সপ্তাহে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকের কর্মঘণ্টা ৪০।

সপ্তাহে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকের কর্মঘণ্টা ৪০।

নিজস্ব প্রতিবেদন, বাঙলা কাগজ : বাংলাদেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষক সপ্তাহে শিক্ষা ও গবেষণা খাতে কতো ঘণ্টা কাজ করবেন, তা নির্ধারণ করে দিচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)। সে অনুযায়ী, সপ্তাহে একজন শিক্ষকের মোট কর্মঘণ্টা হবে ৪০।

শিক্ষকদের কর্মঘণ্টাসহ বিভিন্ন নিয়মকানুন নির্ধারণ করে ‘পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর টিচিং লোড ক্যালকুলেশন নীতিমালা, ২০২২’ চূড়ান্ত করেছে ইউজিসির নেতৃত্বাধীন একটি কমিটি। বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ও সহ-উপাচার্যরাও ছিলেন এ কমিটিতে।

নীতিমালার আওতায় শিক্ষার্থীদের ক্লাস নেওয়া, গবেষণাগার (ল্যাবরেটরি) পরিচালনা, থিসিস সুপারভিশন ইত্যাদি কাজে গড়ে ১৩ কর্মঘণ্টা ব্যয় করতে হবে একজন শিক্ষককে। ৪০ ঘণ্টার অবশিষ্ট সময় প্রশ্নপত্র প্রণয়ন, উত্তরপত্র মূল্যায়ন, গবেষণা, বই বা প্রবন্ধ লেখা ও বিভাগের প্রশাসনিক কাজে ব্যয় করতে হবে।

ইউজিসির চেয়ারম্যান (রুটিন দায়িত্ব) অধ্যাপক দিল আফরোজা বেগম বাঙলা কাগজ ও ডনকে বলেন, প্রায় দুই বছর ধরে কাজ করে এ নীতিমালা চূড়ান্ত করা হয়েছে। এখন এটি ইউজিসির পূর্ণ কমিশনের সভায় উপস্থাপন করা হবে। এরপর বাস্তবায়নের বিষয়ে পদক্ষেপ নিতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে।

ইউজিসি বলছে, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর শিক্ষা ও গবেষণাকাজ ঠিকমতো পরিচালনার জন্য প্রয়োজনীয় সংখ্যক শিক্ষক অপরিহার্য। বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘টিচিং লোড ক্যালকুলেশন’–এর মাধ্যমে জনবল অনুমোদন দিতে শিক্ষকের সংখ্যা নির্ধারণে একটি সুনির্দিষ্ট নীতিমালা থাকা দরকার। মূলত, এ উদ্দেশেই এই নীতিমালা করা হয়েছে।

ইউজিসির তথ্য অনুযায়ী, দেশে বর্তমানে সরকারি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ১৬০টি। এগুলোর মোট শিক্ষার্থী (অধিভুক্ত কলেজসহ) প্রায় ৪৭ লাখ। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে সরকারি ৫২টি। সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় (অধিভুক্ত কলেজ বাদে) মোট শিক্ষক আছেন প্রায় সাড়ে ১৫ হাজার।

নীতিমালায় একজন শিক্ষকের সাপ্তাহিক ৪০ কর্মঘণ্টার কাজ দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছে। একটি ভাগকে বলা হচ্ছে ‘কন্টাক্ট আওয়ার’ ও আরেকটি ‘নন-কন্টাক্ট আওয়ার’। শিক্ষকের ‘কন্টাক্ট আওয়ার’ হবে পদভিত্তিক; যাঁদের গড় কর্মঘণ্টা হবে ১৩। এই কর্মঘণ্টায় একজন শিক্ষক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা পরিষদের (একাডেমিক কাউন্সিল) সুপারিশে কোর্সগুলোর জন্য শিক্ষার্থীর সঙ্গে সরাসরি যুক্ত হয়ে পাঠদান কার্যক্রম চালাবেন। শিক্ষার্থীদের কাউন্সেলিংয়ের জন্য প্রতি কোর্সে শিক্ষক সপ্তাহে এক ঘণ্টা ব্যয় করবেন।

