ডন প্রতিবেদক, বগুড়া : ‘শুধু দু-বেলা ভাতের বিনিময়ে পড়াতে চাই’ এমন শিরোনামে বিজ্ঞাপন দেওয়া আলমগীর কবিরকে বুধবার (২ ফেব্রুয়ারি) চাকরি দেওয়ার আশ্বাস দিয়েছিলেন বগুড়ার পুলিশ সুপার সুদীপ কুমার চক্রবর্ত্তী। পরে পুলিশ সুপারের উপস্থিতিতে আলমগীরের হাতে রিটেইল চেইন শপ ‘স্বপ্ন’ এর ‘রিসার্চ অ্যাসোসিয়েট’ পদের নিয়োগপত্র তুলে দেওয়া হয়।
পুলিশের পক্ষ থেকে এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
তাতে বলা হয়, বগুড়ার পুলিশ সুপার সুদীপ কুমার চক্রবর্ত্তীর উদ্যোগে আলমগীর কবিরের চাকরির ব্যবস্থা করা হয়েছে। রিটেইল চেইন শপ ‘স্বপ্ন’-এর পুলিশ প্লাজা বগুড়া ব্রাঞ্চে তাঁকে ‘রিসার্চ অ্যাসোসিয়েট’ পদে চাকরি দেন স্বপ্নের নির্বাহী পরিচালক সাব্বির হাসান নাসির। পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে সুদীপ কুমার চক্রবর্ত্তীর উপস্থিতিতে আলমগীর কবিরের হাতে নিয়োগপত্র হস্তান্তর করেন স্বপ্নের পরিচালক মো. সামসুদ্দোহা শিমুল।
বগুড়ার সরকারি আজিজুল হক কলেজ থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগে অনার্স ও মাস্টার্স পাস করেছেন আলমগীর। ২০২০ সালে মাস্টার্স পাসের পর থেকে চাকরি খুঁজছেন তিনি। কিন্তু প্রত্যাশা অনুযায়ী চাকরি পান নি।
এ জন্য পেশায় ‘বেকার’ উল্লেখ করে বগুড়া শহরের জহুরুল নগরের আশেপাশের এলাকায় প্রথম থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের গণিত ছাড়া সব বিষয় পড়ানোর জন্য তিনি বিজ্ঞাপনটি দেন।
সাদা কাগজে কালো কালিতে প্রিন্ট করা বিজ্ঞাপনটি দেখা যায় শহরের বিভিন্ন দেয়ালে ও বৈদ্যুতিক খুঁটিতে। বিজ্ঞাপনে লেখা ছিল, ‘শুধু দু-বেলা ভাতের বিনিময়ে পড়াতে চাই। (সকাল ও দুপুর)। প্রথম থেকে দ্বাদশ পর্যন্ত, তবে গণিত বিষয় ছাড়া।’
আলমগীর কবির বলেন, ‘মূলত খাবারের কষ্ট থেকেই বিজ্ঞাপন দিয়েছি। অন্য কোনও উদ্দেশ্য ছিলো না।’
বুধবার পুলিশ সুপার কার্যালয়ে আসার পর আলমগীর সাংবাদিকদের বলেন, এ মুহূর্তে আমার একটি টিউশনি আছে। সেখানে রাতে পড়াই। তাঁরা আগে নাশতা দিত। পরে আমি তাদের বলেছি নাস্তার বদলে ভাত খাওয়াতে। কিন্তু রাতে খাবারের সংস্থান হলেও সকাল আর দুপুরে খাবারের ব্যবস্থা ছিলো না।
আলমগীর কবির আরও বলেন, আমি টিউশনি করে পাই দেড় হাজার টাকা, সেটি দিয়ে হাত খরচ, খাবার, চাকরির পরীক্ষা দিতে ঢাকায় যাতায়াতসহ কুলিয়ে উঠতে পারছিলাম না। সেজন্য আমি যেখানে থাকি তার আশেপাশে টিউশনি খুঁজছি, যেখানে আমার অন্তত দুই বেলা খাবারের ব্যবস্থা হয়ে যাবে; এ আশায় বিজ্ঞাপনটি দিয়েছিলাম।
বিজ্ঞাপনটি ভাইরাল হওয়ার পর কোনও সাড়া পেয়েছেন কি না, উত্তরে আলমগীর কবির বলেন, ওই বিজ্ঞাপনটি ফেসবুকে ভাইরাল হওয়ার পর আমাকে অসংখ্য ফোন করে নানা ধরনের ভালো-মন্দ কথা বলা হয়েছে। সমবেদনাও জানিয়েছেন অনেকে। এক পর্যায়ে ফোনে একের পর এক কলের কারণে ফোন বন্ধ রাখতে বাধ্য হই। চাকরিরও অফার দিয়েছেন অনেকে।
তিনি আরও বলেন, ঢাকায় একটি তৈরি পোশাক কারখানায় চাকরি করতাম। করোনার কারণে চাকরিতে সমস্যা হলে বগুড়ায় চলে আসি।
আলমগীর কবিরের গ্রামের বাড়ি জয়পুরহাটের পাঁচবিবি উপজেলার মোহাম্মদপুর ইউনিয়নের বুড়ইল গ্রামে। বহু কষ্টে বগুড়ায় এসে পড়াশোনা করেছেন। পাঁচ বছর আগে সরকারি আজিজুল হক কলেজে স্নাতকে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগে প্রথম শ্রেণিতে প্রথম স্থান অর্জন করেন তিনি। পরে স্নাতকোত্তরেও দ্বিতীয় স্থান অর্জন করেন আলমগীর। পড়াশোনা শেষে হন্যে হয়ে একটি ভালো চাকরি খুঁজেছেন, কিন্তু পান নি।
বুধবার বগুড়ার পুলিশ সুপার সুদীপ কুমার চক্রবর্ত্তী আলমগীরের মুখে তাঁর জীবনের সব গল্প শোনেন। এর পর তিনি আলমগীর কবিরকে বলেন, আপনি সমস্যা হলে আমাদের কাছে আসতে পারতেন। আমরা আপনার জন্য চেষ্টা করতাম। আপনি সেটি না করে, কাউকে না জানিয়ে হুট করে এরকম একটি বিজ্ঞাপন দিয়ে নিজের মর্যাদা নিজেই ক্ষুণ্ন করেছেন। এরপর পুলিশ সুপার আলমগীরকে চাকরি দেওয়ার নিশ্চয়তা দিয়েছিলেন।