কলাম : কন্যাদের জন্য বাঁচি

কলাম : কন্যাদের জন্য বাঁচি

তানজিনা পৃথা : : বিক্রি হয়ে যাওয়া, পরিস্থিতির স্বীকার অথবা কিঞ্চিৎ ভালোবাসার মোহে মেয়েটি যখন বিছানায় যায় তার নাম হয় ‘বেশ্যা’; যা সমাজের নিচু শ্রেণী, অস্পৃশ্য, গালির উপকরণ। অথচ পুরুষত্বের তাগিদে বন্ধু মহলে নিজের যোগ্যতা প্রমাণে যে পুরুষেরা প্রতিনিয়ত শুয়ে বেড়াচ্ছে, তার নাম কি দিলো সমাজ? আদৌও কি পেরেছে কিংবা দিতে পারবে কি? দামি কাপড়ের আড়ালে এই কমদামি মানসিকতা পাল্টাবে কবে? একজন নারীর জন্য নিরাপদ চিন্তার ক্ষেত্র কবে তৈরি হবে? জানতে চাই কিন্তু জবাব দেবে কে?

কারণ সমাজটাই তো সুবিধাভোগীদের নিজেদের জন্য তৈরি নীতিমালায় পরিচালিত। নারীবাদ মানেই বিরোধিতা নয়; এটাকে মেনে নারীকে সম্মান দিতে শিখলেই নারীবাদ নিয়ে বিতর্ক ম্লান হবে।

প্রতিটি পুরুষের উদ্দেশেই বলছি, আপনার কন্যা সন্তানটি ভবিষ্যতে একজন পরিপূর্ণ নারী। অন্য নারীর প্রতি আপনার দৃষ্টিভঙ্গি যদি অসম্মানের হয়; তবে ভেবে দেখুন, আপনার ছায়ায় আগলে থাকা পরম আদরের সন্তানকেও একইভাবে হয়তো কেউ অসম্মান করছে, আপনার আড়ালে। নিজের সন্তানের জন্য হলেও তো এভাবে ভাবা যায়; তাই নয় কি?

অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী একজন নারীকেও প্রতিনিয়ত সতীত্বের প্রমাণ দিয়ে টিকে থাকতে হয় ঘরে বাইরে। এই যুদ্ধ তাঁর সম্পূর্ণ একার। পরিবারকে যুদ্বের বাস্তব চিত্র বললে সামাজিক অসম্মানের আশঙ্কায় তাঁর পথ আগলে রাখবে। আর বাইরে কাউকে পাশে পাবে না খারাপ তকমা এড়ানোর জন্য। 

একমাত্র হাতিয়ার আত্মবিশ্বাস; তা নিয়েও হবে নানা রকম পরীক্ষামূলক গবেষণা। সেটাও ‘তাঁরই দোষ’; কেনো সে কোনও বাধাই মানবে না! প্রতিটি পদক্ষেপের কঠিন পরীক্ষাতে পাস তাঁকে করতেই হবে। এ যেনো বীজগণিতের ফর্মুলায় না পড়লে ফলাফল মিলবে না। কি দম বন্ধ একটা পারিপার্শ্বিকতায় প্রতিদিন বেড়ে উঠছে প্রতিটি মন। যাঁরা কিনা ভবিষ্যত প্রজন্মের  অভিভাবক।

আমি মন থেকে প্রতিটি কন্যাকে নিরাপত্তার প্রতিশ্রুতি দিয়ে শুভেচ্ছা জানাতে চাই। আমার সন্তানকে আমি ছাদ খোলা বাসের মতো সংকীর্ণতাহীন মনখোলা পৃথিবী উপহার দিতে চাই। যেখানে তাঁর নিজের সম্মানের জন্য হাহাকার করে অপেক্ষা করতে হবে না; আন্দোলন করতে হবে না আত্মমর্যাদা প্রতিষ্ঠায়। 

খুব বেশি কষ্টের নয় এ যাত্রা। 

বন্ধুমহলে নিজেকে নারীত্বে সুপ্রতিষ্ঠিত না করে নিজের কন্যা সন্তানের কাছে যোগ্য পিতা হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করুন। দেখবেন এই সমাজে আর কোনও মেয়েকে ধর্ষণের শিকার হয়ে আত্মহত্যা করতে হবে না। সম্পর্কের অবহেলায় তিলে তিলে কাউকে কাঁদতে হবে না। হাতে প্ল্যাকার্ড নিয়ে রাস্তায় নামতে হবে না অধিকার আদায়ের আন্দোলনে। নিজেদের কন্যা সন্তানের জন্যই না হয় একটি নির্মল সমাজ উপহারের চেষ্টা শুরু হোক। যেখানে পরিবারের ছেলে সন্তানটিও বেড়ে উঠবে পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধের শিক্ষায়। রচিত হবে স্বপ্নময় পৃথিবীর নিষ্পাপ আবাসস্থল।

কলামিস্ট : উন্নয়ন বিশেষজ্ঞ ও গণমাধ্যমকর্মী।