ভাষার মাসে বাংলালিপি’র কর্মশালা

ভাষার মাসে বাংলালিপি’র কর্মশালা

নিজস্ব প্রতিবেদন, বাঙলার কাগজ : বাংলা বর্ণমালার স্বরবর্ণ ও ব্যঞ্জনবর্ণের মোট ৫০টি বর্ণ নিয়ে অনুষ্ঠিত হয়ে গেলো ‘বর্ণের খুঁজে খুদে শিল্পীরা’ শীর্ষক বাংলালিপির কর্মশালা।

বৃহস্পতিবার (১৫ ফেব্রুয়ারি) রাজধানীর পশ্চিম নাখালপাড়ায় ফেভিক্রিল ও মনসিজ ক্রাফটের পৃষ্ঠপোষকতায় এ কর্মশালার আয়োজন করা হয়।

কর্মশালায় অংশগ্রহণকারী খুদে শিল্পী ও প্রশিক্ষকদের হাতে সনদপত্র তুলে দেন দেশবরেণ্য লিপিশিল্পী ও হ্যান্ডরাইটিং অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশে’র সভাপতি খোরশেদ আলম ভূঁইয়া। দিনব্যাপী এই কর্মশালায় প্রশিক্ষক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মনসিজ আর্ট একাডেমির প্রতিষ্ঠাতা ও পরিচালক শিল্পী সাদিয়া শারমিন, ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের সাবেক সনদ লেখক জিয়াউর রহমান ও বুলবুল একাডেমি অব ফাইন আর্টস (বাফা) এর প্রশিক্ষক শিল্পী শামীম হোসাইন।

প্রশিক্ষক শিল্পী সাদিয়া শারমিন বলেন, সেই ছোটবেলা থেকে শিশুরা মায়ের সঙ্গে হাত ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে অ, আ, ক, খ লেখা শুরু করে। বাংলা বর্ণ শেখার এই প্রক্রিয়ায় রংয়ের ব্যবহার তেমন হয় না বললেই চলে। শিশুরা শুধু সাদা চক দিয়ে বোর্ডে অথবা পেন্সিল দিয়ে কাগজে লিখছে। রং পেন্সিল বা রং-তুলি দিয়ে বর্ণগুলো যদি রঙিন করে শেখানো যেতো তাহলে বাংলা বর্ণ তথা বাংলা ভাষার প্রতি তাঁদের অন্যরকম আগ্রহ তৈরি হতো। বিভিন্ন রংয়ের ব্যবহারে তাদের কোমল হৃদয় ও মস্তিষ্কে ইতিবাচক প্রভাব বিস্তার করতো।

তিনি বলেন, একটি শিশুর ব্যক্তিগত, সামাজিক এবং সাংস্কৃতিক বিকাশের ক্ষেত্রে মাতৃভাষা অনন্য ভূমিকা রাখে। আর তাঁর সৃজনশীলতা ও দক্ষতা বিকাশে সহায়তা করে শিল্প চর্চা। তাই শিশুদের সুন্দর দৃষ্টিভঙ্গি তৈরি এবং দেশের সংস্কৃতির সঙ্গে সম্পৃক্ত রাখতে গতানুগতিক শিক্ষার পাশাপাশি তাঁদের শিল্পানুরাগী করে গড়ে তুলতে হবে।

প্রশিক্ষক শিল্পী শামীম হোসাইন বলেন, কেমন হতো যদি প্রিয় বাংলা বর্ণমালার বর্ণগুলো রংধনুর সাত রং দিয়ে রঙিন করতে করতে আমাদের শৈশব কাটতো! আমরা হয়তো এমন সুযোগ পাই নি। কিন্তু বর্তমান প্রজন্ম তো আমাদের হাত ধরে তা পেতেই পারে। শিশুরা রং দিয়ে ক্যানভাসে শুধু বর্ণমালাই ফুটিয়ে তোলে নি বরং বিভিন্ন শব্দে ভিন্ন আঙ্গিকে বাংলা বর্ণমালার ব্যবহারও দেখিয়েছে।

