সাবেক আইজিপি বেনজীরের সম্পদ জব্দের নির্দেশ

সাবেক আইজিপি বেনজীরের সম্পদ জব্দের নির্দেশ

নিজস্ব প্রতিবেদন, বাঙলার কাগজ : পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক ড. বেনজীর আহমেদ ও তাঁর পরিবারের নামে থাকা সব স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি ক্রোকের নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। একইসঙ্গে কক্সবাজারের ৯টিসহ গোপালগঞ্জে তাঁর সম্পদ কেনার মোট ৮৩টি দলিল ও ৩৩টি অ্যাকাউন্ট জব্দের আদেশ দেওয়া হয়েছে। 

দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) করা আবেদনের প্রেক্ষিতে ঢাকা মহানগর সিনিয়র বিশেষ জজ মোহাম্মদ আসসামছ জগলুল হোসেন বৃহস্পতিবার (২৩ মে) এ আদেশ দেন। দুদকের আইনজীবী খুরশীদ আলম খান বৃহস্পতিবার রাতে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, জব্দকালীন সময় কোনও সম্পত্তি হস্তান্তর যাবে না। যেসব ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ফ্রিজ করা হয়েছে সেগুলো থেকে টাকা উত্তোলন করা যাবে না। 

জানা গেছে, আদালতে দাখিল করা দুদকের আবেদনে বলা হয়- সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদ ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের নামে থাকা সম্পত্তি ক্রোক ও ব্যাংক অ্যাকাউন্ট জব্দ না করা গেলে, যে কোনও সময় তা হস্তান্তর হয়ে যেতে পারে। পরবর্তীতে রাষ্ট্রের অনুকূলে বাজেয়াপ্ত করা সম্ভব হবে না।

শুনানির পর আদালতের দেওয়া আদেশে বলা হয়েছে- মানি লন্ডারিং আইন ২০১২ এর ১৪ ধারা এবং দুদক বিধিমালা ২০০৭ এর বিধি ১৮ অনুযায়ী, গোপালগঞ্জে সব স্থাবর সম্পদ ক্রোক এবং ২৭টি ব্যাংক অ্যাকাউন্টসহ ৩৩টি আর্থিক লেনদেনকারী হিসাব জব্দের আদেশ দেওয়া হলো।

দুদক সূত্র জানিয়েছে, বেনজীর আহমেদ ও তাঁর পরিবারের সব স্থাবর সম্পদ ক্রোক এবং ব্যাংক হিসাব জব্দের জন্য আদালতে আবেদন করেন দুদকের উপপরিচালক হাফিজুল ইসলাম। শুনানি শেষে আবেদন মঞ্জুর করে এ আদেশ দেন আদালত। 

৩১ মার্চ একটি জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত সংবাদে বলা হয়, পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বেনজীর আহমেদের বিপুল অবৈধ সম্পদের খোঁজ মিলেছে। এরপর থেকেই বেশ আলোচনায় পুলিশের সাবেক এই আইজিপি। জাতীয় ওই দৈনিকে বেনজীরের ঘরে ‘আলাদীনের চেরাগ’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে যেখানে তাঁর নানা অর্থ সম্পদের বিবরণ তুলে ধরা হয়। বেনজীরের বিপুল সম্পদের মধ্যে রয়েছে : গোপালগঞ্জের সাহাপুর ইউনিয়নে সাভানা ইকো রিসোর্ট নামের এক অভিজাত ও দৃস্টিনন্দন পর্যটনকেন্দ্র। আর তাঁর স্ত্রী জিসান মির্জা, বড় মেয়ে ফারহিন রিশতা বিনতে বেনজীর এবং ছোট মেয়ে তাশিন রাইসা বিনতে বেনজীরের নামে দেশের বিভিন্ন এলাকায় অন্তত ছয়টি কোম্পানির খোঁজ পাওয়া গেছে। পাঁচটি প্রতিষ্ঠানে বিনিয়োগের পরিমাণ ৫ শ কোটি টাকার বেশি হতে পারে।

প্রতিবেদনে আরও দাবি করা হয়, ঢাকার অভিজাত এলাকাগুলোতে বেনজীর আহমেদের দামি ফ্ল্যাট, বাড়ি আর ঢাকার কাছের এলাকায় বিঘার পর বিঘা জমি রয়েছে। দুই মেয়ের নামে বেস্ট হোল্ডিংস ও পাঁচতারা হোটেল লা মেরিডিয়ানের রয়েছে দুই লাখ শেয়ার। পূর্বাচলে রয়েছে ৪০ কাঠার সুবিশাল জায়গাজুড়ে ডুপ্লেক্স বাড়ি, যার আনুমানিক মূল্য কমপক্ষে ৪৫ কোটি টাকা। একই এলাকায় আছে ২২ কোটি টাকা মুল্যের আরও ১০ বিঘা জমি। অথচ গত ৩৪ বছর সাত মাসের দীর্ঘ চাকরিজীবনে বেনজীর আহমেদ বেতন-ভাতা বাবদ উত্তোলন করেছেন মোট এক কোটি ৮৪ লাখ ৮৯ হাজার ২ শ টাকা। 

এরপর বেনজীর আহমেদের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ অনুসন্ধানে দুদককে চিঠি দেন ব্যারিস্টার সৈয়দ সাইয়েদুল হক সুমন এমপি। চিঠিতে বলা হয়, পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক বেনজীর আহমেদ ৩৪ বছর ৭ মাস চাকরি করে গত বছর ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২২ সালে অবসরে যান। অবসর গ্রহণের পর দেখা যায়, বেনজীর আহমেদের স্ত্রী ও কন্যাদের নামে বিপুল পরিমাণ সম্পত্তি রয়েছে, যা তার আয়ের তুলনায় অসম। বেনজীর আহমেদ তাঁর পদের অপব্যবহার করে তাঁর আয়ের তুলনায় প্রতিবেদনে উল্লিখিত সম্পত্তিগুলো অধিগ্রহণ করেছেন বলে বিশ্বাস করার যথেষ্ট কারণ রয়েছে বলে চিঠিতে জানান ব্যারিস্টার সুমন। এমন পরিস্থিতিতে পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক বেনজীর আহমেদ, তাঁর স্ত্রী, বড় মেয়ে এবং ছোট মেয়ের নামে বিপুল পরিমাণ অবৈধ সম্পদ সংগ্রহের জন্য তদন্ত করে প্রয়োজনীয় আইনি ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য দুদককে অনুরোধ করেন তিনি।   

দুই মাসের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে হাইকোর্টের নির্দেশ : এদিকে বেনজীর আহমেদের বিরুদ্ধে ওঠা অনিয়ম-দুর্নীতি, অবৈধ সম্পদ অর্জন ও ক্ষমতার অপব্যবহারের অভিযোগের অনুসন্ধান বিষয়ে অগ্রগতি প্রতিবেদন দুই মাসের মধ্যে দাখিলের নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। বেনজীর আহমেদসহ তাঁর পরিবারের সম্পদের বিষয়ে অনুসন্ধানের নির্দেশনা চেয়ে করা রিট আবেদনের প্রেক্ষিতে বিচারপতি নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি কাজী ইবাদত হোসেনের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ ২৪ এপ্রিল দুদককে এ নির্দেশ দেন।

এ সময় দুদকের আইনজীবী খুরশীদ আলম খান বলেন, সাবেক পুলিশ প্রধানের বিরুদ্ধে এটি গুরুতর অভিযোগ। এ ঘটনায় সংস্থার উপপরিচালক হাফিজুর রহমানের নেতৃত্বে তিন সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে।