অগ্রণী ব্যাংকের সাবেক এমডি শামস্‌-উলের বিরুদ্ধে প্রকাশ পাচ্ছে কর্মকর্তাদের ক্ষোভ

অগ্রণী ব্যাংকের সাবেক এমডি শামস্‌-উলের বিরুদ্ধে প্রকাশ পাচ্ছে কর্মকর্তাদের ক্ষোভ

নিজস্ব প্রতিবেদন, বাঙলার কাগজ : রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন বাণিজ্যিক খাতের অগ্রণী ব্যাংকের সদ্য সাবেক হওয়া ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মোহাম্মদ শামস্‌-উল ইসলামের বিরুদ্ধে ব্যাংকটির কর্মকর্তাদের ক্ষোভ প্রকাশ পাচ্ছে। এক্ষেত্রে দীর্ঘদিন ধরে পদোন্নতি পান নি, এমন কর্মকর্তারাই বিষয়গুলো সামনে আনছেন।

জানার জন্য রোববার (২৩ অক্টোবর) দুপুরে অগ্রণী ব্যাংকের সদ্য সাবেক হওয়া ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ শামস্‌-উল ইসলামের মুঠোফোনে খুদে বার্তা পাঠিয়ে ফোন দেওয়া হয়। কিন্তু তিনি ফোন রিসিভ করেন নি। 

জানা গেছে, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ২০১০, ২০১১, ২০১২, ২০১৩, ২০১৪ ও ২০১৫ সালে অগ্রণী ব্যাংকের সেবা বৃদ্ধির জন্য অফিসার ও জ্যেষ্ঠ অফিসার পদে নিয়োগ দেওয়া হয়। ব্যাংকটির মুনাফাও হচ্ছিলো আশান্বিতভাবে। কিন্তু সেই গতির পথে ‘অন্তরায় হয়ে দাঁড়ায়’ ২০১৬ সালে নিয়োগ পাওয়া অগ্রণী ব্যাংকের সদ্য সাবেক হওয়া এমডি ও সিইও মোহাম্মদ শামস্‌-উল ইসলাম। তিনি নিয়োগ পাওয়ার পর থেকে কর্মকর্তাদের বিভিন্ন পদের পদোন্নতিতে জটিলতা তৈরি হয়। যা দাবি করছেন ব্যাংকটির কর্মকর্তারা। 

বাংলাদেশ ব্যাংক ও অগ্রণী ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, চাকরির নীতিমালা অনুযায়ী অফিসার পদ থেকে ৩ বছরের মধ্যে জ্যেষ্ঠ অফিসারের পদোন্নতি হওয়ার কথা। কিন্ত তা দীর্ঘ ১০ বছরেও হচ্ছে না। জ্যেষ্ঠ অফিসার থেকে প্রিন্সিপাল অফিসার এবং প্রিন্সিপাল হতে জ্যেষ্ঠ প্রিন্সিপাল হতে ৩ বছর সময় লাগে। অথচ ৭ থেকে ৮ বছর অতিবাহিত হলেও কোনও পদোন্নতি হচ্ছে না। এসব পদোন্নতির জটিলতা নিরসনের জন্য সুপারনিউমারারি পদোন্নতির দাবিতে সাবেক এমডি শামস্‌-উল ইসলামের শেষ কর্মদিবসে গত ২৩ আগস্ট পদোন্নতি না পাওয়া কর্মকর্তারা কয়েক ঘণ্টা তাঁকে অবরোধ করে রাখেন। এ সময় এমডি মোহাম্মদ শামস্‌-উল ইসলামকে উদ্ধার করতে ব্যাংকটির বর্তমান চেয়ারম্যান জায়েদ বখত, পরিচালক কাশেম হুমায়ুন, জি এম ফজলুল হক, সিবিএ সভাপিত খন্দকার নজরুল ইসলাম ও সাধারণ সম্পাদক  জয়নাল আবেদিনসহ কয়েক শ কর্মকর্তার সামনে প্রতিশ্রুতি দেন। তাঁরা বলেন, ৩১ আগস্টের মধ্যে সুপারনিউমারারি আকারে পদোন্নতির সকল কাজ সম্পূর্ণ করা হবে এবং ৫ সেপ্টেম্বরের মধ্যে বোর্ড মিটিংয়ে পদোন্নতির মেমো পাশ করা হবে। 

সাবেক এমডি মোহাম্মদ শামস্‌-উল ইসলামকে অবরুদ্ধ করে চেয়ারম্যান জায়েদ বখতের কাছে বঞ্চিত অফিসারেরা প্রতিশ্রুতির গ্যারান্টি চান। তখন চেয়ারম্যান বলেন, এই প্রতিশ্রুতি আমি রক্ষা করবো, আর যদি প্রতিশ্রুতি রক্ষা করতে না পারি, ৫ সেপ্টেম্বরের পর আমি জায়েদ বখত পদত্যাগ করবো।

