মার্কিন নিষেধাজ্ঞার পেছনে ৪ লবিস্ট ফার্ম, বার্ষিক ব্যয় ২৫ মিলিয়ন ডলার : আইজিপি।

মার্কিন নিষেধাজ্ঞার পেছনে ৪ লবিস্ট ফার্ম, বার্ষিক ব্যয় ২৫ মিলিয়ন ডলার : আইজিপি।

নিজস্ব প্রতিবেদন, বাঙলা কাগজ : মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সফররত পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) ড. বেনজীর আহমেদ এক নাগরিক সংবর্ধনায় তাঁর ওপর দেওয়া মার্কিন নিষেধাজ্ঞা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। তিনি বলেন, ‘তাঁরা অভিযোগ করেছেন, ২০০৯ সাল থেকে নাকি র‌্যাব কর্তৃক ৬ শ লোক গুম হয়েছেন। অথচ আমি র‌্যাবে ঢুকেছি ২০১৫ সালে। তাহলে আমাকে কেনো ওই তালিকায় নেওয়া হয়েছে? আমি মার্কিন প্রশাসন বা আমেরিকানদের দোষারোপ করতে চাই না। কারণ এটা করিয়েছে তাঁরাই, যাঁরা সত্তর সালের নির্বাচনে বঙ্গবন্ধুর নৌকায় ভোট দেয় নি, যাঁরা একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের বিপক্ষে ছিলো।’

স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার (পহেলা সেপ্টেম্বর) জ্যাকসন হাইটসের কাছে গুলশান টেরেস মিলনায়তনে যুক্তরাষ্ট্র নাগরিক কমিটির দেওয়া সংবর্ধনায় বাংলাদেশের পুলিশপ্রধান বলেন, ‘ওই গোষ্ঠী বার্ষিক ২৫ মিলিয়ন ডলার ব্যয়ে চারটি লবিস্ট ফার্ম নিয়োগ করেছিলো। সেই ভাড়াটে ফার্ম টানা তিন বছর চেষ্টা করেছে কথিত স্যাংশনের জন্য। ২০০৯ সালে আমি এই নিউইয়র্কে বাংলাদেশ মিশনের ফার্স্ট সেক্রেটারি হিসেবে চাকরিতে ছিলাম। প্রকৃত সত্য হচ্ছে, যে ৬ শ লোক গুমের অভিযোগ করা হয়েছে, তাঁদের কোনও তালিকা কোথাও প্রকাশ করা হয় নি।’

পুলিশ সদর দপ্তর থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের নেতা হিন্দাল কাদির বাপ্পা। এ সময় অন্যান্যের মধ্যে নিউইয়র্কে বাংলাদেশের কনসাল জেনারেল ড. মোহাম্মদ মনিরুল ইসলাম উপস্থিত ছিলেন।

অনুষ্ঠানে আইজিপি বলেন, ‘আমরা স্বাধীনতা সংগ্রাম করে বিজয়ী হয়েছি। এখন চলছে মুক্তির লড়াই। এ লড়াই অব্যাহত রয়েছে। এই লড়াইয়ে জিততেই হবে। দেশের বিরুদ্ধে, উন্নয়নের বিরুদ্ধে এবং অগ্রযাত্রার বিরুদ্ধে যে ষড়যন্ত্র হচ্ছে তা রুখে দিতে হবে।’

তিনি বলেন, ‘এক সময় মনে করা হয়েছিলো, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম সাংবাদিকতায় বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনবে। কিন্তু বাস্তবে কী দেখছি আমরা? আশা করা হয়েছিলো, সমাজের তথ্যচিত্রটি সবিস্তারে উঠে আসবে। অথচ এখন দেখা যাচ্ছে যতো ভুয়া, আজগুবি তথ্য প্রকাশ পাচ্ছে।’

আইজিপি বলেন, ‘২২ জন তথ্য সন্ত্রাসী রয়েছে। এদেরকে জবাব দিতে হবে। আপনি যে মূল্যবোধের ওপর দাঁড়িয়ে আছেন, সেই বিশ্বাসে যদি চ্যাম্পিয়ন হন, তাহলে আপনাকেই সেটি পালন করতে হবে। তথ্য সন্ত্রাসীরা দেশের বিরুদ্ধে, তারা মানবতাবিরোধী অপপ্রচার চালাচ্ছে। নোংরা জিনিস ফেসবুকে দেখামাত্র ফ্লাশ করা দরকার। এর বিরুদ্ধে প্রকৃত সত্যকে উপস্থাপন করলেই মিথ্যার পরাজয় ঘটবে।’

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামালের নেতৃত্বে বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলের সদস্য হিসেবে জাতিসংঘ পুলিশ প্রধানদের সম্মেলনে অংশ নিতে আইজিপি বর্তমানে নিউইয়র্কে অবস্থান করছেন।

এর আগে ২০২১ সালের ১০ ডিসেম্বর মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের এলিট ফোর্স র‌্যাবের সাবেক প্রধান ও বর্তমান আইজিপি ড. বেনজীর আহমেদসহ সাত কর্মকর্তার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। তখন বলা হচ্ছিলো, এই নিষেধাজ্ঞার ফলে তাঁরা আর যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের অনুমতি পাবেন না। তবে শেষ পর্যন্ত জাতিসংঘের পুলিশ প্রধানদের সম্মেলনে অংশ নিতে যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নিয়েই সে দেশে যান আইজিপি। অবশ্য কয়েকটি শর্ত সাপেক্ষে ওই ভিসা দেওয়া হয়েছে। গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়, ভিসার শর্ত অনুযায়ী, জাতিসংঘের অনুষ্ঠানে গিয়ে নিউইয়র্কের বাইরে যেতে পারবেন না তিনি। এমনকি নিউইয়র্ক সিটিতেও তাঁর কর্মকাণ্ড সীমিত থাকবে। তিনি জাতিসংঘ সম্মেলন ছাড়া সামাজিক, রাষ্ট্রীয় বা সরকারি-বেসরকারি কোনও অনুষ্ঠানে যোগ দিতে পারবেন না।