মোবাইলে ফোর-জি চালু, বন্ধ থাকবে ফেসবুক হোয়াটসঅ্যাপ টিকটক

মোবাইলে ফোর-জি চালু, বন্ধ থাকবে ফেসবুক হোয়াটসঅ্যাপ টিকটক

নিজস্ব প্রতিবেদন, বাঙলার কাগজ : টানা ১০ দিন পর মোবাইলে ইন্টারনেট চালু হয়েছে। তবে ফোর–জি সেবায় ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপ, ইউটিউব ও টিকটক বন্ধ থাকবে। ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সেবায় ইউটিউব দেখা যাবে।

মোবাইল অপারেটর ও বিটিআরসি সূত্রে জানা গেছে, আজকের বৈঠকে অপারেটরদের ফেসবুক, ইউটিউব, টিকটক, হোয়াটসঅ্যাপসহ বিভিন্ন বার্তা আদান প্রদানের অ্যাপ বন্ধ রাখার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

তবে ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক এসব অ্যাপ বন্ধ রাখার বিষয়ে সুনির্দিষ্ট করে কিছু জানান নি। আজ রবিবার (২৮ জুলাই) বেলা তিনটার দিকে ফোর-জি চালু হয়েছে। এর আগে রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বিটিআরসি ভবনে এক ব্রিফিংয়ে প্রতিমন্ত্রী বিষয়টি জানান। তিনি বলেন, তিনদিনের জন্য ৫ জিবি করে বোনাস পাবেন গ্রাহকেরা।

গত ২৩ জুলাই থেকে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সেবা পাওয়া গেলেও সেখানে ফেসবুক, টিকটক বন্ধ রয়েছে। পাশাপাশি হোয়াটসঅ্যাপেও তেমন বার্তা আদান-প্রদানে করা যাচ্ছে না। তবে ইউটিউব চলছে।

কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে বিক্ষোভ ও সংঘাতের মধ্যে গত ১৭ জুলাই মধ্যরাত থেকে ফোর-জি নেটওয়ার্ক বন্ধ করায় দেশের মোবাইল ইন্টারনেট সেবা বন্ধ হয়ে যায়। এর পরদিন ১৮ জুলাই রাত পৌনে নয়টা থেকে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সংযোগও বন্ধ হয়ে যায়। এতে পুরো দেশই ইন্টারনেট-বিচ্ছিন্ন ছিলো।

অ্যাপ চালু হওয়ার বিষয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘নির্দিষ্ট করে কোনো অ্যাপ্লিকেশনের কথা বলছি না।  আমাদের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, গোয়েন্দা সংস্থার নির্দেশনা ও পরামর্শক্রমেই প্রযুক্তিগত সহায়তা দিচ্ছি। তাঁদের যখন যেখানে যে ধরনের সহযোগিতা প্রয়োজন হচ্ছে, একসঙ্গে কাজ করছি সহযোগিতা দিতে। কোনও নির্দিষ্ট প্ল্যাটফর্ম, ওয়েবসাইট ও অ্যাপ্লিকেশনের  কথা উল্লেখ করতে পারছি না।’

প্রতিমন্ত্রী  আরও বলেন, সরকার সম্পূর্ণভাবে কখনোই কোনও অ্যাপ বন্ধ করে নি। এটা নির্ভর করছে তাঁদের (সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহারকারী) আচরণের ওপর। তাঁরা যদি দেশের আইন, সংবিধান ও নিরাপত্তা বিবেচনায় রেখে দায়িত্বশীল আচরণ করে, তাহলে সহযোগিতা পাবে।

অনেকেই অনেকভাবে অনেক অ্যাপ ব্যবহার করছে বলে মন্তব্য করেন প্রতিমন্ত্রী। ভিপিএন ঝুঁকিপূর্ণ উল্লেখ করে নিরাপত্তা বিবেচনায় রেখে  এগুলো ব্যবহার থেকে বিরত থাকতে আহ্বান জানান তিনি।

