সরকার নতজানু ও ব্যর্থ জাতি তৈরি করতে চায় : মির্জা ফখরুল

সরকার নতজানু ও ব্যর্থ জাতি তৈরি করতে চায় : মির্জা ফখরুল

নিজস্ব প্রতিবেদন, বাঙলার কাগজ : বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘এই সরকার একটি নতজানু ও ব্যর্থ জাতি তৈরির জন্য পরিকল্পিতভাবে কাজ করে যাচ্ছে। তারা আমাদের শেকড়ে টান দিয়েছে। ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে ব্যর্থ করতে শিক্ষা ব্যবস্থায় হাত দিয়েছে। কেউ কিন্তু কোনও প্রতিবাদ করছে না। আমাদের তো আলাদা সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য এবং পরিচয় আছে। কেনো সত্যকে সত্য ও মিথ্যাকে মিথ্যা বলতে ভয় কেনো? আজকে শিশুদেরকে ভ্রান্ত ধারণা ও ইতিহাস শিক্ষা দিচ্ছে। আজকে আমাদের পরিচয় ভুলিয়ে দিতে চায়। এই চক্রান্তের বিরুদ্ধে জেগে উঠতে হবে। এটা জাতির অস্তিত্বের লড়াই। আসুন সবাই ঐক্যবদ্ধভাবে এগিয়ে যাই।’

বৃহস্পতিবার (২ ফেব্রুয়ারি) ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে এক আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন।

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘সরকার আমাদের খোলনলচে পাল্টে দিতে চায়। যার প্রমাণ এই পাঠ্যপুস্তকে ইতিহাস বিকৃতি ও ভুল তথ্য সংযোজন। আজকে যেসব সন্তান যারা প্রাথমিক শিক্ষা নেয় সেটা তার সারাজীবনের জন্য থেকে যায়। এই শিক্ষাকে পুঁজি করে সামনের দিকে এগিয়ে যায়। প্রাথমিক বিদ্যালয় হলো শিক্ষার মূল। দুর্ভাগ্যবশত এখনও আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থা নিয়ে পরীক্ষা নিরীক্ষা চলছে। যদিও পাকিস্তান আনলেও এ ধরনের পরীক্ষা ও বিভিন্ন শিক্ষা কমিশন গঠন করা হয়েছিল। শুধু বারবার পরীক্ষা ও শিক্ষা নীতি হচ্ছে। এখনও সেটা চলছে।’

মির্জা ফখরুল আরও বলেন, ‘আজকে পাঠ্যপুস্তকে অজস্র ভুলে ভরা ইতিহাস ও তথ্য সংযোজন করা হয়েছে। আর সেগুলোই নতুন প্রজন্মের ছেলেমেয়েদের শেখানো হচ্ছে। যারা কারিকুলাম তৈরি করে কেউ কিন্তু ভাবে না যে ছেলেমেয়েরা কী শিখছে? জাতির মূল জায়গা হলো শিক্ষা। আর সেখানেই হাত দিয়েছে সরকার। এতক্ষণে অরিন্দম কহিলা বিষাদে।’ 

মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘এই সরকার একটি নতজানু ও ব্যর্থ জাতি তৈরির জন্য পরিকল্পিতভাবে কাজ করে যাচ্ছে। কেউ কিন্তু কোনও প্রতিবাদ করছে না। আমাদের তো আলাদা সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য এবং পরিচয় আছে। কেন সত্যকে সত্য ও মিথ্যাকে মিথ্যা বলতে ভয় কেন? আজকে শিশুদেরকে ভ্রান্ত ধারণা ও ইতিহাস শিক্ষা দিচ্ছে। আজকে আমাদের পরিচয় ভুলিয়ে দিতে চায়। সেটার বিরুদ্ধে আমরা রুখে দাঁড়াতে পারছিনা কেন? বাইরে থেকে কেউ স্যাংশন দিয়ে কিছু করে দিবে না। নিজেদেরকেই ঘুরে দাঁড়াতে হবে। জেগে উঠতে হবে। ভবিষ্যত প্রজন্মকে রক্ষা করতে হবে।’

বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘সরকার যা খুশি তাই করছে। দিনকে রাত আর রাতকে দিন বলছে। মুরগির ডিমকে অশ্ব ডিম্ব বলছে। আমরা যেন কেউ বেঁচে নেই। ঘা দিয়েও বাঁচানো যাচ্ছে না। আমাদেরকে তো জেগে উঠতেই হবে। আমার স্বকীয়তা ও ইতিহাস ঐতিহ্য রক্ষার জন্য জেগে উঠতেই হবে। ভুলে ভরা পাঠ্য বই অবিলম্বে বাতিল করতে হবে।’

রাজধানীর সেগুনবাগিচায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি (ডিআরইউ) মিলনায়তনে বিএনপির উদ্যোগে এবং ইউনিভার্সিটি টিচার্স এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ইউট্যাব) সহযোগিতায় ‘অপরিণামদর্শী কারিকুলাম ও মানহীন পাঠ্যপুস্তক: দেশের ইতিহাস, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি ধ্বংসের নীলনকশা’ শীর্ষক এই আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়। ইউট্যাবের প্রেসিডেন্ট অধ্যাপক ড. এ বি এম ওবায়দুল ইসলামের সভাপতিত্বে ও মহাসচিব অধ্যাপক ড. মোর্শেদ হাসান খান ও হেলেন জেরিন খানের পরিচালনায় সভায় সংশ্লিষ্ট বিষয়ে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ড. মো. সিরাজুল ইসলাম ও অধ্যাপক ড. শাহ শামীম আহমেদ। তারা ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণীর বিভিন্ন পাঠ্যবইয়ের কার্বনডাই অক্সাইড, মানুষের উৎপত্তি নিয়ে বিতর্কিত তত্ত্বসহ বেশকিছু বইয়ের অসঙ্গতি তুলে ধরেন।

ড. মোহাম্মদ ছিদ্দিকুর রহমান খান বলেন, ‘শিক্ষা হলো আমাদের আত্মমর্যাদা ও সভ্যতার একটি অংশ। কিন্তু পরিকল্পিতভাবে দেশের শিক্ষা ব্যবস্থা ধ্বংসের উদ্যোগ হাতে নেওয়া হয়েছে ২০১১ সাল থেকে। যা গত এক দশকে ভুল প্রমাণিত হয়েছে। এর মাধ্যমে আমাদের শিক্ষার্থীদের ভুল পথে নিয়ে যাচ্ছে। নতুন বছরের পাঠ্যপুস্তকে শুধু ইতিহাস বিকৃতি নয় চৌর্যবৃত্তি করা হয়েছে। কোমলমতি শিক্ষার্থীদের বৌদ্ধিক বিকাশ, মেধা ও মনন নষ্ট করা হচ্ছে রাষ্ট্রীয়ভাবে ভুল ইতিহাস শেখানোর মাধ্যমে।’

সভাপতির বক্তব্যে অধ্যাপক এবিএম ওবায়দুল ইসলাম বলেন, ‘এখনকার শিক্ষা ব্যবস্থা খুবই উদ্বেগের। এটা একটি জাতি ধ্বংসের নীলনকশা। অসত্য ও ভুলে ভরা পাঠ্যবই। জাতিকে মুর্খ এবং জ্ঞানহীন করে তোলার লক্ষ্যেই পরিকল্পিতভাবে এটা করা হয়েছে। অবিলম্বে ভুলে ভরা পাঠ্যবই বাতিল এবং যারা দায়ী তাদের বিচারের জন্য বিচার বিভাগীয় তদন্ত ও শিক্ষা মন্ত্রীকে পদত্যাগ করতে হবে।’

আরও বক্তব্য দেন পেশাজীবী পরিষদের আহ্বায়ক ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন, অধ্যাপক ড. তাজমেরী এস ইসলাম, অধ্যাপক ড. নূরুল আমিন বেপারী, অধ্যাপক ড. আব্দুল করিম, অধ্যাপক লুৎফর রহমান, গোলাম হাফিজ কেনেডি প্রমুখ।