মুক্তিযোদ্ধার কলাম : মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি ও বিজয়ের কথা

মুক্তিযোদ্ধার কলাম : মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি ও বিজয়ের কথা

দেবেশ চন্দ্র সান্যাল : : ১৯৭১ সাল। বাংলাদেশের স্বাধীনতার জন্য মহান মুক্তিযুদ্ধের সাল। বাঙালি জাতির গৌরবোজ্জ্বল অর্জনগুলোর মধ্যে মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে বিজয় অর্জন অন্যতম। ৩০ লাখ মানুষের রক্ত, ২ লাখ মা-বোনের সম্ভ্রম, ৩ লক্ষাধিক মা-বোনের নির্যাতন, নিপীড়ন এবং অন্যান্য ত্যাগের বিনিময়ে অর্জিত হয়েছে এ বিজয়। তাই মহান এ মাস উদ্‌যাপনে জাতীয় কর্মসূচির পাশাপশি বিভিন্ন রাজনৈতিক ও পেশাজীবী সংগঠনের পক্ষ থেকে নেওয়া হয়েছে নানা কর্মসূচি। প্রথমদিন পহেলা ডিসেম্বর বেলা ১১টায় সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের শিখা চিরন্তনে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়। বীর মুক্তিযোদ্ধাদের দাবি- পহেলা ডিসেম্বরকে মুক্তিযোদ্ধা দিবস হিসেবে ঘোষণা করা হোক। বাঙালির সুদীর্ঘ রাজনৈতিক ইতিহাসের শ্রেষ্ঠ ঘটনা ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধ। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে সশস্ত্র স্বাধীনতা সংগ্রামের এক ঐতিহাসিক ঘটনার মধ্য দিয়ে বাঙালি জাতির কয়েক হাজার বছরের- সামাজিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক স্বপ্নসাধ পূরণ হয় এ মাসে।

১৯৭১ সালের ডিসেম্বর মাসের শুরু থেকেই মুক্তিযোদ্ধাদের গেরিলা আক্রমণ আর ভারতীয় মিত্রবাহিনীর সমন্বয়ে গঠিত যৌথবাহিনীর জল, স্থল আর আকাশপথে সাঁড়াশি আক্রমণের মুখে বর্বর পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর পরাজয়ের খবর চারদিক থেকে ভেসে আসতে থাকে। এ মাসে সুদীর্ঘ ২৩ বছরের শোষণ-বঞ্চনা আর অত্যাচার-নির্যাতনের বিরুদ্ধে ৯ মাস সশস্ত্র যুদ্ধ করে বিজয়ের দ্বারপ্রান্তে উপনীত হয় বীর বাঙালি। মুক্তিযুদ্ধের পুরো ৯ মাস ধ্বংসযজ্ঞ চালালেও ডিসেম্বরে এসে পাকিস্তানি বাহিনী এ দেশের শ্রেষ্ঠ সন্তান বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করে বাঙালি জাতিকে মেধাশূন্য করতে তৎপর হয়ে উঠে। ১০ ডিসেম্বর হতে ১৪ ডিসেম্বর পর্যন্ত তালিকা করে করে বাড়ি থেকে ধরে এনে হত্যা করা হয় এ দেশের তিন শতাধিক খ্যাতিমান শিক্ষক, সাহিত্যিক, সাংবাদিক, চিকিৎসকসহ বুদ্ধিজীবীদের। তা সত্ত্বেও তারা বাঙালিদের দমাতে পারে নি। অবশেষে ১৬ ডিসেম্বর ১৯৭১ সালে ঢাকার ঐতিহাসিক রেসর্কোস ময়দানে (বর্তমানে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) পাকিস্তানি সেনাবাহিনী আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য হয়। যেখান থেকে ৭ মার্চ স্বাধীনতার স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম’ বলে স্বাধীনতার ডাক দিয়েছিলেন; সেখানেই পরাজয়ের দলিলে স্বাক্ষর করেন পাকিস্তানি জেনারেল নিয়াজী। এর মধ্য দিয়ে রচিত হয় নতুন ইতিহাস। বাংলার আকাশে উদিত হয় নতুন সূর্য। 