প্রতিমন্ত্রী আরও বলেন, ‘বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সমর্থনে কাজ করত এমন ৫০টি পেজ ও অ্যাকাউন্ট ফেসবুক বন্ধ করে দিয়েছে। কিন্তু একই ধরনের কাজ বিএনপির পেজ থেকে বা সাজাপ্রাপ্ত আসামি তারেক জিয়া যেসব কনটেন্ট প্রচার করছে সেগুলো কেন বন্ধ করছে না। আবার শিশুদের অ্যাবিউজ, নারীদের প্রতি আক্রমণ, অসহিংসতা, সন্ত্রাস, অগ্নিসংযোগ, গুজব প্রসঙ্গে  তারা কোনও দায়িত্বশীল ভূমিকা রাখে নি।’  

আগামী ৩১ জুলাই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোকে ঢাকায় এসে ব্যাখ্যা দিতে অনুরোধ করা হয়েছে। তাঁরা যুক্তি ও ব্যাখ্যা দিয়ে যদি বোঝাতে পারে যে বাংলাদেশের ক্ষেত্রে কোনো বৈষম্য করছে না, তাহলে আলোচনার ভিত্তিতে সরকার সিদ্ধান্ত নেবে।

এক প্রশ্নের জবাবে প্রতিমন্ত্রী এফ কমার্স প্রতিষ্ঠানগুলোকে ডিজিটাল কমার্স হয়ে উঠতে পরামর্শ দেন।

বাংলাদেশ সম্পূর্ণ ইন্টারনেট বিচ্ছিন্ন ছিলো না
সরকারের পিকেআইভুক্ত যেসব প্রতিষ্ঠান ও জরুরি সেবা রয়েছে, সেখানে সব সময়ই ইন্টারনেট চলমান ছিল বলে জানিয়েছেন প্রতিমন্ত্রী। গুরুত্বপূর্ণ কিছু তথ্য পরিকাঠামোতে ইন্টারনেট যুক্ত রাখা হয়েছিলো বলে জানান তিনি। তিনি আরও বলেন, ‘আমরা কখনোই ইন্টারনেট বন্ধ রাখার পক্ষে না। আমরা কোনও অ্যাপ বন্ধ রাখি না।’

ব্রিফিংয়ে তিনি আরও বলেন,  গত ১৭ জুলাই থেকে ২৮ জুলাই ১০ দিনের মধ্যে বিভিন্ন পর্যায়ে মোবাইল নেটওয়ার্ক ফোর-জি সাময়িকভাবে কিছু কিছু জায়গায় বন্ধ ছিলো। ১৭ ও ১৮ জুলাই আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, গোয়েন্দা সংস্থার অনুরোধ, নির্দেশনা ও পরামর্শ সাপেক্ষে তাঁরা বিটিআরসি ও এনটিএমসি থেকে প্রযুক্তিগত সহায়তা দেন।

নিরাপত্তা ও শৃঙ্খলা রক্ষার স্বার্থে কিছু কিছু জায়গায় সাময়িকভাবে ইন্টারনেট বন্ধ ছিলো।

প্রতিমন্ত্রী ১৮ জুলাই মহাখালীতে ডেটা সেন্টার ক্ষতি হওয়ার প্রসঙ্গ টানেন। এ ছাড়া সারাদেশে শত শত কিলোমিটার ফাইবার কেবল পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে বলে জানান। তখন কেবল কুয়াকাটার সাবমেরিন কেবল স্টেশন চালু ছিলো বলে জানান তিনি। এভাবে জরুরি ভিত্তিতে বিভিন্ন বন্দর ও পর্যায়ক্রমে ব্রডব্যান্ড সেবা দেওয়া হয়। ফলে সম্পূর্ণভাবে বিচ্ছিন্ন না হলেও জরুরি সেবাগুলো ও আন্তর্জাতিক সেবাগুলো দেওয়া হয়েছে বলে তিনি জানান।