সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত দলের কার্যনির্বাহী কমিটির সভায় মেয়র জাহাঙ্গীর আলমকে গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক পদ থেকে বহিষ্কার করা হয়। সেইসঙ্গে তাঁর প্রাথমিক সদস্যপদটিও বাতিল করা হয়।