অগ্রণী ব্যাংকের এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা বলেন, ‘নিয়োগ পাওয়ার পর থেকেই  দ্বিতীয়বার মেয়াদ বৃদ্ধি করতে প্রভাবশালী মহলে তদবিরে ব্যস্ত ছিলেন সাবেক এমডি। তিনি আমাদের কথা ভাবেন নি। আমাদের বিনীত আবেদন, চেয়ারম্যান স্যারের নেতৃত্বে আমাদের পরিচালক স্যাররা অচিরেই আমাদের সুপারনিউমারারি পদোন্নতি দিবেন বলে মনেপ্রাণে বিশ্বাস করি।’ 

এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বাঙলার কাগজকে বলেন, আমাদের ব্যাংকে অফিসারের পদোন্নতি হয় ৪১ জন। আর এজিএম পদোন্নতি হয় ১৫০ জন। যা হাস্যকর ছাড়া আর কিছুই নয়। আমাদের পিঠ দেয়ালে ঠেকে গেছে। 

অগ্রণী ব্যাংক স্বাধীনতা ব্যাংকার্স পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মাহফুজুর রহমান জুয়েল বাঙলার কাগজকে বলেন, ইতোমধ্যে আমরা সুপারনিউমারারি পদোন্নতির জন্য স্বাধীনতা ব্যাংকার্সের পক্ষ থেকে লিখিতভাবে আবেদন করেছি। আশা করি, চেয়ারম্যান স্যার তাঁর প্রতিশ্রুতি রক্ষা করবেন। দীর্ঘদিন পদোন্নতি না পেয়ে অফিসারদের মধ্যে চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে। এই পদোন্নতি না দেওয়া হলে আমাদের ব্যাংক ক্ষতির সম্মুখীন হবে। কারণ কর্মকর্তারা তখন স্বাভাবিকভাবে তাঁদের কাজগুলো ঠিকভাবে করবেন না।

অগ্রণী ব্যাংক স্বাধীনতা ব্যাংকার্স পরিষদের সভাপতি জাকির হোসেন বাঙলার কাগজকে বলেন, জননেত্রী শেখ হাসিনার হাতকে শক্তিশালী করতে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। একটি মহল ষড়যন্ত্র করে সরকারের বদনাম করতে এই পদোন্নতি দিচ্ছে না। কারণ এই অফিসাররা আগামী নির্বাচনে দায়িত্বে থাকবে। অফিসারদের চটালে সরকার বিরোধী মনোভাব হবে। যাতে বিএনপি-জামায়াত নির্বাচনে অনৈতিক সুবিধা নিতে পারে। এমনই একটা ষড়ষন্ত্রের গন্ধ পাচ্ছি। আমরা বঙ্গবন্ধুর সৈনিক হয়ে এমন হতে দিতে পারি না। 

অফিসার সমিতির জ্যেষ্ঠ সহ-সভাপতি নাজমা বেগম বাঙলার কাগজকে বলেন, আমরা অফিসার সমিতির পক্ষ থেকে সুপারনিউমারারি পদোন্নতির দেওয়ার জন্য এমডি স্যার বরাবর লিখিত আবেদন করেছিলাম। কর্তৃপক্ষ এখনও আমাদের আবেদনে সাড়া দেয় নি। আশা করি, অচিরেই তাঁরা আমাদের আবদনে সাড়া দেবেন। 

এ ব্যাপারে অগ্রণী ব্যাংকের সিবিএ’র সভাপতি খন্দকার নজরুল ইসলাম বাঙলার কাগজকে বলেন, অগ্রণী ব্যাংকের সুপারনিউমারারি পদে পদোন্নতি সোনালী ব্যাংকের আদলে হলে দীর্ঘদিনের জটিলতা কাটিয়ে উঠা সম্ভব। ইতোমধ্যে বোর্ড এ বিষয়ে নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আশা করি, কর্তৃপক্ষ দ্রুত এ সমস্যাটির সমাধান করবেন। 

জানতে চাইলে নাম প্রকাশ না করার শর্তে অগ্রণী ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের একজন সদস্য বাঙলার কাগজকে বলেন, সুপারনিউমারারি পদোন্নতি দেওয়ার পক্ষে আমাদের সবাই। আশা করি, এ মাসের মধ্যেই সুপারনিউমারারি পদোন্নতি হতে পারে। তাহলেই দীর্ঘদিনের পদোন্নতির জটিলতা নিরসন হবে। হাসি মুখে অফিসারা কাজ করলে ব্যাংক অনেক মুনাফা করবে।