তিনি বিশ্বাস করেন, ভাষা হচ্ছে একটি শিল্প। ভাষার সঙ্গে দেশের সম্মান ও ঐতিহ্য ওতপ্রোতভাবে জড়িত। বাংলালিপির কর্মশালায় অংশগ্রহণকারী খুদে শিল্পীরা বাংলা ভাষার সৌন্দর্যকে খুঁজে পাবে এবং তাঁদের শিল্পকর্মের মধ্যদিয়ে বাংলা ভাষার রূপ সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়বে।

প্রশিক্ষক জিয়াউর রহমান বলেন, ভাষার মাস ফেব্রুয়ারিতে বাংলা বর্ণমালা নিয়ে এ রকম একটি কর্মশালায় প্রশিক্ষক হিসেবে থাকতে পেরে নিজেকে ধন্য মনে করছি। বাংলা ভাষাভাষীদের কাছে বাংলা বর্ণমালা অনেক দামী। অনেক শহিদের আত্মত্যাগের বিনিময়ে অর্জিত আমাদের প্রিয় মাতৃভাষা বাংলা। আমাদের আছে স্বরবর্ণ, ব্যঞ্জনবর্ণ। আছে পূর্ণমাত্রা, অর্ধমাত্রা ও মাত্রাহীন বর্ণ। আর আছে বিশাল শব্দভাণ্ডার। কথা বলার ক্ষেত্রে উচ্চারণের পাশাপাশি লেখার ক্ষেত্রে বর্ণ ও শব্দের ব্যবহারে আমাদেরকে আরও সতর্ক হতে হবে। যেনো নির্ভুলভাবে আমরা বাংলা বর্ণ ও শব্দ লিখতে ও বলতে পারি। সর্বত্র বাংলা ভাষার মর্যাদা যেনো প্রতিষ্ঠিত করতে পারি। তবেই স্বার্থক হবে ভাষা শহিদদের আত্মত্যাগ।

তিনি কর্মশালায় অংশগ্রহণকারী খুদে শিল্পীদের অভিনন্দন জানান এবং এ ধরনের সৃজনশীল উদ্যোগ বাংলা বর্ণমালাকে চেনা ও জানার ক্ষেত্রে অনন্য ভূমিকা রাখবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

বিশিষ্ট লিপিশিল্পী খোরশেদ আলম ভূঁইয়া বাংলা বর্ণমালা ও হাতের লেখা নিয়ে তাঁর নিজস্ব অনুভূতি তুলে ধরেন। তিনি বলেন, বাংলা বর্ণমালার রয়েছে সুদীর্ঘ ও ঐতিহ্যময় ইতিহাস। যুগে যুগে বর্ণশিল্পীরা শিলালিপি, তাম্রলিপি, তালপত্র, ভূর্জপত্রসহ বিভিন্ন মাধ্যমে বাংলালিপির বিবর্তনে ভূমিকা রেখে গেছেন।

তিনি বলেন, তাঁদের সময়ে তাঁরা দোয়াত-কালি, ঝরনা কলম, বাঁশের কঞ্চি দিয়ে তালপাতায়, কাগজে লিখেছেন। এখনকার মতো এতো উপকরণ তখন সহজলভ্য ছিলো না। বর্তমানে শিশুরা রং-তুলি ব্যবহার করে ক্যানভাসে বর্ণমালা লিখছে।

খুদে শিল্পীদের এমন নিদারুণ কাজ সত্যিই প্রশংসার দাবিদার। বর্তমান প্রজন্ম নানা কারণে নিজস্ব সংস্কৃতিকে ভুলে যেতে বসেছে। তাই নিজস্ব ভাষা ও সংস্কৃতিকে হৃদয়ে ধারণের লক্ষ্যে আমাদের এ ধরনের আয়োজন প্রয়োজন বলে তিনি মনে করেন।

দেশ ও দেশের বাইরে থেকে মোট ৫০ জন খুদে শিল্পী এই কর্মশালায় অংশগ্রহণ করেন। এই কর্মশালার মূল উদ্দেশ্য ছিলো একজন বাংলাদেশি নাগরিক হিসেবে যে যেখানেই থাকুক, বাংলা ভাষাকে চর্চায় রাখা। এমনকি বাংলা ভাষায় কতো দেশের ভাষার সংমিশ্রণ হয়েছে, সেগুলোর উৎপত্তি সম্পর্কে জানানো।