সুইস ব্যাংকে বাংলাদেশিদের রেকর্ড টাকা।

সুইস ব্যাংকে বাংলাদেশিদের রেকর্ড টাকা।

নিজস্ব প্রতিবেদন, বাঙলা কাগজ : এর আগের বছর কমলেও গত এক বছরে সুইজারল্যান্ডের ব্যাংকগুলোতে বাংলাদেশিদের নামে জমা টাকার পরিমাণ ৫৫ শতাংশ বেড়েছে; যা ১৯৯৬ সালের পর সর্বোচ্চ।

বৃহস্পতিবার (১৬ জুন) প্রকাশিত সুইস ন্যাশনাল ব্যাংকের (এসএনবি) বার্ষিক প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, ২০২১ সালে বাংলাদেশি ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের নামে সেখানকার ব্যাংকে থাকা অর্থে উল্লম্ফন হয়ে মোট ৮৭ কোটি ১১ লাখ সুইস ফ্রাঙ্ক হয়েছে। বাংলাদেশি টাকায় এর পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৮ হাজার ৩৯০ কোটি টাকা (প্রতি ফ্রাঙ্ক ৯৬.২ টাকা দর ধরে)।

এসএনবির প্রতিবেদন বলছে, বাংলাদেশিদের নামে সেখানে রাখা অর্থের পরিমাণ আগের বছরের চেয়ে বেড়েছে ৩০ কোটি ৮১ লাখ ফ্রাঙ্ক (৫৪ দশমিক ৭৫ শতাংশ); টাকার হিসাবে যা প্রায় ২,৯৭০ কোটি টাকা।

২০২০ সালে সুইস ব্যাংকগুলোতে বাংলাদেশিদের নামে থাকা গচ্ছিত অর্থের পরিমাণ ছিলো ৫৬ কোটি ২৯ লাখ ফ্রাঙ্ক।

কোভিড মহামারীর মধ্যে সেবার জমা অর্থের পরিমাণ আগের বছরের চেয়ে কমেছিলো ৭ শতাংশ। ২০১৯ সালে বাংলাদেশিদের নামে সেখানে জমা ছিল ৬০ কোটি ৩০ লাখ সুইস ফ্রাঙ্ক।

সুইস কেন্দ্রীয় ব্যাংকটি এমন এক সময় প্রকাশ করলো, যার এক সপ্তাহ আগে বাজেট প্রস্তাবে অর্থমন্ত্রী বিদেশে পাচার করা অর্থ ফেরাতে কম কর দিয়ে দায়মুক্তির প্রস্তাব করেন। এ নিয়ে এখন ব্যাপক আলোচনা সমালোচনা চলছে। বৃহস্পতিবারও সংসদে এ নিয়ে কথা হয়েছে। 

সবশেষ হিসাবমতে, ২০২১ সালে সেখানে জমা করা অর্থের পরিমাণ আগের যে কোনও সময়ের চেয়ে বেশি। এসএনবির ওয়েবসাইটে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, ১৯৯৬ সালের পর এত অর্থ কখনও জমা পড়েনি সেখানে। এর আগে ৬৬ কোটি ১৯ লাখ ফ্রাঙ্ক ছিল সর্বোচ্চ; আর ১৯৯৬ সালে মাত্র ৩ কোটি ৮৩ লাখ।

বিশ্বজুড়ে ধনী ব্যক্তিদের টাকা সুইস ব্যাংকে রাখার আগ্রহের পেছনে মূল কারণ দেশটির গোপনীয়তার নীতি। সুইজারল্যান্ডের আইনে ব্যাংকগুলো তাদের গ্রাহকদের তথ্য প্রকাশ করতে বাধ্য নয়। টাকার উৎসও তারা জানতে চায় না।

তবে কোন দেশের গ্রাহকদের কী পরিমাণ অর্থ সুইজারল্যান্ডের ব্যাংকগুলোতে জমা আছে, তার একটি ধারণা প্রতিবছর এসএনবির বার্ষিক প্রতিবেদন থেকে পাওয়া যায়। দুর্নীতিবিরোধী আন্তর্জাতিক সনদের বাধ্যবাধকতা মেনে এসএনবি ওই তথ্য প্রকাশ করে।

