মাটি খুঁড়লেই বেরিয়ে আসছে ‘প্রাচীন’ পাথর হাঁড়ির টুকরো

মাটি খুঁড়লেই বেরিয়ে আসছে ‘প্রাচীন’ পাথর হাঁড়ির টুকরো

নিজস্ব প্রতিবেদন, বাঙলার কাগজ : সে প্রায় হাজার বছর আগের কথা। নরসিংদীর বেলাব উপজেলার বাজনাব ইউনিয়নের চন্দনপুর গ্রামের ওপর দিয়ে কয়রা নামে একটি বিশাল নদী বয়ে যেতো। এই নদীতে চলত লঞ্চ ও বড় বড় নৌকা। নরসিংদীর বিভিন্ন এলাকায় বাণিজ্য করতে দূরদূরান্ত থেকে ব্যবসায়ীরা আসতেন। কিন্তু কালের গতিতে নদীটি হারিয়ে গেছে। নদীর স্মৃতি হিসেবে চন্দনপুরের এক পাশে রয়ে গেছে ‘কয়রার খাল’। এই খালের কয়েক গজ দূরে মাটি খুঁড়তেই বেরিয়ে আসছে বিশাল গাছের টুকরো, ছোট-বড় পাথর ও মাটির তৈরি হাঁড়ির অংশবিশেষ। স্থানীয়দের ধারণা, এগুলো বহু বছর আগের জিনিস, যা কয়রা নদীর তলদেশে ছিলো। এসব সামগ্রী গবেষণা করলে হয়তো প্রত্ন এলাকা উয়ারী-বটেশ্বরের মতো চন্দনপুরেও আবিষ্কার হতে পারে হাজার বছর আগের মানুষের জীবনযাত্রার চিত্র।

চন্দনপুর গ্রাম থেকে মাইল দুয়েক দূরে প্রত্ন এলাকা উয়ারী-বটেশ্বর। ওই এলাকায় ইতোমধ্যে আড়াই হাজার বছর আগের প্রাচীন নানা নিদর্শন ও স্থাপনা আবিষ্কার করা হয়েছে। এ কারণে চন্দনপুর গ্রামে মাটি খননের পর বের হওয়া নিদর্শনগুলো প্রাচীন যুগের বলে মনে করছেন স্থানীয়রা। তাঁদের দাবি, এগুলো গবেষণা করলে অথবা আরও মাটি খুঁড়লে হয়তো মূল্যবান সামগ্রী বের হতে পারে এবং উয়ারী-বটেশ্বর প্রত্ন এলাকায় নতুন কিছু যোগ হতে পারে।

জানা গেছে, চন্দনপুর গ্রামের কয়েকজনের প্রায় ২০ বিঘা জমিতে দিঘি তৈরির জন্য মাটি খননের কাজ শুরু হয় এক মাস আগে। শ্রমিকেরা মাটি খোঁড়ার সময় দেখেন, মাটির নিচ থেকে বিশাল আকৃতির গাছের অংশ বেরিয়ে আসছে; যেগুলো আনুমানিক ৭ থেকে ৮০ হাত লম্বা। এ ছাড়া উঠে আসছে ছোট-বড় পাথর। তবে এখন পর্যন্ত স্থানীয় প্রশাসন কিংবা প্রত্নতত্ত্ববিদরা ওই এলাকা পরির্দশন করেন নি। স্থানীয়রা এসব গাছ ও গাছের টুকরো সংগ্রহ করে বাড়িতে নিয়ে লাকড়ি হিসেবে ব্যবহার করছেন। অনেকে আবার হাজার বছর আগের মূল্যবান গাছ মনে করে বাড়িতে সংরক্ষণ করছেন। পাথর ও মাটির তৈরি জিনিসপত্রও যে যার মতো নিয়ে যাচ্ছেন।

স্থানীয়রা জানান, যে জায়গা দিয়ে কয়রা নদী প্রবহমান ছিলো, সেখানে এখন ফসলি জমি, বাড়িঘর, ইটভাটা, রাস্তাঘাটসহ নানা স্থাপনা। এলাকাবাসীর ধারণা, হাজার বছর আগে বড় কোনও ভূমিকম্প বা প্রাকৃতিক দুর্যোগে মাটি ওলটপালট হয়। চন্দনপুর গ্রামের মাটিও ওলটপালট হয়। এতে কয়রা নদী ভরাট হয়ে যায়। অনেক গাছ, পাথর ও মাটির জিনিসপত্র নদীর তলদেশে ছিলো। এখন মাটি খুঁড়তেই এগুলো বেরিয়ে আসছে।

চন্দনপুর গ্রামের ষাটোর্ধ্ব মঞ্জু খন্দকার বলেন, শ্রমিকরা মাটি খননের সময় একের পর এক বড় বড় গাছ, পাথর ও মাটির তৈরি কিছু হাঁড়িপাতিল ও হাঁড়িপাতিলের ভগ্নাংশ বের হচ্ছে। এগুলো স্থানীয়রা বাড়িতে নিয়ে যাচ্ছে, কিছু আবার জমিতেই পড়ে আছে। আমার মনে হয়, এসব জিনিস প্রাচীন ও মূল্যবান।

প্রত্নতাত্ত্বিক সামগ্রী সংগ্রাহক ও লেখক হাবিবুল্লা পাঠান বাঙলার কাগজকে বলেন, উয়ারী-বটেশ্বর ও পার্শ্ববর্তী বিভিন্ন এলাকা থেকে এ পর্যন্ত মাটির নিচ থেকে অনেক প্রত্নসামগ্রী আবিষ্কৃত হয়েছে। চন্দনপুর উয়ারী-বটেশ্বর গ্রামের কাছাকাছি একটি গ্রাম। এখানে বর্তমানে মাটি খননের পর যেসব পাথর, মাটির তৈরি হাঁড়িপাতিল বের হয়ে আসছে, এগুলো অব্যশই গবেষণার দাবি রাখে। ওয়ারী গ্রামের পাশ দিয়ে প্রাচীনকালে কয়রা নদী প্রবাহিত ছিলো। নদীটি ছিলো প্রশস্ত। মাটি খননে যেসব বস্তু বের হয়ে আসছে, সেগুলো অস্তিত্বহীন কয়রা নদীর তলদেশে শত শত বছর ধরে মাটিচাপা মূল্যবান সামগ্রীও হতে পারে।

বেলাব উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) নাজমুল হাসান বাঙলার কাগজকে বলেন, কেউ এ ব্যাপারে লিখিতভাবে আমাদের অবগত করলে আমরা প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরে জানাবো।