ইউজিসি বলছে, এ নীতিমালা বাস্তবায়নের আগে যদি কোনও বিভাগের কর্মরত শিক্ষকের সংখ্যা ওই হিসাব অনুযায়ী বেশি হয়, তাহলে অবসরে যাওয়া পর্যন্ত পদগুলো সংরক্ষিত থাকবে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনও বিভাগ বা ইনস্টিটিউটে বেশি সংখ্যক শিক্ষক শিক্ষা ছুটিতে বিদেশে অবস্থান করলে শিক্ষা কার্যক্রম বিঘ্নিত হওয়ার আশঙ্কা থাকে। সেক্ষেত্রে শিক্ষা কার্যক্রম সচল রাখতে ওই বিভাগ বা ইনস্টিটিউটের ‘টিচিং লোড ক্যালকুলেশন’–এর ভিত্তিতে প্রাপ্ত শিক্ষকসংখ্যার অতিরিক্ত ২০ শতাংশ পর্যন্ত নিয়োগের জন্য ইউজিসিতে আবেদন করতে হবে। ১৫ কর্মদিবসের মধ্যে ইউজিসি শিক্ষক পদ ছাড়পত্র করা বিষয়ে সিদ্ধান্ত জানাবে।

তত্ত্বীয় (থিওরি) ও গবেষণাগার পরিচালনা বিষয়েও নিয়ম কেমন হবে, তা বলে দেওয়া হয়েছে নীতিমালায়। গবেষণার (ল্যাবরেটরি) ক্লাসে প্রতি ১০ জন শিক্ষার্থীর জন্য একজন শিক্ষক থাকবেন। তবে শিক্ষকসংখ্যা তিনের বেশি হবে না।

মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর শিক্ষাদানের পদ্ধতি ভিন্ন হওয়ায় সেখানকার জন্য নিয়ম কিছুটা ভিন্ন হবে। মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের মোট কর্মঘণ্টা অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো একই হলেও অন্যান্য ক্ষেত্রে কিছু পরিবর্তন আছে। যেমন সর্বোচ্চ ৩০ জন শিক্ষার্থী নিয়ে একটি তত্ত্বীয় ক্লাস হবে।

ওই নীতিমালা প্রণয়ন কমিটিতে সদস্য ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ-উপাচার্য অধ্যাপক এ এস এম মাকসুদ কামাল। তিনি বাঙলা কাগজ ও ডনকে বলেন, পৃথিবীর সব দেশেই এ ধরনের নীতিমালা আছে। ইউজিসি এটি আরও আগে করলে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো বেশি উপকৃত হতো। তিনি আরও বলেন, দেশে বহু বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক-শিক্ষার্থীর অনুপাত অনেক কম।

অধ্যাপক মাকসুদ কামাল আরও বলেন, গবেষণা বিশ্ববিদ্যালয়ের অবিচ্ছেদ্য অংশ। কিন্তু স্নাতকোত্তরে অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ে কিংবা বিভাগে কোনও গবেষণা হয় না, থিসিস হয় না। যেখানে এগুলো হয় না, সেখানে শিক্ষক কম পাবে। যাঁরা গবেষণা করবে, তাঁরা শিক্ষক বেশি পাবে। এভাবে এই নীতিমালায় যৌক্তিকভাবে শিক্ষকের সময় বণ্টন করে দেওয়া হয়েছে। এটি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর জন্য মঙ্গলজনক হবে।

উল্লেখ করা যেতে পারে, নিয়মতান্ত্রিকভাবে ইউজিসির কাছে শিক্ষক চাওয়া হতো না। যেসব বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য থেকে শুরু করে বিভিন্ন ক্ষেত্রে প্রভাবশালীরা ছিলেন, তাঁরা বেশি সংখ্যক শিক্ষক পেতেন। বিপরীতে যাদের প্রভাব কম, তারা কম পেতেন। এখন এসব বিষয় এ নীতিমালায় আনা হয়েছে।