সহসাই যুদ্ধ শেষের আশা : তথ্যমন্ত্রীকে রাশিয়ার রাষ্ট্রদূত

সহসাই যুদ্ধ শেষের আশা : তথ্যমন্ত্রীকে রাশিয়ার রাষ্ট্রদূত

বাসস : ইউক্রেন যুদ্ধ সহসাই সমাপ্ত হবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন বাংলাদেশে নিযুক্ত রাশিয়ার রাষ্ট্রদূত আলেকজান্ডার ভিকেন্তিয়েভিচ ম্যানতিতস্কি।

বুধবার (২ নভেম্বর) দুপুরে সচিবালয়ে তথ্যমন্ত্রী এবং বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহ্‌মুদ তাঁর সঙ্গে রাশিয়ার রাষ্ট্রদূতের সাক্ষাৎ শেষে সাংবাদিকদেরকে এ কথা জানান। 

মন্ত্রী বলেন, ‘আমি রাষ্ট্রদূতকে বলেছি, রাশিয়া আমাদের পরীক্ষিত বন্ধু। মুক্তিযুদ্ধের সময় রাশিয়ার যে ভূমিকা, এমন কি মুুক্তিযুদ্ধের পরেও রাশিয়া আমাদের দেশ গঠনে যে ভূমিকা রেখেছে, সেটি আমি স্মরণ করেছি, তাঁকে ধন্যবাদ জানিয়েছি। একইসঙ্গে যুদ্ধ সম্পর্কে আমাদের দেশের যে অবস্থান, সেটিও তার সঙ্গে আলোচনা করেছি।’

ড. হাছান বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন যে, আমরা পৃথিবীতে যুদ্ধ চাই না, যুদ্ধ কারও জন্য মঙ্গল বয়ে আনে না। এবং একইসঙ্গে স্যাংশন (নিষেধাজ্ঞা), পাল্টা স্যাংশন এগুলোও কারো জন্য মঙ্গল বয়ে আনে না। প্রধানমন্ত্রীর যে বক্তব্য, আমাদের সরকারের যে অবস্থান, সেটি তাঁকে জানিয়েছি। আমি তাঁকে বলেছি যে, যুদ্ধ তাড়াতাড়ি শেষ হলে সবার জন্যই মঙ্গলকর,  জিজ্ঞেস করেছি যে, যুদ্ধ কখন শেষ হবে। তিনি বলেছেন, আশা করি, খুব সহসা যুদ্ধ সমাপ্ত হবে। তিনি আশার কথা বলেছেন।’ 

মন্ত্রী আরও জানান, এ ছাড়াও ২০১৭ সালে বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থা (বাসস) ও রাশিয়ার ইতারতাসের মধ্যে সংবাদ আদান-প্রদানের জন্য একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়েছিলো। সেটিকে চুক্তিতে রূপান্তরের জন্য তিনি প্রস্তাব রেখেছেন। রাশিয়ার অপর সংবাদ সংস্থা স্পুৎনিকের সঙ্গেও আমাদের বাসসের সংবাদ আদান-প্রদানের প্রস্তাবনা দিয়েছেন। পাশাপাশি আমাদের দেশের টিভি চ্যানেলগুলোতে অনেক দেশের সিরিয়াল চলে, সেখানে রাশিয়ার সিরিয়ালও বিবেচনায় নেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছেন তিনি।

তথ্যমন্ত্রী বলেন, আমি বলেছি, আপনারা প্রাইভেট টেলিভিশন চ্যানেলে প্রস্তাব রাখতে পারেন, তাঁরা যদি আগ্রহী হয়, তাহলে সেটা হতে পারে। একটি টিভি চ্যানেলে একসঙ্গে একটি সিরিয়ালই প্রচার করা যায়। কথা হয়েছে সাংস্কৃতিক যোগাযোগ ও বিনিময় বৃদ্ধি নিয়েও।

বিএনপির সমাবেশে বিদেশি গোয়েন্দা সংস্থার অর্থায়নের কথা শুনেছি : বিএনপির বিভাগীয় সমাবেশগুলোতে অর্থায়নের উৎস নিয়ে সাংবাদিকেরা প্রশ্ন করলে তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহ্‌মুদ বলেন, ‘আমি তো আগেও বলেছি, বিএনপি এই বিভাগীয় সমাবেশের নামে চাঁদাবাজির একটা বড় প্রকল্প নিয়েছে। তাঁরা সমস্ত কালো টাকার মালিকদের কাছ থেকে টাকা কালেকশন করছে। ব্যবসায়ীদেরকে বাধ্য করছে টাকা দেওয়ার জন্য এবং আমি জানতে পেরেছি যে, বিদেশি একটি বিশেষ গোয়েন্দা সংস্থার পক্ষ থেকেও তাঁদেরকে অর্থায়ন করা হচ্ছে। যে গোয়েন্দা সংস্থার কাছ থেকে খালেদা জিয়া টাকা নিয়েছিলেন, সেই গোয়েন্দা সংস্থার প্রধান সে দেশের আদালতে সাক্ষ্য দিতে গিয়ে সেই কথা বলেছিলেন। সেই সংস্থার কাছ থেকে তারা এবারও অর্থ পেয়েছে বলে আমি শুনতে পেয়েছি।’ 

ভারত থেকে এদিন সকালে ফিরে অফিসে যোগ দেওয়ার পর তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী সফর সম্পর্কে বলেন, ‘কলকাতায় চতুর্থ বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উৎসব উদ্বোধন করতে গিয়ে অবাক হয়েছি। প্রায় এক কিলোমিটার লম্বা লাইন পড়েছে ‘হাওয়া’ সিনেমা দেখার জন্য। হাওয়ার শো ছিলো দুপুর দেড়টায়, দর্শকরা সকাল ছয়টা থেকে লাইন দিয়েছে। পরের দিন শোতে দুই হল মিলে আসন সংখ্যা ছিলো নয় শ আর মানুষ গেছে প্রায় তিন হাজার। সেখানকার দাবির প্রেক্ষিতে শো বাড়াতে হয়েছে। বাংলাদেশের ছবি দেখার জন্য কলকাতায় মানুষের যে উন্মাদনা, সেই উন্মাদনা দিল্লিতেও হয়েছে। দিল্লিতে প্রেসক্লাব অব ইন্ডিয়ায় সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে অনেক বাঙালি সাংবাদিক দিল্লিতে কয়েকটি বাংলাদেশি সিনেমা দেখানোর অনুরোধ জানিয়েছেন। সেটির ব্যবস্থা আমি করতে পেরেছি।’

বাংলাদেশ ও ভারতের বন্ধুত্বে গণমাধ্যমের ভূমিকার কথা উল্লেখ করে ড. হাছান মাহ্‌মুদ বলেন, ‘দু দেশের মানুষের সৌহার্দ্যের ক্ষেত্রে মূলধারার গণমাধ্যমের একটা বিরাট ভূমিকা রয়েছে। কোনও ধরনের গুজব, ভুল বা অসত্য তথ্য যদি সংবাদ আকারে পরিবেশিত হয়ে দু দেশের মানুষের মধ্যে উত্তেজনা তৈরি বা আন্তরিকতা নষ্ট করার চেষ্টা করে, এক্ষেত্রে জনগণকে সতর্ক থাকতে সাংবাদিকরা ভূমিকা রাখতে পারে।’

মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব ফারুক আহমেদ এবং মন্ত্রীর দপ্তরের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা সাক্ষাৎকালে উপস্থিত ছিলেন।