এবারও সেই ধারাবাহিকতায় বৃহস্পতিবার সুইজারল্যান্ডের কেন্দ্রীয় ব্যাংক এসএনবি ‘ব্যাংকস ইন সুইজারল্যান্ড’ নামে প্রকাশিত বার্ষিক প্রতিবেদনে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সঙ্গে তাদের ব্যাংকগুলোর রাখা আমানত এবং অন্যান্য দেশে রাখা তাদের সম্পদের তথ্য প্রকাশ করে। এ তালিকায় রয়েছে দুই শতাধিক দেশের নাম। তবে সেখানে গ্রাহকের বিষয়ে কোনও ধারণা পাওয়া যায় না।

দেশে দুর্নীতি প্রতিরোধ ও সুশাসন নিয়ে কাজ করা প্রতিষ্ঠানগুলোর ভাষ্য হলো, সুইস ব্যাংকে বাংলাদেশিদের যে টাকা জমা রয়েছে, তার বেশিরভাগটাই অবৈধভাবে অর্জিত এবং বিদেশে পাচার করা হয়েছে।

সারা পৃথিবীতে ধনী ব্যক্তিদের টাকা সুইস ব্যাংকে রাখার আগ্রহের পেছনে মূল কারণ দেশটির গোপনীয়তার নীতি। সুইজারল্যান্ডের আইনে ব্যাংকগুলো তাঁদের গ্রাহকদের তথ্য প্রকাশ করতে বাধ্য নয়। টাকার উৎসও তাঁরা জানতে চায় না।

তবে কোন দেশের গ্রাহকদের কী পরিমাণ অর্থ সুইজারল্যান্ডের ব্যাংকগুলোতে জমা আছে, তার একটি ধারণা প্রতিবছর এসএনবির বার্ষিক প্রতিবেদন থেকে পাওয়া যায়। দুর্নীতিবিরোধী আন্তর্জাতিক সনদের বাধ্যবাধকতা মেনে এসএনবি ওই তথ্য প্রকাশ করে। তবে সেখানে গ্রাহকের বিষয়ে কোনও ধারণা পাওয়া যায় না।

দেশে দুর্নীতি প্রতিরোধ ও সুশাসন নিয়ে কাজ করা প্রতিষ্ঠানগুলোর ভাষ্য হলো, সুইস ব্যাংকে বাংলাদেশিদের যে টাকা জমা রয়েছে, তার বেশিরভাগটাই অবৈধভাবে অর্জিত এবং বিদেশে পাচার করা হয়েছে।

সুইস ন্যাশনাল ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, দেশটির ব্যাংকগুলোতে বাংলাদেশ থেকে যাওয়া অর্থের পরিমাণ প্রথমবার দশ কোটি সুইস ফ্রাঙ্ক ছাড়িয়ে যায় ২০০৬ সালে, যেটি ছিলো বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের শেষ বছর।

৯ কোটি ৭২ লাখ সুইস ফ্রাঙ্ক থেকে বেড়ে ওই বছর জমার পরিমাণ দাঁড়ায় ১২ কোটি ৪৩ লাখ সুইস ফ্রাঙ্ক।

এরপর সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রথম বছর ২০০৭ সালে জমা অর্থের পরিমাণ প্রায় দ্বিগুণ বেড়ে ২০ কোটি ৩০ লাখ সুইস ফ্রাঙ্ক হয়।

বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে ২০১১ সালে জমার পরিমাণ ছিলো ১৫ কোটি ২৩ লাখ সুইস ফ্রাঙ্ক, তা ধারাবাহিকভাবে বেড়ে ২০১৬ সালে তা ৬৬ কোটি ১৯ লাখে দাঁড়ায়। 

পরের বছর, অর্থাৎ ২০১৭ সালে তা কমে ৪৮ কোটি ১৩ লাখ সুইস ফ্রাঙ্কে নেমে এলেও ২০১৮ সালে জাতীয় নির্বাচনের বছরে তা আবারও বেড়ে ৫১ কোটি ৭৭ লাখ সুইস ফ্রাঙ্কে দাঁড়ায়।