আসলে সত্যিকার অর্থে মুক্তিযুদ্ধের সূচনা হয়েছিলো অনেক আগেই। যেমন- ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন, ১৯৫৪ সালের যুক্তফ্রন্টের সাধারণ নির্বাচন, ১৯৬২ সালে শিক্ষা সংকোচন নীতির বিরুদ্ধে আন্দোলন, ১৯৬৬ সালের ৬ দফা আন্দোলন, ১৯৬৮ সালের আগরতলা মামলা, ১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থান, ১৯৭০ সালের সাধারণ নির্বাচন, ১৯৭১ সালের ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণ, ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চের প্রথম প্রহরে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কর্তৃক বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা ইত্যাদি। ২৫ মার্চ রাতে পাকিস্তানের সামরিক শাসক নিরস্ত্র জনতার ওপর অতর্কিতে আক্রমণ শুরু করে। তদানীন্তন বাঙালির অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে গ্রেপ্তার করে বিমানযোগে পশ্চিম পকিস্তানের ফয়সলাবাদ জেলে আটক রাখা হয়। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে ১০ এপ্রিল ১৯৭০ সালের সাধারণ নির্বাচনে নিবাচিত এমএনএ ও এমপিএ-দের নিয়ে গণপরিষদ গঠন করা হলো। ভারতের কলকাতায় আলোচনা করে এসে আগরতলায় বাংলাদেশের প্রথম অস্থায়ী সরকার গঠন করা হয়। ১৭ এপ্রিল কুষ্টিয়া জেলার মেহেরপুর মহকুমার (বর্তমানে জেলা) বৈদ্যনাথতলা গ্রামের আম্রকাননে স্বাধীন বাংলাদেশের সরকার আনুষ্ঠানিকভাবে শপথ গ্রহণ করে। বৈদ্যনাথতলা নাম করণ করা হয় মুজিবনগর। মুজিবনগর বাংলাদেশের অস্থায়ী রাজধানী ঘোষণা করা হয়ে। এই সরকারকে বলা হয় মুজিবনগর সরকার। সরকারের প্রধান বা রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান (তিনি তখন পাকিস্তানের কারাগারে বন্দি ছিলেন) এবং উপ-রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন সৈয়দ নজরুল ইসলাম (বঙ্গবন্ধুর অনুপস্থিতিতে অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি)। তাজউদ্দীন আহমদকে প্রধানমন্ত্রী, ক্যাপ্টেন এম মনসুর আলীকে অর্থমন্ত্রী এবং এএইচএম কামরুজ্জামানকে স্বরাষ্ট্র ও পুনর্বাসনমন্ত্রী করে গঠন করা হয় স্বাধীন বাংলাদেশের সরকার। তখন অস্থায়ী সরকারের মুক্তিবাহিনীর প্রধান কমান্ডার এবং মেজর জেনারেল আবদুর রব চিফ অব স্টাফ নিযুক্ত হন। 

পাকিস্তানের কারাগারের বন্দি বঙ্গবন্ধুর অনুপস্থিতিতে উপ-রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলামে করা হয় অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি। এদিন স্বাধীনতার ঘোষণার পাঠও অনুমোদন করা হয়। আওয়ামী লীগের চিফ হুইপ দিনাজপুরের সংসদ সদস্য অধ্যাপক মো. ইউসুফ আলী গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র পাঠ করেন এবং অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম মন্ত্রিসভার সদস্যদের শপথবাক্য পাঠ করান। একাত্তরের ১৭ এপ্রিলের সেই মাহেন্দ্রক্ষণে তাজউদ্দীন আহমদ ও সৈয়দ নজরুল অন্য নেতাদের সঙ্গে নিয়ে সকাল ৯টায় দিকে বৈদ্যনাথতলায় পৌঁছান। গ্রামবাসীর পাশাপাশি দেশি-বিদেশি শতাধিক সাংবাদিক আসেন। তাঁদের মধ্যে ছিলেন- ব্রিটিশ সাংবাদিক মার্ক টালি ও পিটারদ হেস। বহুল প্রতীক্ষিত শপথগ্রহণ অনুষ্ঠান শুরু হয় বেলা ১১টায়। মেজর আবু উসমান চৌধুরীর পৌঁছাতে বিলম্ব হওয়ায় ক্যাপ্টেন মাহবুব উদ্দীন আহমেদ ১২ জন আনসারের একটি ছোট্ট দল নিয়ে নেতৃবৃন্দকে অভিবাদন জানান। অভিবাদন গ্রহণের পর স্থানীয় শিল্পীদের জাতীয় সংগীত পরিবেশনের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদ দেশবাসীর উদ্দেশে বেতার ভাষণ দেন, যা আকাশবাণী থেকে একাধিকবার প্রচারিত হয়। তাজউদ্দীনের ভাষণের মধ্য দিয়েই দেশ-বিদেশের মানুষ জানতে পারে বাংলাদেশের মুক্তি সংগ্রাম পরিচালনার লক্ষ্যে একটি আইনানুগ সরকার গঠিত হয়েছে। এরই পথপরিক্রমায় পরেরদিন দেশ-বিদেশের পত্র-পত্রিকা এবং সংবাদমাধ্যমে ১৭ এপ্রিল শপথ গ্রহণের এই সংবাদ বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে ছাপা হয়। 

