২০০৫-১৪ সাল পর্যন্ত লুটপাট করেন বিকল্পধারার মহাসচিব

২০০৫-১৪ সাল পর্যন্ত লুটপাট করেন বিকল্পধারার মহাসচিব

নিজস্ব প্রতিবেদন, বাঙলার কাগজ ও ডন : বাংলাদেশ ইন্ডাস্ট্রিয়াল ফাইন্যান্স কোম্পানি লিমিটেড (বিআইএফসি) নিয়ন্ত্রণে রেখে প্রায় ৬ শ কোটি টাকা জামানতবিহীন ঋণ নিয়েছেন বিকল্পধারার মহাসচিব মেজর (অবসর) আব্দুল মান্নান। তিনি তাঁর আত্মীয়স্বজন ও স্বার্থসংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের নামে ২০০৫ থেকে ২০১৪ সালের মধ্যে এসব ঋণ নিয়েছেন বলে হাইকোর্টের নির্দেশে পরিচালিত তদন্ত প্রতিবেদনে উঠে এসেছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিআইএফসির পরিচালনা পর্ষদের সদস্য এবং ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তাদের দায় এবং মেজর (অবসর) মান্নানের একক উদ্যোগেই বিআইএফসি গঠিত হয়। প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই প্রতিষ্ঠানটি তাঁর একক নিয়ন্ত্রণে পরিচালিত হয়ে আসছিলো। প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক হিসেবে দুজন বিদেশির নাম থাকলেও তাঁরা ২০১৬ সাল পর্যন্ত কোনও সভায় অংশ নেন নি।

বিদেশি প্রতিষ্ঠানগুলোর বিকল্প পরিচালক হিসেবে মেজর (অবসর) আব্দুল মান্নান এবং তাঁর স্ত্রী উম্মে কুলসুম মান্নান ছিলেন। অন্য পরিচালকদের মধ্যে মান্নানের দুই মেয়ে তানজিলা মান্নান ও তাজরিনা মান্নান, উম্মে কুলসুম মান্নান এর বড় বোনের স্বামী গোলাম কবির, পরিচালক রইস উদ্দিন আহমেদ ও মহিউদ্দিন আহমেদ মান্নানের শ্যালক রয়েছেন। মান্নানের ভগ্নিপতি এ এন এম জাহাঙ্গীর আলম, স্বতন্ত্র পরিচালক রোকেয়া ফেরদৌস, লে. জেনারেল (অবসর) মোল্লা ফজলে আকবর, আব্বাস উদ্দিন আহমেদ, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অবসর) খালেদ এ করিম ও মো. আরশাদ উল্লাহ। তাঁরা সবাই মেজর (অবসর) মান্নানের স্বার্থসংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা ছিলেন।

বিআইএফসি গঠনের পর থেকে ২০১৬ সালের ৯ মার্চ পর্যন্ত পরিচালনা পর্ষদে যাঁরা পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন, তাঁরা সবাই মেজর (অবসর) মান্নানের আত্মীয়স্বজন ও তাঁর স্বার্থসংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা। মেজর (অবসর) মান্নানের স্বার্থসংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের নামে-বেনামে ২০০৫ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত ৬৭টি ঋণ হিসাবের বিপরীতে ৫১৭ দশমিক ৬৩ কোটি টাকা নিয়েছে।

পর্ষদের অবৈধ প্রভাবে ঋণসমূহ অনুমোদনের পর বাংলাদেশ ব্যাংকের চেক এবং বিভিন্ন বাণিজ্যিক ব্যাংকের ইস্যুকৃত চেক ব্যবহার করে লেয়ারিংয়ের মাধ্যমে মান্নানের স্বার্থসংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানে স্থানান্তর করেছেন।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছেন, আর্থিক প্রতিষ্ঠান আইনের বিধিবিধান লঙ্ঘন করে পরিচালকের অনুকূলে বিএফআইসির মূলধন ও রিজার্ভের ১০ শতাংশের বেশি ও স্বার্থসংশ্লিষ্ট পরিচালকের নিজ নামে ধারণকৃত শেয়ারের ৫০ শতাংশের বেশি এবং বিনা জামানতে এসব ঋণ মঞ্জুর ও বিতরণ করা হয়েছে।

এক্ষেত্রে ঋণ অনুমোদনের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংকের সার্কুলার অনুযায়ী সিআইবি রিপোর্ট যাচাই করা হয় নি। ঋণ বিতরণের পর যথাসময়ে সিআইবিতে রিপোর্টও করা হয় নি। ঋণ অনুমোদনের ক্ষেত্রে গ্রাহকের ঋণ পরিশোধের সক্ষমতা পরীক্ষা করা হয় নি। খুবই অপ্রতুল তথ্যের মাধ্যমে মেমো প্রস্তুতপূর্বক পর্ষদে উপস্থাপন করে ঋণগুলো অনুমোদন করা হয়েছে।

অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ঋণগ্রহীতা প্রতিষ্ঠানের মালিক, পরিচালকের নাম পরিচয় গোপন করা হয়েছে। শুরু থেকে বিআইএফসির পরিচালক পর্ষদ গঠনে ওপরে বর্ণিত অনিয়মসমূহের মাধ্যমে মেজর (অবসর) মান্নানের একচ্ছত্র নিয়ন্ত্রণ ছিলো।

প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৫ সালে হঠাৎ করেই প্রতিষ্ঠানটিতে একটি বিশেষ পরিদর্শন হয়। কার স্বার্থে কী উদ্দেশ্যে ওই পরিদর্শন, তা তদন্ত কমিটির বোধগম্য নয়। পরিদর্শনের পরে মেজর (অবসর) মান্নানের স্বার্থসংশ্লিষ্ট পরিচালকদের বরখাস্ত করা হয়। এরপর বিতর্কিত পি কে হালদারের স্বার্থ রক্ষাকারী গোষ্ঠী বিএফআইসির পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণ নেয় ২০১৭ সালের দিকে। এরপর জরাগ্রস্ত প্রতিষ্ঠানটি থেকে লুটপাটের চেষ্টা করেও আর পারে নি।

রুহুল আমিন চেয়ারম্যান থাকাকালে সুকুজা-কাঞ্চি ভেঞ্চারের নিয়ন্ত্রিত বিআইএফসি পর্ষদ বাংলাদেশ ব্যাংক হতে বিনা সুদে ৮ শ কোটি টাকা বের করার অপচেষ্টা চালায় ২০১৭ সালে। যা বাংলাদেশ ব্যাংকের সিনিয়র ম্যানেজমেন্ট টিমের সভায় নাকচ হয়। এর ফলে পরবর্তী গ্রুপ প্রতিষ্ঠানটিতে ঢুকতে পারলেও কোনও ফায়দা লুটতে পারে নি বলে প্রতিবেদনের ভাষ্য।