উন্নয়নের ৩ সোপান কৃষি, ডিজিটাল অর্থনীতি ও সবুজ অর্থায়ন

উন্নয়নের ৩ সোপান কৃষি, ডিজিটাল অর্থনীতি ও সবুজ অর্থায়ন
ডন প্রতিবেদন : উন্নত আয়ের দেশের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের পথপরিক্রমায় কৃষি ব্যবসা, ডিজিটাল অর্থনীতি ও সবুজ অর্থায়ন খাত মূল চালিকা শক্তি হিসেবে ভূমিকা রাখবে বলে এক গবেষণা প্রতিবেদনে তুলে ধরা হয়েছে। ফরেন ইনভেস্টর্স চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (এফআইসিসিআই) আয়োজিত এক সেমিনারে রোববার ‘গ্রোথ ড্রাইভার্স ফর বাংলাদেশ’ শীর্ষক প্রতিবেদন উপস্থাপন করা হয়। পলিসি এক্সচেঞ্জ বাংলাদেশের চেয়ারম্যান ও সিইও অর্থনীতিবিদ ড. মাশরুর রিয়াজ মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন। তিনি বলেন, ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত রাষ্ট্র হতে বাংলাদেশ যে দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করছে, তাতে বাংলাদেশের অর্থনীতির পরিচালনার মূল চালক হতে পারে তিনটি খাত- কৃষি ব্যবসা, ডিজিটাল অর্থনীতি ও সবুজ অর্থায়ন। এই তিনটিকে প্রধান করে নীতি প্রণয়ন করলে বাংলাদেশ একটি স্বাতন্ত্রময় অর্থনৈতিক ক্ষেত্র হতে পারে। ২০২৫ সালের মধ্যে জিডিপির বিপরীতে বিদেশি বিনিয়োগ ছয়গুণ ও রপ্তানি ৬৬ শতাংশ বৃদ্ধি পেতে পারে। প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান বলেন, দেশকে উন্নত রাষ্ট্রের কাতারে নিতে হলে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে- মাথায় পিছু আয় বাড়ানো। এ জন্য দেশে বেসরকারি বিনিয়োগ বৃদ্ধি করে রপ্তানি বাড়াতে হবে। স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে বের হওয়ার পর চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় উন্নত দেশগুলোতে শুল্কমুক্ত প্রবেশাধিকার আদায়ে জোর প্রস্তুতি নেওয়ার উপর জোর দেন তিনি। সালমান বলেন, শুল্কমুক্ত বাজার সুবিধা নিশ্চিত করার সবচেয়ে বড় হাতিয়ার বিদেশি বিনিয়োগ। গত এক দশকে বাংলাদেশ অনেক প্রবৃদ্ধি অর্জন করলেও জিডিপির অনুপাতে বাংলাদেশে বিদেশি বিনিয়োগ খুবই কম। বিশেষ করে বস্ত্র, চামড়া ও কৃষি খাতে বিদেশি বিনিয়োগের সবচেয়ে বড় খাত। প্রধান অতিথি পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, সকল ক্ষেত্রে নিজস্ব কৌশল উদ্ভাবনের মাধ্যমে বেসরকারি বিনিয়োগে এগিয়ে আসতে হবে। এক্ষেত্রে সবার জন্য সমান সুবিধা (উইন উন সিচুয়েশন) নিশ্চিত করার মাধ্যমে দেশি বিদেশি বিনিয়োগ কীভাবে আকৃষ্ট করা যায় তার ওপর জোর দিতে হবে। মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রির (এমসিসিআই) প্রেসিডেন্ট ব্যারিস্টার নিহাদ কবির বলেন, “বিনিয়োগকারীদের জন্য প্রমাণিত সত্য হচ্ছে, তারা যেই দেশে সুযোগ-সুবিধা পাবে সেই দেশেই বিনিয়োগ করবে। তাই আমরা যদি বিনিয়োগ চাই তাহলে অবশ্যই আমাদের ব্যবসা সহজীকরণ নীতিমালা গ্রহণ করতে হবে। ” তিনি বিনিয়োগ কর্তৃপক্ষের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, “আপনাদের ব্যবসা সহজীকরণকে বাস্তবভিত্তিক প্রধান উদ্দেশ্য করে কার্যক্রম পরিচালনা করতে হবে। না হলে আমরা দেশি বা বিদেশি বিনিয়োগকারীদের কাছে প্রচার করলাম যে, বাংলাদেশ ব্যবসাবান্ধব পরিবেশ রয়েছে। কিন্তু বাস্তবে যদি বিনিয়োগকারীরা সেই পরিবেশ না পান তাহলে কিন্তু সেই ব্যবসায়ীরা দেশে এসেও বিনিয়োগ না করে চলে যাবে।” রাজধানীর বনানীতে হোটেল শেরাটনে এফআইসিসিআইয়ের প্রেসিডেন্ট রুপালী চৌধুরীর সভাপতিত্বে সেমিনারে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম, ঢাকায় নিযুক্ত জাপানের রাষ্ট্রদুত ইতো নাওকি, দক্ষিণ কোরিয়ার রাষ্ট্রদুত লি জ্যাং কেউন এবং নেদারল্যান্ডের রাষ্ট্রদুত পাওলা রুস শিন্ডলার এবং বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের নির্বাহী চেয়ারম্যান মো. সিরাজুল ইসলামও ছিলেন। অনুষ্ঠানে জাপানের রাষ্ট্রদুত ইতো নাওকি বলেন, “আমি মনে করি দেশি বা বিদেশি যে কোনও বিনিয়োগকারীরা বিনিয়োগ প্রক্রিয়ার সহজীকরণ চায়। তাই যে দেশ যত বেশি সহজীকরণ করবে সেই দেশে তত বেশি বিনিয়োগ যাবে। বাংলাদেশ হচ্ছে এশিয়ার সবচেয়ে সম্ভাবনাময় দেশগুলোর একটি। গত কয়েক বছর ধরে বাংলাদেশে বিনিয়োগকারীদের জন্য যেভাবে নীতি সহজীকরণের চেষ্টা করা হচ্ছে তাতে বর্তমানে একটা অবস্থানে পৌঁছেছে। গত কয়েক বছরের মধ্যে প্রতিদিন বাংলাদেশে বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ উন্নত হচ্ছে। কোরিয়ার রাষ্ট্রদুত লি জ্যাং কেউন বলেন, একবছর চার মাস আগে এই দেশে আসার আগে আমি এ দেশ সম্পর্কে তেমন কিছুই জানতাম না। কিন্তু এখানে এসে যা দেখছি তা অনেক দেশেরই নেই। বাংলাদেশ যে পরমাণু বিদ্যুৎ তৈরি করতে তাই অনেক দেশ জানেও না। অথচ পূর্ব এশিয়ার শক্তিশালী দেশ মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়াসহ অনেক দেশই তা পারে নি। নেদারল্যান্ডের রাষ্ট্রদুত পাওলা রুস শিন্ডলার বলেন, বিনিয়োগ খরা কাটানোর ম্যাজিক সমাধান হচ্ছে ব্যবসা সহজীকরণ। বিনিয়োগকারীদের যত সমস্যা সমাধান করবেন বিনিয়োগও ততই বৃদ্ধি পাবে।