বাংলাদেশ সরকারের আনুষ্ঠানিক সূচনা বা আনুষ্ঠানিক আত্মপ্রকাশ হিসেবে দিনটির ঐতিহাসিক তাৎপর্য অত্যন্ত গুরুত্বর্পূণ। আমি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আহ্বানে সাড়া দিয়ে মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করি।

২৩ জুলাই ১৯৭১ ও ৬ শ্রাবণ ১৩৭৮ বঙ্গাব্দ, রোজ শুক্রবার আমাদের প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য অ্যাডভোকেট জনাব মো. আব্দুর রহমান স্যারের সঙ্গে আমরা ২২ জন নৌকায় রওনা হলাম মুক্তিযোদ্ধা হওয়ার স্বপ্ন বাস্তবায়নে ভারতের উদ্দেদ্দে। মধ্য রাতে দেখেশুনে মাঝিরা নৌকা চালায়। পরে সুজানগর উপজেলার সাতবাড়িয়া নামক স্থানের কাছে আমাদেরকে নামিয়ে দেওয়া হলো। হেঁটে হেঁটে সুজানগরের এক আওয়ামী লীগ নেতার বাড়িতে উঠলাম। আমাদের পরিকল্পনা ছিলো- সুজানগরের কাছের নদী পার হয়ে কুষ্টিয়া জেলার প্রত্যন্ত এলাকা হয়ে ভারতে যাবো। আমাদের রাস্তা চিনিয়ে নেওয়ার জন্য এক গাইডার আছেন।

