খালেদা জিয়া ইস্যুতে ‘সর্বোচ্চ সতর্কতায়’ সরকার।

ডন প্রতিবেদন : বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার অসুস্থতাকে পুঁজি করে রাজনৈতিক ফায়দা আদায়ের চেষ্টা করছে বিএনপি। তাঁর অসুস্থতাকে কেন্দ্র করে দলের নেতাকর্মীরা সরকারবিরোধী আন্দোলন গড়ে তোলার চেষ্টা করছেন। এ লক্ষ্যে দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে নেতাকর্মীদের ঢাকায় জড়ো করার পরিকল্পনা করেছে দলটি। কয়েক লাখ লোক জড়ো করে অনির্দিষ্টকালের জন্য ঢাকার রাজপথ দখলে রাখতে পারে এবং সহিংসতা ঘটানোরও আশঙ্কা রয়েছে। এমন শঙ্কা প্রকাশ করেছে সরকারের একটি গোয়েন্দা সংস্থা। এক্ষেত্রে পরিস্থিতি মোকাবিলায় প্রয়োজনীয় সুপারিশ সম্বলিত গোয়েন্দা সংস্থার ওই প্রতিবেদন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে জমা দেওয়া হয়েছে। আর ওই প্রতিবেদনের প্রেক্ষিতে ঢাকাসহ সারাদেশে সর্বোচ্চ সতর্কতা জারি ও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারি বাহিনীকে নির্দেশ দিয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। সূত্রমতে, গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনে ঢাকাসহ দেশের বিএনপির সকল কার্যালয় ও আশপাশের এলাকায় নিরাপত্তা জোরদার এবং রাজধানীতে প্রবেশে কড়াকড়ি ও আবাসিক হোটেল-মেসে পুলিশি রেইড চালানোসহ এক ডজন সুপারিশ করা হয়েছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা বলেন, বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার অসুস্থতার বিষয়টি সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে মনিটর করা হচ্ছে। বিষয়টি নিয়ে সরকারের একাধিক গোয়েন্দা সংস্থা প্রতিবেদন দিয়ে কিছু সুপারিশও করেছে। সেই সুপারিশের আলোকে ব্যবস্থা নিতে পুলিশ সদর দপ্তরসহ সরকারের সংশ্লিষ্ট সকল দপ্তরকে সর্বোচ্চ সতর্কতায় থাকতে বলা হয়েছে। এদিকে খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কেউ যাতে গুজব ছড়িয়ে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে না পারে, সেজন্য ইতিমধ্যে সরকারের উচ্চপর্যায় থেকে পুলিশকে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে। একইসঙ্গে দেশজুড়ে গোয়েন্দা তৎপরতাও বাড়ানো হয়েছে। ঢাকায় কর্মরত যেসব পুলিশ কর্মকর্তা ছুটিসহ বিভিন্ন কারণে ঢাকার বাইরে ছিলেন, কর্মস্থলে তাঁদের যোগ দিতে বলা হয়েছে। সূত্র জানায়, সরকারের পক্ষ থেকে এমন ব্যবস্থা গ্রহণ করা হলেও বিএনপির পক্ষ থেকে এখন বলা হচ্ছে বেগম খালেদা জিয়ার মৃত্যুর কথা। এক্ষেত্রে কেউ কেউ মনে করছেন, খালেদা জিয়া মারা গেলেই বরং তাঁদের জন্য ‘প্লাস পয়েন্ট’ এবং তখন আন্দোলন আরও জোরদার হবে। এক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট এক সূত্র দাবি করেছে, বর্তমানে বিএনপি শুধু সরকারপ্রধানের নির্বাহী আদেশের কথাই বলছে। তাঁরা কিন্তু রাষ্ট্রপতির কাছেও আবেদন করছে না কিংবা আদালতের দ্বারস্থও হচ্ছে না। এক্ষেত্রে দলটি রাষ্ট্রপতিকে তাঁদের ‘বিরোধী’ হিসেবে দাঁড় করাতে চাইছে না এই অর্থে, বিএনপি মনে করে কোনও কারণে রাষ্ট্রপতি ক্ষমা না করলে তখন বিএনপির আর কোনও রাস্তা খোলা থাকবে না। আবার আদালতের ওপরও ‘আস্থা রাখতে পারছে না’ বিএনপি। ফলে তাঁরা একমাত্র নির্বাহী আদেশের জন্যই কর্মসূচি চালিয়ে যেতে চাইছেন। সার্বিকভাবে যখন বিএনপির একাংশের পক্ষ থেকেও খালেদা জিয়ার মৃত্যুর কথা বারবার বলা হচ্ছে, তখন দেশের একটি গোয়েন্দা সংস্থা বয়সের ফলে খালেদা জিয়ার মৃত্যু পরবর্তী পরিস্থিতি তুলে ধরে পর্যবেক্ষণে বলেছে, তাঁর মৃত্যু, জানাজা ও দাফন ইত্যাদি কর্মকাণ্ড ঘিরে দলের বিশেষ রাজনৈতিক পরিকল্পনার ছক রয়েছে। জানাজা শেষে নেতাকর্মীরা রাজপথে বসে পড়তে পারেন এবং তা সরকার পতনের আন্দোলনে রূপ নিতে পারে। সূত্রমতে, খালেদা জিয়া মারা গেলে তাঁর কবর চন্দ্রিমা উদ্যানে তাঁর প্রয়াত স্বামী জিয়াউর রহমানের কবরের পাশে দেওয়ার চেষ্টা করা হতে পারে। এক্ষেত্রে বিএনপি কর্তৃক চন্দ্রিমা উদ্যানকে দলীয় ‘মাজার’ হিসেবে প্রতিষ্ঠা করে সার্বক্ষণিক ব্যাপক লোকসমাগম ঘটানোর এবং সেটিকে সরকারবিরোধী আন্দোলনের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত করার শঙ্কা রয়েছে। গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, খালেদা জিয়া চিকিৎসা গ্রহণে বিদেশে যেতে ব্যক্তিগতভাবে ইচ্ছুক নন মর্মে ইতিমধ্যে একাধিকবার ইচ্ছা প্রকাশ করলেও বিএনপির নেতাকর্মীরা শুধু সরকার-বিরোধিতার স্বার্থে তাঁর অসুস্থতাকে ব্যবহার করছে।