আলিয়া মাদরাসায় নিয়োগ বাণিজ্যের অভিযোগ
নিজস্ব প্রতিবেদক, বাঙলার কাগজ ও ডন; পটুয়াখালী : পটুয়াখালীর দশমিনা চরহোসনাবাদ ইসলামিয়া আলিম মাদরাসায় সরকারি বিধি বহির্ভূতভাবে গভর্নিং বডি গঠন করে নিয়োগ বাণিজ্যের অভিযোগ উঠেছে। ভুক্তভোগীদের অভিযোগের তদন্তে বেরিয়ে আসে অবৈধ কমিটি গঠনের মাধ্যমে নিয়োগে বাণিজ্যের চিত্র।
ভুক্তভোগী ও সংশ্লিষ্ট মাদরাসা সূত্রে জানা গেছে, ২০২০ সালের জানুয়ারির ২৩ তারিখ চরহোসনাবাদ ইসলামিয়া আলিম মাদরাসার উপাধ্যক্ষসহ মোট ৬টি পদে নিয়োগের জন্য বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করলেও নতুন করে মাদরাসার নবায়ণ না থাকা এবং ২০২০ সালের মার্চ মাসের ২৯ তারিখ কমিটির মেয়াদ শেষ হওয়ায় নিয়োগ প্রক্রিয়া স্থাগিত হয়ে যায়। ২০২০ সালে করোনা মহামারি দেখা দিলে সরকার সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের গভর্নিং বর্ডি ও ম্যানেজিং কমিটির নির্বাচন স্থগিত করেন।
দুই বছর পর বিধি বহির্ভূতভাবে নতুন কমিটি গঠন করেন। চলতি বছর ২৭ মার্চ মাদরাসা শিক্ষা বোর্ড থেকে অনুমোদন নিয়ে ৮ মে দ্বিতীয় দফায় নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেন। এবং আগস্ট মাসের ১৯ তারিখ নিয়োগ পরীক্ষা গ্রহণ করেন। নিয়োগ পরীক্ষা নির্ধারিত সময়ের ৩ ঘণ্টা পরে শুরু করেন। নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন শেষে ঐদিন ফলাফল প্রকাশ না করে অদৃশ্য কারণে ৫ দিন পরে ফলাফল প্রকাশ করেন।
এতে শাহাদৎ হোসেন, জামাল হোসেন, আলতাফ হোসেন ও আবু বকর মৃধা আগষ্ট মাসের ২৪ তারিখ ওই নিয়োগ পরীক্ষায় বাণিজ্য ও গভর্নিং বডির কমিটি গঠনে অনিয়ম হয়েছে উল্লেখ করে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মহিউদ্দিন আল হেলাল বরাবরে লিখিত অভিযোগ দাখিল করেন। অভিযোগের ভিত্তিতে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা জাফর আহমেদকে আহব্বায়ক করে তিন সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। ওই কমিটির তদন্ত প্রতিবেদনে বেরিয়ে আসে নিয়োগে বাণিজ্য ও কমিটি গঠনে অনিয়মের আসল চিত্র।
তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, নিয়োগ পরীক্ষায় আবেদনকারী শাহাদৎ হোসেন সোনালি ব্যাংকের পে-অর্ডারসহ আবেদন করলেও তাকে প্রবেশপত্র দেওয়া হয়নি। এ বিষয়ে শাহাদৎ মাদরাসার অধ্যক্ষ নুরে আলম সিদ্দিকী বলেন, তার আবেদন পাওয়া যায়নি। কিন্তু ব্যাংকে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, শাহাদাৎ হোসেনের পে-অর্ডারের টাকা মাদরাসার ব্যাংক হিসেবে কালেকশন করা হয়েছে।
এ ছাড়া আয়া পদে আবেদনকারী ইয়ানুর আক্তার নামের একজনের সঙ্গে অধ্যক্ষের চেক আদান প্রদান করার সত্যতা পাওয়া যায়। বিষয়টি অধ্যক্ষের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ভুক্তভোগী প্রার্থী তাকে জোর করে ৩ লাখ ৫০ হাজার টাকা দিয়ে যায়। নিরাপত্তার জন্য তিনি ব্যাংক হিসাবে জমা করে পরবর্তীতে দুটি চেকের মাধ্যমে রিটার্ন করেন। সরকারি পরিপত্র অনুযায়ী ৪ জন অভিভাবক ও একজন দাতা সদস্য মনোনীত হবেন।
এর মধ্যে দুই জনের সন্তান ঐ প্রতিষ্ঠানে না থাকলেও তাদেরকে অভিভাবক সদস্য নির্বাচন করেন। এবং বাকি দুই জনের সন্তান অন্য প্রতিষ্ঠানে পড়ালেখা করলেও অত্র মাদরাসায় কাগজে কলমে ভর্তি দেখিয়ে অভিভাবক সদস্য নির্বাচন করেন।
আবু বকর মৃধা ও আলতাফ হোসেন অভিযোগ করে বলেন, তারা ৮ জন রয়েছেন ঐ মাদরাসায় জমিদাতা ও ওয়ারিশ সূত্রে মালিক কিন্তু মাদরাসার অধ্যক্ষ কাউকে না জানিয়ে নিজের সুবিধা মতো জমিদাতা সাজিয়ে আশরাফ আলী হাওলাদার নামের একজনকে গোপনে জমিদাতা বানিয়ে কমিটি গঠন করেন।
অভিযোগকারী শাহাদৎ হোসেন বাঙলার কাগজ ও ডনকে বলেন, ‘মাদরাসার অধ্যক্ষ নুরে আলম সিদ্দিকী বিধি বহির্ভূতভাবে নিজের স্বার্থ হাসিলের জন্য পরিপত্রের তোয়াক্কা না করে নিয়োগ বাণিজ্যের জন্য অবৈধভাবে অভিভাবক সদস্য ও দাতা সদস্য নির্বাচন করে গভর্নিং বডি গঠন করেন। অবৈধভাবে তৈরি করা গভর্নিং বডি বাতিল করে পুনরায় বিধি মোতাবেগ কমিটি গঠন করে মেধার ভিত্তিতে নিয়োগ দেওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করছি।’
মাদরাসার অধ্যক্ষ নুরে আলম সিদ্দিকী বাঙলার কাগজ ও ডনকে বলেন, ‘বিধি মোতাবেক ম্যানেজিং কমিটি গঠন করে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এখানে কোনো বাণিজ্য হয় নি। এবং সঠিক নিয়ম মেনে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।’
তদন্ত কমিটির আহবায়ক উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা জাফার আহমেদ বাঙলার কাগজ ও ডনকে বলেন, ‘অভিযোগের বিষয়ে আমাদের সার্বিক তদন্তে অধিকাংশই প্রাথমিকভাবে সত্যতা পাওয়া গেছে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মহিউদ্দিন আল হেলাল বাঙলার কাগজ ও ডনকে বলেন, নিয়োগে বাণিজ্য ও কমিটি গঠনে অনিয়মের বিষয়ে অধিকাংশ সত্যতা তদন্তে পাওয়া গেছে। এ বিষয়ে আমি ডিসি স্যার ও ডিজি মহোদয়ের কাছে গভর্নিং বডি বাতিল করে পুনরায় নিয়োগের জন্য সুপারিশ পাঠিয়েছি। এবং মৌখিকভাবেও বলবো।