অনিয়মের তথ্য প্রকাশিত হওয়ায় শোকজ হচ্ছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মীরা!

অনিয়মের তথ্য প্রকাশিত হওয়ায় শোকজ হচ্ছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মীরা!

নিজস্ব প্রতিবেদন, বাঙলার কাগজ : ব্যাংক খাতের অনিয়ম ও অসঙ্গতি নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের পর্যবেক্ষণ সংক্রান্ত কোনও সংবাদ গণমাধ্যমে প্রকাশিত হলেই সংশ্লিষ্ট বিভাগের কর্মকর্তা‌রা শোকজের (কারণ দর্শানোর নোটিশ) মুখে পড়ছেন। শুধু তাই নয়, বিভিন্নভাবে মান‌সিক চাপ সৃ‌ষ্টির পাশাপাশি দেওয়া হচ্ছে বদলি ও চাকরি থেকে বহিষ্কারের হুমকিও।

এতে আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন ব্যাংক খাতের নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রমের সংশ্লিষ্ট কর্মীরা। ভয় আর আতঙ্কে এখন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অনেক কর্মকর্তা সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলছেন না। 

জানা গেছে, প্রভাবশালী গোষ্ঠীর প্রভাবে বাংলাদেশ ব্যাংকের উচ্চপদস্থ ব্যক্তিরা এ ধরনের শোকজের পেছনে রয়েছেন।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে এ ধরনের ব্যবস্থা নেওয়ার কথা আগে শুনি নি। কিছু প্রভাবশালী গোষ্ঠীর প্রভাবে বাংলাদেশ ব্যাংকের উচ্চপদস্থ ব্যক্তিরা এ ধরনের পদক্ষেপ নিতে পারে; তা কোনোভাবেই কাম্য নয়। এ ধরনের আচরণ দেশ ও দেশের অর্থনীতির জন্য ভালো হবে না।

সার্বিক ব্যাপারে জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র সিরাজুল ইসলাম বাঙলার কাগজ ও ডনকে বলেন, ‘কর্মকর্তাদের কেনো এমন নোটিশ দেওয়া হচ্ছে, তা আমি জানি না। তবে এটা সত্য কোনও ব্যাংকের বিষয়ে কোনও সিদ্ধান্ত হলে, তার তথ্য ওই ব্যাংক থেকে প্রকাশ হতে পারে।’

সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ কমে যাওয়া, কয়েকটি ব্যাংকের প্রকৃত খেলাপিঋণ আড়াল ও ডলার কারসাজি নিয়ে বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর বিরুদ্ধে বিভিন্ন গণমাধ্যমে বেশকিছু সংবাদ প্রকাশিত হয়। এসব অনিয়মের সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিয়ে উল্টো খবরের তথ্য কোথায় থেকে এলো, এ নিয়ে ওই সংবাদের সংশ্লিষ্ট বিভাগের কর্মীদের শোকজ করা হচ্ছে।

এরই মধ্যে ডিপার্টমেন্ট অব অফসাইট সুপারভিশন, ব্যাংক পরিদর্শন, ব্যাংকিং প্রবিধি ও নীতি বিভাগ, ফরেক্স রিজার্ভ ও ট্রেজারি ম্যানেজমেন্ট এবং অ্যাকাউন্টস অ্যান্ড বাজেটিং ডিপার্টমেন্টের উপ-পরিচালক থেকে পরিচালক পর্যন্ত বিভিন্ন পর্যায়ের প্রায় ১০ কর্মকর্তাকে শোকজ করা হয়েছে। 

এ ছাড়া নির্বাহী পরিচালক পদমর্যাদার তিন কর্মকর্তাকেও শাসানোর মতো ঘটনা ঘটেছে।

জানা গেছে, ডেপুটি গভর্নর কাজী সাইদুর রহমান বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কেলেঙ্কারির সময় সংশ্লিষ্ট বিভাগের দায়িত্বে ছিলেন। ডেপুটি গভর্নর হিসেবে যোগদানের পরপরই সরকারি-বেসরকারি ব্যাংকে বিভিন্ন বিষয়ে সরাসরি হস্তক্ষেপের বিস্তর অভিযোগ রয়েছে তাঁর বিরুদ্ধে। সাম্প্রতিক সময়ে দায়িত্বে নেই এমন সব বিভাগের সিদ্ধান্তে হস্তক্ষেপ করাও শুরু করেছেন তিনি। এতে করে অন্যান্য ডেপুটি গভর্নরেরা বিব্রত।

এ ব্যাপারে জানতে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে কাজী সাইদুর রহমান কোনও মন্তব্য করতে রাজি হন নি।

আরও অভিযোগ পাওয়া গেছে, কাজী সাইদুর রহমানের এমন একপেশী আচরণে অনেকে হতভম্ব। কারণ তিনি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মানব সম্পদ উন্নয়ন (এইচআরডি) বিভাগের দায়িত্বে আছেন। কেউ কোনও কথা বললেই তাঁর পদোন্নতি আটকে দেবেন বলেও হুমকি দিচ্ছেন তিনি। 

এ ছাড়া তাঁর নির্দেশেই কয়েকটি বিভাগে বিনা নোটিশে সাংবাদিকদের প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। যদিও এর আগে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নতুন গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার আসার পর প্রথমে সাংবাদিকদের প্রবেশের সময়সীমা নির্ধারণ করে দেওয়া হয়। এর প্রতিবাদে ব্যাংক বিটের সাংবাদিকেরা গভর্নরের একটি প্রোগ্রাম বয়কট করেন। পরে সময়সীমা প্রত্যাহার করতে বাধ্য হন আব্দুর রউফ তালুকদার।