জানতে পারলাম দিনে নদী পাড় হওয়া অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। কারণ দিনের বেলা পাকিস্তানি হানাদার সৈন্যরা স্পিডবোট নিয়ে নদীপথ টহল দেয়। সন্দেহ হলে গুলি করে নৌকা নদীতে ডুবিয়ে দেবে অথবা ধরে নিয়ে নির্যাতন করে নৃশংসভাবে হত্যা করবে। সারাদিন সুজানগরে থাকলাম। রাতের খাবার খেয়ে রাতে ৯টার দিকে নদীর পার হওয়ার জন্য ভাড়া করা ছইওয়ালা নৌকায় উঠলাম। রাত একটার দিকে কুষ্টিয়া জেলার একটি গ্রামে পৌঁছালাম। এক বাড়িতে অতিথি হলাম। বাড়ির মালিক কাঁঠাল গাছ থেকে কাঁঠাল পেড়ে প্রথমে মুড়ি ও কাঁঠাল খাওয়ালেন। ওই এলাকার লোকজন কাকা ও জ্যাঠাকে বড় আব্বা ছোট আব্বা বলে ডাকা ডাকতেন। যা বাড়ির মালিকের কাছ থেকে জানলাম। তবে ওখানে অবস্থান করাও অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। গ্রামে পাকিস্তানি দালাল- শান্তি কমিটির লোক আছে। গ্রাম থেকে অল্প কিছু দূরেই পাকিস্তানি হানাদার সৈন্য ও রাজাকার ক্যাম্প আছে। পাকিস্তানি দালালরা টের পেলে তারা গিয়ে পাকিস্তানি হানাদার সৈন্য ক্যাম্পে অথবা রাজাকাদের ক্যাম্পে সংবাদ দেবে। হানাদারেরা সংবাদ পেলে এসে ধরবে। নির্যাতন ও নৃশংসভাবে হত্যা করবে। আশ্রয়দাতার বাড়িঘর লুটরাজ করাবে, অগ্নিসংযোগ করে পুড়িয়ে দেবে। বাড়ির মালিক ও অন্যান্যদেরকে ধরে নিয়ে নির্যাতন ও হত্যা করতে পারে। তিনি তাড়াহুড়া করে ডাল-ভাত রান্না করে আমাদের খাবার ব্যবস্থা করলেন। আমরা তাড়াহুড়া করে ডাল-ভাত খেয়ে রাত ৪টার দিকে পায়ে হেঁটে ভারতের উদ্দেশ্যে রওনা হলাম। রাতটি ছিলো মেঘাচ্ছন্ন। আবার গুঁড়িগুঁড়ি বৃষ্টিও হচ্ছিলো। এটেল মাটির রাস্তা। বৃষ্টিতে ভিজে পিচ্ছিল হয়ে গেছে। এমপিএ স্যারের হেঁটে চলা কষ্ট হচ্ছে। সবাই উনাকে ধরে ধরে হাঁটিয়ে নিয়ে গেলেন। ভোরের দিকে বাংলাদেশের কুষ্টিয়া জেলার দৌলতপুর থানার চিলমারী ইউনিয়নের খারিজাথাক গ্রাম দিয়ে সীমান্ত অতিক্রম করলাম। ভারতের নদীয়া জেলার জলঙ্গী সীমান্তে পৌঁছালাম। পাশেই ছিলো ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফ’র ক্যাম্প। উনারা আমাদেরকে সহযোগিতা করলেন। আমরা স্বস্তির নিশ্বাস ফেললাম। যাঁর যাঁর মতো প্রাতঃক্রিয়াদি সেরে হাত মুখ ধুয়ে ফ্রেশ হলাম। সকালের খাবার খেলাম। মানি একচেঞ্জ দালালদের কাছ থেকে টাকা বদলিয়ে নিলাম। এমপিএ স্যার আমাদেরকে কামারপাড়া ইয়ুথ ক্যাম্পে পৌঁছানোর জন্য বাস ভাড়া করলেন। মালদহ শহরে গিয়ে আমাদের যাত্রা বিরতি করা হলো। এমপিএ স্যার কাঁঠাল আর মুড়ি কিনে আমাদের খাওয়ালেন। তারপর আমাদেরকে মুক্তিযোদ্ধা ভর্তি ও প্রাথমিক প্রশিক্ষণ কেন্দ্র কামারপাড়া ইয়ুথ ক্যাম্পে পৌঁছানোর ব্যবস্থা করে দিয়ে তিনি অস্থায়ী সরকারের অফিস কলকাতার উদ্দেশ্যে যাত্রা করলেন। মালদহ থেকে বাস ছাড়লো। রাত ৯টার দিকে আমরা গিয়ে পৌছাঁলাম কামারপাড়া ইয়ুথ ক্যাম্পে। ক্যাম্পের কর্তৃপক্ষ আমাদের থাকা ও খাবারের ব্যবস্থা করলেন। পরদিন মুক্তিযোদ্ধা রিক্রুটমেন্ট কর্তৃপক্ষ আমাদের প্রাথমিক ট্রেনিং করালেন। তবে আমার বয়সের স্বল্পতার কারণে ভর্তি করাতে চাইলেন না। ভর্তি কর্তৃপক্ষের একটি দল আমার একটি সাক্ষাৎকার নিলেন। আমার দেশপ্রেম, সাহসী মনোভাব ও অন্যান্য অঙ্গীকারের কথা শুনে ভর্তি করালেন। প্রাথমিকভাবে ট্রেনিং ক্যাম্পে শুধু আমাদের জাতীয় সংগীত গাওয়ানো হতো আর পিটি প্যারেড করানো হতো। কদিন কামারপাড়া যুব প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে থাকার পর আমাকে এবং আরও ৫ জনকে ট্রানজিট ক্যাম্প থেকে ট্রান্সফার করা হলো মালঞ্চ ক্যাম্পে। একদিন পর মালঞ্চ ক্যাম্প থেকে ট্রান্সফার করা হলো কুড়মাইল ট্রানজিট ক্যাম্পে। তারও একদিন পর কুড়মাইল থেকে আমাদেরকে আনা হলো পতিরাম ক্যাম্পে। দুইদিন পর পতিরাম ক্যাম্প থেকে একযোগে ইন্ডিয়ান আর্মি লরিতে আমাদের ৫০ জনকে নিয়ে আসা হলো ভারতের দার্জিলিং জেলার শিলিগুড়ি মহকুমার পানি ঘাটা নামক ইন্ডিয়ান আর্মি ট্রেনিং সেন্টারে। এই সেন্টারটি ছিলো পাহাড়ের মধ্যে বনাঞ্চল। ক্যাম্পটি ছিলো কার্শিয়াং পাহাড় হতে নেমে আসা একটি ক্যানেলের দক্ষিণ পাশে অবস্থিত। ক্যাম্পে তাবুর মধ্যে আমাদের থাকার সিট করে দিলো। আমি রবীন্দ্র নাথ বাগচী, মো. নজরুল ইসলাম আর রতন কুমার দাস এক তাবুর মধ্যে সিট নিলাম। আমাদের ব্যবহারের জন্য প্রত্যেককে একটা মগ, একটা প্লেট ও একটা গেঞ্জি এবং ২টি প্যান্ট দিলো। প্রথমদিনেই প্রশিক্ষণের শুরুতে ট্রেনিং কমান্ডার শিখ সৈন্য ক্যাম্পের নিয়মকানুন এবং চারপাশের কথা বললেন। প্রধান প্রশিক্ষক শিখ সেনা ডিএস ভিলন বললেন, ক্যাম্পের তিনদিকে বিভিন্ন হিংস্র প্রাণী ও বন্যমানুষ আছে। জঙ্গলে কিছু দুষ্কৃতিকারী মানুষ ও নকশাল আছে। যারা বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের পক্ষে নয়। 

