ইন্ডাস্ট্রিয়াল ফাইন্যান্সের জালিয়াতির বিষয়ে ৯ সুপারিশ হাইকোর্টে

ইন্ডাস্ট্রিয়াল ফাইন্যান্সের জালিয়াতির বিষয়ে ৯ সুপারিশ হাইকোর্টে

নিজস্ব প্রতিবেদন, বাঙলার কাগজ : বাংলাদেশ ইন্ডাস্ট্রিয়াল ফাইন্যান্স কোম্পানি (বিআইএফসি) থেকে নামে-বেনামে ঋণের মাধ্যমে টাকা হাতিয়ে নেওয়ার বিষয়ে ৯ দফা সুপারিশ করে হাইকোর্টে প্রতিবেদন দাখিল করেছে ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং কমিটি। কমিটি উল্লেখ করেছে, বিআইএফসি থেকে বিকল্পধারার মহাসচিব মেজর (অবসর) আবদুল মান্নান একাই ৫১৭ কোটি ৬৩ লাখ টাকা নামে-বেনামে ঋণের মাধ্যমে হাতিয়ে নিয়েছেন। এমন অবস্থায় বর্তমানে মোট সম্পদের চেয়ে দায় বেশি হওয়ায় বিআইএফসির পাওনাদার/আমানতকারীদের পাওনা ফেরৎ অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।

হাইকোর্টের নির্দেশে গঠিত বাংলাদেশ ব্যাংকের উচ্চ পর্যায়ের ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং কমিটি এ প্রতিবেদন দাখিল করেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের আইনজীবী ব্যারিস্টার খান মোহাম্মদ শামীম আজিজ এ প্রতিবেদন দাখিল করেন।

প্রতিবেদনে বিআইএফসির মতো অন্যান্য আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোতে লুটপাট বন্ধ ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে ৯ দফা সুপারিশ করা হয়েছে।

সুপারিশগুলো হলো:

১. বিআইএফসিতে সব অনিয়ম ও অবৈধ কর্মকাণ্ডের জন্য দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে

২. নন-ব্যাংকিং আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য বজায় রাখতে ও পাবলিক মানির ঝুঁকিবৃদ্ধি বন্ধে আন্তব্যাংক লেনদেন কার্যক্রম পরিচালনা পুরোপুরি পরিহার করার ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে

৩. আর্থিক প্রতিষ্ঠান আইন, ১৯৯৩-এর ১৮ ধারার বিধানমতে উল্লিখিত আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর-
(ক) নেওয়া আমানতের প্রদেয় সুদের সব্বোর্চ হার
(খ) কার কাছ থেকে কতো ঋণ গৃহীত হবে তার সর্বোচ্চ পরিমাণ
(গ) প্রদত্ত ঋণ পরিশোধের সর্বোচ্চ সময়সীমা
(ঘ) প্রদত্ত বিভিন্ন শ্রেণীর ঋণের সুদের সর্বোচ্চ হার ও হিসাব পদ্ধতি
(ঙ) ঋণ দেওয়ার সর্বোচ্চ সীমা
(চ) বাংলাদেশ ব্যাংকে রক্ষিত রিজার্ভ এবং
(ছ) আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর দায় পরিশোধের সক্ষমতার মতো যৌক্তিক পর্যায়ে ইক্যুইটি উন্নীত করাসহ জনস্বার্থে মুদ্রানীতির উন্নতি বিধানকল্পে অন্যান্য বিষয় নিয়ন্ত্রণে বাংলাদেশ ব্যাংককে অবিলম্বে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে

৪. আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর সুষ্ঠু তদারকির জন্য নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থা বাংলাদেশ ব্যাংক, আরজেএসসি, বিএসইসির মধ্যে কার্যকর সমন্বয় জোরদার করতে হবে

৫. আর্থিক প্রতিষ্ঠানের পরিচালক পর্ষদে পরিচালক নিয়োগের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদন অথবা অনাপত্তি গ্রহণে শর্তারোপ করা প্রয়োজন

৬. বহির্নিরীক্ষক ফার্মের জরিমানা কিংবা দণ্ড হওয়া মাত্রই সংশ্লিষ্ট ফার্মকে আর্থিক প্রতিষ্ঠানের নিরীক্ষা কার্যক্রম পরিচালনার যোগ্য ফার্মের তালিকা থেকে বাদ দিতে হবে

৭. বাংলাদেশ ব্যাংকের নথি ব্যবস্থাপনা ও সংরক্ষণ আধুনিকায়ন করতে হবে। এজন্য নথির নোটাংশ, পত্রাংশ ও অনুচ্ছেদে নাম্বারিং করতে হবে। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাকে চিহ্নিত করার সুবিধার্থে নথির নোট উপস্থাপনকারী হতে অনুমোদনকারী পর্যন্ত প্রত্যেককে স্বাক্ষরের সঙ্গে তার নামের সিল ব্যবহার বাধ্যতামূলক করতে হবে

৮. আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর ওপর কার্যকর তদারকি রাখার জন্য আর্থিক প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন বিভাগ এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও বাজার বিভাগের মধ্যে কার্যকর আন্তঃবিভাগীয় সমন্বয় গড়ে তুলতে হবে

এবং

৯. প্রতিবছর ভিজিলেন্স, অফসাইট সুপারভিশন ও মনিটরিংয়ে প্রাপ্ত তথ্য বিশ্লেষণে ঝুঁকি বিবেচনায় সংশ্লিষ্ট আর্থিক প্রতিষ্ঠানে বিশেষ পরিদর্শন কার্যক্রম পরিচালনার ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। অবশিষ্ট আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে দৈবচয়নের ভিত্তিতে প্রতিবছর কমপক্ষে একটিতে বিশেষ পরিদর্শন করতে হবে।

২০২০ সালের ১৭ ডিসেম্বর হাইকোর্টের আদেশ এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের আইনজীবী ব্যারিস্টার খান মোহাম্মদ শামীম আজিজের মতামতের ভিত্তিতে উচ্চ পর্যায়ের ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং কমিটি গঠন করা হয়।

বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর এ কে এম সাজেদুর রহমান খানকে চেয়ারম্যান করে করা ওই কমিটিতে ছিলেন ৭ জন সদস্য।