অমিতোষ পাল’র লেখা : মনে পড়ে যায় জামিলুর রেজা চৌধুরীর কথা।

অমিতোষ পাল’র লেখা : মনে পড়ে যায় জামিলুর রেজা চৌধুরীর কথা।

উপ-সম্পাদকীয় মত : অন্য দেশের নদীর তলদেশের মাটি আর বাংলাদেশের নদী তলদেশের মাটির ধরন ও প্রকৃতি আলাদা। নদীর চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যেও রয়েছে ভিন্নতা। পদ্মা সেতু তৈরির ক্ষেত্রে এটাই বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছিলো। সেই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় তখন দেশি-বিদেশি প্রকৌশলীদের সমন্বয়ে গঠন করা হয় একটি বিশেষজ্ঞ কমিটি। সেই কমিটির মূল সমন্বয়ক ছিলেন জাতীয় অধ্যাপক জামিলুর রেজা চৌধুরী। বিশিষ্ট এই প্রকৌশলী এখন আর বেঁচে নেই। জামিলুর রেজার পরামর্শে পাইলিংয়ের গোড়ার পলিমাটির সঙ্গে মিহিদানার সিমেন্টের মিশ্রণ তৈরি করে তরল পলিমাটিকে শক্ত করা হয়। এরপর সেখানে হয় পাইলিং। যেখানে প্রতিটি খুঁটির (পিলার) নিচে ছয়টি পাইলিং করার কথা, সেখানে বিশেষজ্ঞ কমিটির পরামর্শে এক পিলারের নিচে বসে ১৬টি পর্যন্ত পাইল। সেই খুঁটির ওপর এখন দাঁড়িয়েছে পদ্মা সেতু।

পদ্মা সেতু তৈরিতে যেসব প্রকৌশলী ভূমিকা রেখেছেন, তাঁদের মধ্যে উজ্জ্বল দ্যুতি ছড়াবেন অধ্যাপক জামিলুর রেজা চৌধুরী। তাঁর স্ত্রী সেলিনা নওরোজ চৌধুরী এমি বলেন, ‘ওর (জামিলুর) স্বপ্নের সেতু তৈরিতে একটি চ্যালেঞ্জ ছিলো। যখন বিদেশিরা চলে গেলো, তখন ও বললো, পারবো। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একদিন ওকে জিজ্ঞেস করলো। তখন ও বলল না পারার কিছু নেই। ও আগে যমুনা সেতুতে কাজ করেছে। বিদেশিরা করলে লোকজন মনে করে, ওরা না যেনো কি। ও বলতো, এসব করার ক্ষমতা আমাদেরও আছে। মাঝেমধ্যেই ও খুব সকালে চলে যেতো সেতুর কাজ দেখতে। কোনও দিন গভীর রাতে ফিরতো। কখনও পরদিন ফিরতো। ওর তো হার্টে বাইপাস অপারেশন হয়েছিলো। ও ঘুমের মধ্যেই চলে গেছে। ও অতো কাজ না করলে হয়তো আরও কিছুদিন বাঁচতো। এখন পদ্মা সেতু যখন চালু হচ্ছে, তখন শুধু ওর কথাই মনে পড়ছে। কিছুদিন হয়তো মানুষ ওর কথা মনে রাখবে, একদিন আবার ভুলে যাবে।’

একটি সেতুর প্রথম ও মূল কাজ পাইলিং। ২০১৫ সালের পহেলা মার্চ মাওয়া প্রান্তে আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয় সেতুর পাইলিং। সাধারণত মাটির গভীরে যেখানে পাথর বা শক্ত মাটির স্তর পাওয়া যায়, সে পর্যন্ত গভীরতায় পাইলিং করা হয়। শুরুতে পরিকল্পনামতো গভীরতায় গিয়েও মাটি নরম পাওয়ায় পাইল বসানোর কাজ বন্ধ হয়ে যায়। মাওয়ায় নরম মাটি পাওয়ার পর অন্য পাইলের জন্য নির্দিষ্ট স্থানে পরীক্ষা-নিরীক্ষা শুরু করে কর্তৃপক্ষ। একপর্যায়ে দেখা যায়, আরও ১২টি পিলারের নিচে নরম মাটি আছে। অর্থাৎ সবমিলিয়ে ১৪টি পিলারের নিচে পাইলিং নিয়ে নতুন করে বেকায়দায় পড়ে কর্তৃপক্ষ।

এ সমস্যা সমাধানে যুক্তরাজ্যের ‘কাউই’ নামের একটি পরামর্শক প্রতিষ্ঠানকে দায়িত্ব দেওয়া হয়। সেই প্রতিষ্ঠানের গঠন করা বিশেষজ্ঞ কমিটির নেতৃত্বে ও কার্যক্রম পর্যবেক্ষণের দায়িত্বে ছিলেন অধ্যাপক ড. জামিলুর রেজা চৌধুরী।

* লেখাটি সমকাল থেকে নেওয়া।