এদিকে জলঙ্গি থেকে বাসে যেতে দেখলাম। শুধু মানুষ আর মানুষ। বাংলাদেশ থেকে দলে দলে হিন্দু শরণার্থীরা এখানে এসে জনসংখ্যা বাড়িয়ে দিয়েছে। রাস্তার দু পাশে তাবুর মধ্যে গাদাগাদি হয়ে শরণার্থীদের বসবাস। সে যে কী করুণ দৃশ্য, তা ভাষায় প্রকাশ করা যায় না। শুধু অনুভব করা যায়। আমাদের নিয়ে যাওয়া হলো কামারপাড়া ইয়ুথ ক্যাম্পে।

পরে আমরা উপস্থিত হলাম পানিঘাটা ট্রেনিং ক্যাম্পে। প্রশিক্ষণের ক্যাম্পটি ছিলো ৭ নম্বর সেক্টরের আওতাধীন। ক্যাম্পে সারিবদ্ধভাবে তাঁবু নির্মাণ করা হয়েছে। এক তাঁবুর মধ্যে মাটিতে খেজুরের পাটি, তার ওপর শতরঞ্জির বিছানা।

যাতায়াতের দিন ব্যতীত আমাদের ২১ দিনের প্রশিক্ষণ হলো। প্রশিক্ষণ হলো ১. থ্রি-নট থ্রি রাইফেল, এলএমজি, এসএলআর, স্ট্যান্ডগান, হ্যান্ড গ্রেনেড ও অন্যান্য অস্ত্র এবং এক্সপ্লোসিভের উপর। ট্রেনিং শেষে আমাদেরকে নিয়ে আসা হলো ৭ নম্বর সেক্টরের হেড কোয়ার্টার তরঙ্গপুরে। তরঙ্গপুর থেকে আমাদের নামে নামে অস্ত্র ও গোলাবারুদ ইস্যু করা হলো। ১০ জনের সমন্বয়ে একটি গ্রুপ করা হলো। আমাদের সিরাজগঞ্জ জেলার বেলকুচি উপজেলার তামাই গ্রামের এম এ মান্নান আমাদের গ্রুপ লিডার নিযুক্ত হলেন। ডেপুটি লিডার নিযুক্ত হলেন শাহজাদপুর উপজেলার জামিরতা গ্রামের রবীন্দ্র নাথ বাগচী। আমার নামে বৃটিশ থ্রি-নট থ্রি ১টি রাইফেল, এক ম্যাগজিন গুলি এবং হেলমেট ইস্যু করলেন। আর সব গোলাবারুদ, মাইন, ২'' মর্টার ও অন্যান্য (এক্সপ্লোসিভ) সরবরাহ করলেন আমাদের কমান্ডার স্যার এম এ মান্নান সাহেবের কাছে। আমাদের মাসিক ৬০ টাকা হারে রেশনিং অ্যালাউন্স ও ৫০ টাকা হারে পকেট মানি দিলেন। সনাতন ধর্মানুসারে যুদ্ধ জয়ের জন্য দুর্গাস্তব করতে হয়। তাই তরঙ্গপুর বাজার থেকে আমি একখানা শ্রী শ্রী চন্ডী গ্রন্থ ক্রয় করলাম। যুদ্ধে যে কোনও সময় মারা যেতে পারি। আমি মারা গেলে রণাঙ্গনের অন্যান্যসহ যোদ্ধারা যাতে জাতীয় পতাকা দিয়ে মোড়ায়ে আমার মৃতদেহটা জলে ভাসিয়ে দিতে পারেন, সেজন্য একটি বাংলাদেশের মানচিত্র খচিত জাতীয় পতাকা  ক্রয় করলাম। রণাঙ্গনে উজ্জীবিত হওয়ার জন্য স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের অনুষ্ঠান ও সংবাদাধি শোনার জন্য একটি ৪ ব্যান্ড রেডিও ক্রয় করলাম। ৪ সেপ্টম্বর তরঙ্গপুর থেকে আমরা রওনা হলাম। কালিয়াগঞ্জ পর্যন্ত বাসে এসে রেলওয়ে স্টেশন থেকে ট্রেনে উঠলাম। শিলিগুড়ি রেলওয়ে জংশন স্টেশনে এসে আমাদেরকে ট্রেন বদলাতে হলো। শিলিগুড়ি স্টেশনে ৩/৪ ঘণ্টা অবস্থানের পর আসামগামী ট্রেন এলো। আসামগামী ট্রেন ধরে আসাম জেলার ধুবরী স্টেশনে নামলাম। তারপর বাসে ৫ সেপ্টেম্বর মানিকারচরে পৌঁছালাম। মানিকারচর পৌঁছাতে পৌঁছাতে রাত ৯টার মতো হয়ে গেলো। ওই রাত মানিকারচরে একটি বোর্ডিংয়ে থাকলাম। পরদিন সকালে নদী পার হয়ে এলাম রংপুর জেলার কুড়িগ্রাম মহকুমার (বর্তমানের জেলা) রৌমারী ক্যাম্পে। আমাদের স্নান, খাওয়া-দাওয়ার ব্যবস্থা করা হলো। সিরাজগঞ্জে যমুনার চরে পৌঁছানোর চুক্তিতে (কমান্ডার) স্যার একটি ছইওয়ালা নৌকা ভাড়া করলেন। ৬ সেপ্টেম্বর রাতের খাবার খেয়ে রাত ৯টার দিকে আমাদের নৌকা ছাড়লো। নৌকা বাহাদুরবাদ ঘাটের সম্মুখ দিয়ে আসতে হয়। রৌমারী ক্যাম্প থেকে আমরা জানতে পেরেছিলাম, বাহাদুরাবাদ ঘাট এলাকা অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। ঘাটের অদূরে পাকিস্তানি সৈন্য ও রাজাকার ক্যাম্প আছে। তারা ভয়ানক খারাপ। তারা স্পিডবোট দিয়ে রাতে নদী টহল দেয়। মুক্তিযোদ্ধাদের নৌকা পেলে ধরে নিয়ে