যাওয়ার কথা যুক্তরাষ্ট্রে : মা-মেয়ে চলে গেলেন না-ফেরার দেশে!
নিজস্ব প্রতিবেদক, বাঙলার কাগজ; শরীয়তপুর : যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডায় থাকতেন লুৎফুন্নাহার লিমা (৩০)। মায়ের অসুস্থতার কথা শুনে এক বছর আগে বাংলাদেশে আসেন। দুই থেকে তিন মাসের মধ্যে মা জাহানারা বেগমকে নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে ফিরে যাওয়ার কথা ছিলো তাঁর। কিন্তু মায়ের উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় নেওয়ার পথে সড়ক দুর্ঘটনায় মা জাহানারা বেগম, চাচাতো ভাই ফজলে রাব্বির সঙ্গে লিমাও মারা যান।
এই দুর্ঘটনায় তাঁদের সঙ্গে অ্যাম্বুলেন্সের চালক, সহকারী ও আরেক পরিচিতজন মারা গেছেন।
লিমার স্বজনেরা বলেন, পটুয়াখালীর বাউফল উপজেলার আনারসিয়া গ্রামের লতিফ মল্লিক ২০০০ সাল থেকে যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডায় থাকেন। ২০১০ সালে বাবার কাছে যান লুৎফুন্নাহার লিমা। পেশায় কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ার লিমা ফ্লোরিডায় একটি প্রতিষ্ঠানে কাজ করছিলেন। তাঁর মা জাহানারা বেগম গ্রামের বাড়িতে থাকতেন। জাহানারা কিডনি রোগ ও ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হলে লিমা গত বছর বাংলাদেশে মায়ের কাছে ফিরে আসেন। মায়ের চিকিৎসা করিয়ে কিছুটা সুস্থ করে তাঁকে যুক্তরাষ্ট্রে নিয়ে যাওয়ার কথা ছিলো।
জাহানারা বেগম কয়েক দিন আগে অসুস্থ হয়ে পড়লে তাঁকে বরিশাল শহরের বাজার রোড এলাকার কেএমসি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সোমবার (১৬ জানুয়ারি) চিকিৎসকেরা তাঁকে ঢাকার বারডেম হাসপাতালে নেওয়ার পরামর্শ দেন। রাতে একটি অ্যাম্বুলেন্সে করে তাঁকে নিয়ে ঢাকার দিকে রওনা হন লিমা, তাঁর চাচাতো ভাই ফজলে রাব্বি ও ফজলে রাব্বির শিক্ষক স্থানীয় সাংবাদিক মাসুদ রানা।
পদ্মা সেতু দক্ষিণ থানা, শিবচর হাইওয়ে পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের কর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, রবিউল ইসলাম অ্যাম্বুলেন্সটি চালাচ্ছিলেন। সোমবার দিবাগত রাত পৌনে চারটার দিকে অ্যাম্বুলেন্সটি ঢাকা-ভাঙ্গা এক্সপ্রেসওয়ে ধরে পদ্মা সেতুর জাজিরা প্রান্তের টোল প্লাজার কাছে আসে। টোল প্লাজার ৩০০ মিটার সামনে নাওডোবা এলাকায় এলে অ্যাম্বুলেন্সটি চলন্ত একটি ট্রাককে পেছন থেকে ধাক্কা দেয়।
অ্যাম্বুলেন্সটি ট্রাকের নিচে চলে যায়। ঘটনাস্থলেই ছয়জন প্রাণ হারান। তাঁদের লাশ উদ্ধার করে জাজিরা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হয়। খবর পেয়ে নিহত ব্যক্তিদের স্বজনেরা হাসপাতালে যান।
লিমার মামাতো ভাই রুবেল খান বলেন, ‘দুই-তিন মাসের মধ্যে মাকে নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়ার কথা ছিল লিমার। জীবনের কী নির্মম বাস্তবতা, আমার বোনটি মাকে নিয়ে না–ফেরার দেশে যাত্রা করল।’
শরীয়তপুরের জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে নিহত ব্যক্তিদের দাফনের জন্য ১০ হাজার করে টাকা দেওয়া হয়েছে। জাজিরার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) কামরুল হাসান নিহত ব্যক্তিদের স্বজনদের কাছে টাকা হস্তান্তর করেন।
হাইওয়ে পুলিশের ফরিদপুর সার্কেলের এএসপি মো. মারুফ হোসেন বলেন, দুর্ঘটনার পর ট্রাক ফেলে চালক পালিয়ে যান। পুলিশ ট্রাক ও অ্যাম্বুলেন্স উদ্ধার করে শিবচর হাইওয়ে থানায় নিয়ে জব্দ করে রাখে। দুর্ঘটনার কারণ তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। এ ঘটনায় মামলা হবে।