৪ বার হজে গিয়ে ভিক্ষা করে কোটিপতি মতিয়ার!

৪ বার হজে গিয়ে ভিক্ষা করে কোটিপতি মতিয়ার!

নিজস্ব সংবাদদাতা, বাঙলা কাগজ; মেহেরপুর : হজে গিয়ে ভিক্ষা করার সময় সৌদি পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হওয়া বাংলাদেশি মতিয়ার রহমান ছিলেন ডাকাত দলের সরদার।

শীর্ষ এই ডাকাত মেহেরপুরের গাংনী উপজেলার সিন্দুরকৌটা গ্রামের ঘাটপাড়া এলাকার। ২০ বছর আগে গাংনী উপজেলার জোড়পুকুরিয়া-চেংগাড়ার মাঝে চোখতোলা নামক স্থানে বোমা বানাতে গিয়ে দুই হাতেরই কবজি উড়ে যায় তার।

এরপর হজে গিয়ে শুরু করেন ভিক্ষাবৃত্তি। ধীরে ধীরে হজের নামে ভিক্ষাকেই পেশা হিসেবে বেছে নেন তিনি।

হজে অনেকে টাকা খরচ করে গেলেও মতিয়ার ভিক্ষা করে উল্টো টাকা জমিয়েছেন, কিনেছেন জমি। বর্তমানে তার ২০ বিঘা জমি রয়েছে বলেই জানায় এলাকাবাসী।

জানা গেছে, গত ২২ জুন ভিক্ষা করার সময় মদিনা পুলিশ তাকে আটক করে। ওই সময় মতিয়ার মিথ্যা বলেছিলেন পুলিশকে। তিনি বলছিলেন, তার মানিব্যাগটি ছিনতাই হয়ে গেছে। তার হাতে কোনও টাকা-পয়সা না থাকায় তিনি ভিক্ষায় নেমেছেন। পুলিশের সন্দেহ হলে তাকে আটক করে স্থানীয় থানায় নেওয়া হয়। পরে বিষয়টি জানাজানি হলে বাংলাদেশ হজ মিশনের হস্তক্ষেপে মুচলেকা দিয়ে ছাড়া পান মতিয়ার।

মেহেরপুরের গাংনী থানার পুলিশ জানায়, বর্তমানে তার বিরুদ্ধে দুটি মামলা চলমান রয়েছে। সৌদি আরবে ভিক্ষা করে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি নষ্ট করা মতিয়ারের পিতার নাম হারুন রশিদ।

এলাকাবাসী জানায়, প্রায় ২০ বছর আগে গাংনী উপজেলার জোড়পুকুরিয়া-চেংগাড়ার মাঝে চোখতোলা নামক এলাকায় বোমা বানাতে গিয়ে তার দুই হাতের কবজি উড়ে যায়। পরে হাতের অবস্থার অবনতি হলে ডাক্তার তার দুটি হাত কেটে ফেলেন। বিভিন্ন মামলায় তিনি বেশ কিছুদিন জেলও খেটেছেন। এরপর থেকেই এই শীর্ষ সন্ত্রাসী পথে পথে ঘুরে বেড়িয়েছেন। অনেক সময় ডাকাতিও করেছেন। তিনি এলাকায় মন্টু ডাকাত নামে পরিচিত।

সৌদি আরবে পুলিশের হাতে আটক হওয়ার পর খবরটি এলাকায় পৌঁছালে সমালোচনার ঝড় উঠে।

জানা গেছে, ঠিকমতো খাবার জোটাতে পারতেন না মতিয়ার। হাত হারানোর পর শুরু হয় মতিয়ারের হজ ব্যবসা। প্রতিবারই হজের নামে সৌদি আরবে গিয়ে সৌদির পথে পথে ভিক্ষাবৃত্তি করে মোটা অঙ্কের টাকা নিয়ে বাড়ি ফেরেন। এভাবে কয়েক বছরে তিনি ২০ বিঘা জমি কিনেছেন।

মতিয়ার রহমানের স্ত্রী মমতাজ খাতুন বলেন, ‘আমার স্বামী প্রতিবারই হজে যান এবং মোটা অঙ্কের টাকা নিয়ে দেশে আসেন। আমি তো তাঁকে জিজ্ঞেস করেছি। কিন্তু তিনি কখনও আমাদেরকে বলেন নি। এখন শুনছি সেখানে গিয়ে ভিক্ষা করেন তিনি।’

এ বিষয়ে কাউন্সিলর (হজ) জহুরুল ইসলাম বাঙলা কাগজ ও ডনকে জানান, মতিয়ার ধানসিঁড়ি ট্র্যাভেল এজেন্সির মাধ্যমে হজ করতে সৌদি যান। তবে বিভিন্ন পত্রিকার বরাতে জানা গেছে, তিনি সৌদিতে কোনও হোটেল বুক করেন নি। তাকে গাইড করার মতো কোনও মোয়াল্লেমও ছিলো না।

স্থানীয় মটমুড়া ইউনিয়নের ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য ফারুক হোসেন বাঙলা কাগজ ও ডনকে জানান, প্রতিবছরই মতিয়ার রহমান হজে যান। এ পর্যন্ত তিনি চারবার হজে গেছেন। কিন্তু হজে গিয়ে তিনি ভিক্ষাবৃত্তি করেন এটি কেউ জানতো না। বিভিন্ন গণমাধ্যম থেকে তার আটক হওয়ার বিষয়টি জানতে পারি।

গাংনী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মৌসুমী খানম বাঙলা কাগজ ও ডনকে জানান, বিষয়টি আমরা জানতে পেরেছি। ওই ব্যক্তির পরিচয় সম্পর্কেও নিশ্চিত হয়েছি। ইতিমধ্যে তদন্ত শুরু হয়েছে। মতিয়ার দেশে ফিরলে তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।