যায়। ক্যাম্পে নিয়ে অমানুষিক অত্যাচার করে নৃশংসভাবে হত্যা করে। আমাদের কমান্ডার স্যার নির্দেশ দিলেন, আমরা সবাই নৌকার মধ্যে পজিশন অবস্থায় থাকবো। পাকিস্তানি হায়েনারা ধরতে এলে আমরা ধরা দেবো না, যুদ্ধ করবো। যুদ্ধ করে শহিদ হবো। কিন্তু ওদের হাতে ধরা দেবো না। রাত ২টার দিকে আমরা (বাহাদুরাবাদ) ঘাট এলাকা অতিক্রম করতে থাকলাম। ঘাট থেকে হানাদারদের সার্চ লাইটের আলো এসে বার বার আমাদের নৌকার উপর পড়ছিলো। ভগবানের কৃপায় ওরা আর স্পিডবোট নিয়ে ধরতে এলো না। আমরা ঝুঁকিপূর্ণ বাহাদুরাবাদ ঘাট এলাকা অতিক্রম করলাম। আমাদের সঙ্গে চিড়া ও গুড় ছিলো। ভোরে এক জমির মধ্যে নৌকা ঢুকিয়ে দেওয়া হলো। আমরা সবাই খেতের মাঠে প্রাতঃক্রিয়া সারলাম। আর চিড়া-গুড় দিয়ে সকালের খাবার খেলাম। তারপর মাঝিরা নৌকা চালনো শুরু করলেন। দেখেশুনে নৌকা চালাতে থাকলেন। নৌকাতেই ডাল-ভাত রান্না করে আমাদের খাওয়ালেন। ৪ দিন নৌকা চলার পর ৫ দিনের দিন মধ্যরাতে আমরা বেলকুচি থানার সম্মুখভাগে যমুনার চরে পৌঁছালাম। এই চরটি ছিলো হানাদারমুক্ত এলাকা- টাঙ্গাইল জেলার সিংগুলির চরের নিকট। পরেরদিন রাতে যমুনা নদী পার হয়ে চলে এলাম বেলকুচি-কামারখন্দ নিবার্চনি এলাকার এমএনএ অ্যাডভোকেট জনাব মো. আব্দুল মোমিন তালুকদারে গ্রামের বাড়িতে। এমএনএ স্যার বাড়িতে ছিলেন না। তিনি ভারতে গিয়ে ছিলেন। তাঁর ভাই জনাব মো. আব্দুর রশিদ তালুকদার আমাদেরকে সহযোগিতা করলেন। তিনি আমাদের থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা করলেন। আমরা একদিন রাতে এই গ্রামে এবং অন্যদিন রাতে অন্যগ্রামে শেল্টার নিয়ে নিয়ে থাকতে থাকলাম। প্রতিদিন সকালে আমরা অস্ত্রে ফুল থ্রু মারতাম। অস্ত্র পরিস্কার করে তেল দিতাম। তখন গুটি কয়েক স্বাধীনতা বিরোধী ছাড়া অধিকাংশ মানুষ ছিলো মুক্তিযুদ্ধ ও আওয়ামী লীগের পক্ষে। তবুও অনেকেই পাকিস্তানি হানাদার ও রাজাকারদের ভয়ে আমাদের থাকার জায়গা ও খাবার দিতে চাইতেন না। অধিকাংশ গ্রামেই ছিলো শান্তি কমিটির লোক ও রাজাকার। আমাদের সন্ধান জানলে পাকিস্তানের দালাল ও রাজাকার ক্যাম্পে খোঁজ দিয়ে নিয়ে এসে বাড়িঘর জ্বালিয়ে দেবে, লুটতরাজ করাবে, বাড়ির মালিককে ধরে নির্যাতন করবে। এক্ষেত্রে গ্রামে হত্যা, গণহত্যা এবং নারী নির্যাতনের মতো প্রভৃতি মানবতাবিরোধী কর্মকাণ্ড চালাতে পারে। তবে কিছু বাড়ির মালিক ছিলেন নির্ভীক। তাঁরা আশ্রয় ও খাবার দিতেন। আমরা কখনও কখনও স্কুলে আশ্রয় নিয়ে থাকতাম। গ্রামের অধিকাংশ মানুষ গোপনে আমাদেরকে খাদ্য সরবরাহ করতেন। আমাদের সঙ্গে সব সময় চিড়া-গুড় থাকতো। কোনও দিন খাবার পেতে সমস্যা হলে, আমরা চিড়া-গুড় খেয়ে থাকতাম। রাত-দিন আমরা নিজেরা পর্যায়ক্রমে নিজেদেরকে পাহারা দিতাম। এভাবে কয়েকদিন কয়েকটি গ্রামে থাকলাম। মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করতে ইচ্ছুক কিছু যুবককে সংক্ষিপ্ত প্রশিক্ষণ করিয়ে আমাদের সঙ্গে নিলাম। তারা রেকি ও অন্যান্য কাজে আমাদেরকে সহযোগিতা করতো। আমরা কোনও থানা, পাকিস্তানি হানাদার ক্যাম্প, রাজাকার ক্যাম্পে আক্রমণ করার পূর্বে রেকি  করতাম। আমরা ৩টি হিট অ্যান্ড রান কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করেছি। আমরা ১. বেলকুচি থানা আক্রমণ যুদ্ধ ২. কালিয়া হরিপুর রেলওয়ে স্টেশন সংলগ্ন রাজাকার ক্যাম্প অ্যাম্বুস ৩. বেলকুচি থানার কল্যাণপুর যুদ্ধ এবং ৪. শাহজাদপুর উপজেলার ধীতপুর নামক ভয়াবহ যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছি। 

