বিশেষ : লাল পিঁপড়ার ডিম বিক্রি করে চলে শতাধিক মানুষের সংসার

বিশেষ : লাল পিঁপড়ার ডিম বিক্রি করে চলে শতাধিক মানুষের সংসার

নিজস্ব সংবাদদাতা, বাঙলার কাগজ; আরিফুল ইসলাম, খাগড়াছড়ি : বেঁচে থাকার জন্য কত বিচিত্র কাজই না করতে হয় মানুষকে। এ রকমই ব্যতিক্রম এক পেশা- লাল পিঁপড়ার ডিম সংগ্রহ করা। আর এ পিঁপড়ার ডিম সংগ্রহের পেশা থেকেই দু বেলা দু মুঠো খাবারের জোগাড় করছেন শতাধিক মানুষ। তাঁরা এর মাধ্যমে তাঁদের পরিবার চালাচ্ছেন।

খাগড়াছড়ি জেলার মাটিরাঙ্গা উপজেলার দুর্গম পাহাড়ে ঘুরে ঘুরে গোমতী ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ড রঙমিয়া পাড়াসহ স্থানীয় শতাধিক মানুষ প্রায় একযুগ ধরে লাল পিঁপড়ার ডিম সংগ্রহ করে তা মাছ শিকারিদের নিকট বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করছেন।

বন-জঙ্গলে কিংবা লোকালয়ে বিভিন্ন গাছ থেকে তাঁরা সংগ্রহ করেন এসব পিঁপড়ার ডিম। তাও আবার লাল পিঁপড়ার ডিম। মাছ শিকারিদের জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয় একটি উপাদান হচ্ছে লাল পিঁপড়ার ডিম। এসব ডিম সংগ্রহের পর তা বিক্রি করে যা উপার্জন হয়, তা দিয়েই চলে তাঁদের সংসার।

বৃহস্পতিবার (২ নভেম্বর) মাটিরাঙ্গা উপজেলার আঁকাবাঁকা পাহাড়ি মেঠোপথ ধরে বিভিন্ন স্থানে ঘুরে দেখা যায় লাল পিঁপড়ার ডিম সংগ্রহ ও সংরক্ষণের কঠোর কর্মযজ্ঞ।

লাল পিঁপড়ার ডিম সংগ্রহকারীরা হাতে-হাতে লম্বা বাঁশ ও বাঁশের তৈরি ঝুড়ি নিয়ে প্রতিদিন সকাল হলেই বেরিয়ে পড়ে উপজেলার দূর দূরান্তের বিভিন্ন পাহাড়,পর্বত, বন-জঙ্গলে। সারাদিন লাল পিঁপড়ার ডিম সংগ্রহ করেন তাঁরা।

ডিম সংগ্রহকারী জসীম উদ্দিন বাঙলার কাগজকে বলেন, ‘পিঁপড়ার ডিম সংগ্রহ ও সংরক্ষণের কাজটি খুবই সতর্কতার সঙ্গে করতে হয়। কৃষি কাজের পাশাপাশি জীবিকা নির্বাহের মাধ্যম হিসেবে এ কাজ বেছে নিয়েছি।’ সারাদিনে তিনি এক থেকে দেড় কেজি পর্যন্ত ডিম সংগ্রহ করতে পারেন। তিনি আরও বলেন, লাল পিঁপড়ার ডিম সংগ্রহ করে পাইকারি দামে প্রতি কেজি ৩০০ থেকে ৫০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি করেন তাঁরা। আর পিঁপড়ার ডিম বিক্রি করে যা টাকা পান, তাতেই সংসারের বিভিন্ন জিনিস ক্রয় করেন। 

সাধারণত মেহগনি, আম, লিচু, কনক ও কড়ইসহ দেশীয় গাছগুলোতে লাল পিঁপড়ার বাসা পাওয়া যায় বলেই জানান তিনি।

লাল পিঁপড়ার ডিম সংগ্রহকারীদের কাছ থেকে পাইকারি দামে তা ক্রয় করেন স্থানীয় তিন ব্যবসায়ী। তাঁরা হলেন : একই এলাকার জাহাঙ্গীর হোসেন, জাকির মিয়া ও মনির হোসেন। 

তাঁরা জানান, প্রায় ১ যুগ ধরে লাল পিঁপড়ার ডিম সংগ্রহকারীদের কাছ থেকে ডিম কিনে ৭ শ থেকে ৮ শ টাকা পর্যন্ত ঢাকা, চট্টগ্রাম, কুমিল্লা ও ফেনীসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় বিক্রি করেন তাঁরা। তাঁদের তিনজনের অধীনে প্রায় শতাধিক মানুষ বিচিত্র এ কর্মসংস্থান তৈরি করে নিয়েছে। মূলত মাছের খামারি ও সৌখিন মাছ শিকারীরা এই ডিম কিনে থাকেন। চট্টগ্রামে লাল পিঁপড়ার ডিমের প্রচুর চাহিদা রয়েছে বলেই জানিয়েছেন তাঁরা।

জাকির মিয়া বাঙলার কাগজকে জানান, প্রতিদিন ১৮ থেকে ২০ জন তাঁকে পিঁপড়ার ডিম সংগ্রহ করে দেন। ২ থেকে ৩ দিন পরপর চট্টগ্রাম, ফেনী ও কুমিল্লা থেকে ব্যবসায়ীরা এসে তাঁর কাছ থেকে ডিম কিনে নিয়ে যান।

এক সময় এ পেশায় লোকজন কম ছিলো বলে তখন প্রচুর ডিম পাওয়া যেতো। এখন লোকজন বাড়ার পাশাপাশি নির্বিচারে দেশীয় গাছ কাটার কারণে পিঁপড়ার বাসা কমে গেছে। এ কারণে নির্বিচারে দেশীয় গাছ কাটা বন্ধের দাবি জানিয়েছেন পেশাটির ব্যবসায়ীরা।