সকল যুদ্ধে পাকিস্তানি হানাদার এবং এ দেশীয় দোসর রাজাকারদের বিরুদ্ধে সম্মুখ যুদ্ধে করে আমরা বিজয়ী হয়েছি। ধীতপুর যুদ্ধে বিজয়ী হয়ে আমাদের গ্রুপ শেল্টার নিয়েছিলাম জামিরতা হাইস্কুলে। অস্ত্র জমা দেওয়ার আগ পর্যন্ত এই স্কুলে আমরা ক্যাম্প করে ছিলাম। 

আমার কারণে রাজাকারদের আলটিমেটামে আমার গোটা পরিবারকে জীবন বাঁচাতে ভারতের আসামের মানিকারচর শরণার্থী শিবিরে আশ্রয় নিতে হয়েছিলো। স্বাধীনতা যুদ্ধকালীন বাংলাদেশ থেকে প্রায় এক কোটি মানুষ ভারতের বিভিন্ন শরণার্থী ক্যাম্পে আশ্রয় নিয়েছিলো। মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় এ দেশের ধর্মীয় সংখ্যালঘু পরিবারগুলো পাকিস্তানি সৈন্য ও তাদের এ দেশীয় দোসর- রাজাকার, আলবদর, আল শামস্‌ ও পাকিস্তানি অন্যান্য দালালদের টার্গেট ছিলো।  

১৪ ডিসেম্বর কোনও সংঘাত ছাড়াই শাহজাদপুর থানা শত্রুমুক্ত হয়। দীর্ঘ নয়মাসের সংগ্রাম তথা রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ শেষে আসে ১৬ ডিসেম্বর। 

সবার বাধভাঙ্গা আনন্দ। তবে এ আনন্দ অর্জিত হয় লাখ লাখ শহিদের রক্তের বিনিময়ে। আর এর সঙ্গেই সমাপ্ত ঘটে মহান মুক্তিযুদ্ধের। 

পৃথিবীর বুকে প্রতিষ্ঠিত হয় একটি স্বাধীন-সার্বভেীম দেশ, লাল-সবুজের বাংলাদেশ। 

পরবর্তীতে বিজয়ী মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে ন্যাশনাল মিলিশিয়া ক্যাম্প প্রতিষ্ঠা করা হয়। ২৪ জানুয়ারি রোববার আমাদের গ্রুপের সবাই সিরাজগঞ্জ সদরের ইব্রাহীম বিহারী বাসায় অস্ত্র ও গোলাবারুদ রবীন্দ্র নাথ বাগচীর নিয়ন্ত্রণে জমা দিয়ে রওনা হলাম বাড়ির উদ্দেশ্যে। আমরা দুই সহোদর একই গ্রুপের মুক্তিযোদ্ধা ও সহযোদ্ধা রতন কুমার দাস, আব্দুল হামিদ তালুকদার, মুক্তি মো. শামসুল হক, মো. নজরুল ইসলাম ও  অন্যান্যরা। আমরা দুই ভাই একসঙ্গে বাড়ি পৌঁছে গেলাম। শুধু বাড়ির লোকই নয়, গ্রামের অনেক লোকই আমাদের দেখতে এলো; আদর করলো। পাশাপাশি সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ডাকে সাড়া দিয়ে আমরা মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে দেশটাকে স্বাধীন করেছি, সেজন্য বঙ্গবন্ধুকেও স্মরণ করা হলো।

পাকিস্তানের পদলেহী ব্যক্তি ছাড়া দেশের সাড়ে সাত কোটি মানুষের অধিকাংশ ছিলেন মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের শক্তি।

১৬ ডিসেম্বর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জনসম্মুখে মাথা নিচু করে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর প্রধান নিয়াজী আত্মসমর্পণ করেন। পরাজয় মেনে নিয়ে তিনি আত্মসমর্পণ দলিলে স্বাক্ষর করতে বাধ্য হন। ১৬ ডিসেম্বর মহান বিজয় দিবসের পর আমি ভারতে গিয়ে আমাদের কারণে রাজাকারদের আলটিমেটামে ভারতের আসামের মানিকারচর শরণার্থী ক্যাম্পে আশ্রয় নেওয়া আমাদের পরিবারকে দেশে ফিরিয়ে আনলাম। মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে আমরা একটি অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ পেয়েছি। আমরা সবুজের বুকে শহিদের রক্তের প্রতীক সূর্যাকৃতির বৃত্ত খচিত জাতীয় পতাকা, একটি স্বাধীন ভূখণ্ড পেয়েছি। 

বিশ্ব মানচিত্রে বাংলাদেশের স্থান হয়েছে অনেক উপরে। 

বিজয় দিবস আমাদের কাছে বিজয়ী জাতি হিসাবে অত্যন্ত আনন্দের। আবার বেদনা-বিদুরের দিনও। যাঁরা পাকিস্তানি হানাদার সৈন্য ও তাদের দোসরদের জ্বালাও-পোড়াও, হত্যা, গণহত্যা, ধর্ষণ, নির্যাতন, নিপীড়ন, বুদ্ধিজীবী হত্যা, বাস্তুহারা ও অন্যান্য মানবতাবিরোধী অত্যাচারের শিকার হয়েছেন, তাঁদের জন্য খারাপ লাগে। তাঁদের প্রজন্ম ও পরিবারের কাছে মুক্তিযুদ্ধের সময় অত্যন্ত বেদনা বিদুর। 

প্রতি বছর আমরা বিজয় দিবসকে বিভিন্ন কর্মসূচির মাধ্যমে জাতীয় দিবস হিসেবে উদ্‌যাপন করে থাকি। বাংলাদেশ হাজার হাজার বছর ধরে মাথা উঁচু করে বাঁচবে এটাই আমার প্রত্যাশা।

লেখক : বীর মুক্তিযোদ্ধা ও অবসরপ্রাপ্ত ব্যাংকার।

ঠিকানা : বীর মুক্তিযোদ্ধা দেবেশ চন্দ্র সান্যাল, পিতা : দ্বিজেন্দ্র নাথ সান্যাল, মাতা: নিলীমা রানী সান্যাল, গ্রাম ও ডাকঘর : রতন কান্দি, ইউনিয়ন : হাবিবুল্লাহনগর, উপজেলা : শাহজাদপুর, জেলা : সিরাজগঞ্জ। গেজেট নং-বে-সামরিক সিরাজগঞ্জ- ১৬৭৯। ভারতীয় প্রশিক্ষণ- এফএফ নং- ৪৭৪২। সমন্বিত তালিকা জেলাভিত্তিক- ১৬১১, উপজেলা ভিত্তিক- ১৫১, ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন সিস্টেম নং- ০১৮৮০০০১৪১১।