ডন প্রতিবেদন : বসন্তের শেষদিকে অর্থাৎ চৈত্র মাসে গরম বেশ বেড়ে যায়। আবার গরমের শুরুতে ঢাকায় ডায়রিয়া রোগীর সংখ্যা কিছুটা বাড়ে; তবে এ বার তা আরও অনেক বেশি। বিষয়টি জানা গেছে আইসিডিডিআর,বি থেকে।
গত এক সপ্তাহে ৮ হাজার ১৫২ জন ডায়রিয়া আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসা নিতে এসেছে জানিয়ে আইসিডিডিআর,বির কর্মকর্তারা বলছেন, তারা এবার রোগী সামলাতে কিছুটা হিমশিম খাচ্ছেন।
আইসিডিডিআর,বির গণমাধ্যম ব্যবস্থাপক তারিফুল ইসলাম খান বুধবার বাঙলা কাগজ ও ডনকে বলেন, ‘এর আগে ২০১৮ তে বেড়েছিল ডায়রিয়া রোগী। তখন আমাদের গড়ে ১০০০ এর মতো রোগী ছিলো। সর্বোচ্চ ছিলো ১ হাজার ৪৭ জন। কিন্তু এই প্রথম ১ হাজার ২ শ জন ছাড়িয়ে গেছে, এর আগে কখনও হয় নি।’
এই রোগ গবেষণার প্রতিষ্ঠান আন্তর্জাতিক উদরাময় রোগ গবেষণা কেন্দ্র, বাংলাদেশে (আইসিডিডিআর,বি) গত ২৪ ঘণ্টায় ১ হাজার ২৭২ জন রোগী ভর্তি হয়েছে।
এখানে ১৬ মার্চ ১ হাজার ৫৭ জন রোগী চিকিৎসা নিতে আসে। পরদিন তা বেড়ে দাঁড়ায় ১ হাজার ১৪১ জনে। ২০ মার্চ রোগীর সংখ্যা পৌঁছে যায় ১ হাজার ২১৬ জনে, পরদিন ছিল ১ হাজার ১৭১ জন। সবমিলিয়ে ১৬ মার্চ থেকে ২২ মার্চ পর্যন্ত এক সপ্তাহে ৮ হাজার ১৫২ জন রোগী এই হাসপাতালে ডায়রিয়ার চিকিৎসা নেয়।
আইসিডিডিআর,বি হাসপাতালের প্রধান ডা. বাহারুল আলম বাঙলা কাগজ ও ডনকে বলেন, ‘সাধারণত প্রতিদিন সাড়ে তিনশ থেকে চারশ রোগী থাকে। রোগীর সংখ্যা বাড়লে সেটা ৯০০-১০০০ বা এর বেশিও বেড়েছে। কিন্তু এবারই এটা ১ হাজার ২০০ ছাড়িয়ে গেছে।’
তিনি জানান, রাজধানীর সব জায়গা থেকেই রোগী আসলেও যাত্রাবাড়ী, মোহাম্মদপুর, দক্ষিণখান থেকে ডায়রিয়া আক্রান্ত মানুষ বেশি আসছে।
রোগী এ বার বেশি কেনো? : তারিফুল বাঙলা কাগজ ও ডনকে বলেন, প্রতিবছরই এই মৌসুমে ডায়রিয়া রোগী বাড়ে। গত বছর কোভিডের লকডাউনের কারণে রোগীর সংখ্যা স্বাভাবিক ছিলো।
‘বছরের দুই সময়ে এই আউটব্রেকটা বেড়ে যায়। বর্ষার আগে যেটাকে আমরা প্রি-মনসুন পিরিয়ড বলি আর শীতের আগে। শীতে শিশুরা বেশি আক্রান্ত হয়। আর বর্ষার আগে প্রাপ্তবয়স্করা।’
চৈত্রের শুরু থেকেই দেশে বিস্তীর্ণ অঞ্চলে তাপপ্রবাহ শুরু হয়। রবিবার তাপমাত্রা পৌঁছে যায় মৌসুমের সর্বোচ্চ ৩৮ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসে।
গরমের মধ্যে পানির চাহিদা যখন বাড়ে, তখন দূষিত পানি থেকে পানিবাহিত এই রোগের প্রকোপ দেখা যায়।
নয় দিনের এই তাপপ্রবাহের মধ্যে ১৫ মার্চের পর থেকেই আইসিডিডিআর,বি হাসপাতালে ডায়রিয়া রোগীর সংখ্যা বাড়তে শুরু করে।
চিকিৎসকরা মনে করছেন, করোনাভাইরাসের সংক্রমণ কমার পর মানুষের ব্যস্ততা বেড়ে যাওয়ায় ডায়রিয়া রোগী বেড়ে যাওয়ায় প্রভাব ফেলতে পারে।
আইসিডিডিআর,বি হাসপাতালের প্রধান ডা. বাহারুল আলম বলেন, ‘আমরা ধারণা করছি, কোভিড কমে যাওয়ায় মানুষ বেপরোয়া হয়ে গেছে। হাত ধোয়ার অভ্যাসটা একদমই কমে গেছে। এটাই আমার মনে হয় একটি বড় কারণ।’
আবার জীবাণুর রোগতত্ত্বগত আচরণের কারণেও রোগী বাড়তে পারে, এমন ধারণাও উড়িয়ে দিচ্ছেন না তিনি।
‘সেটা গবেষণা ছাড়া বলা যায় না,’ বলেন ডা. বাহারুল।
গরমে ডায়রিয়া থেকে বাঁচতে বাইরের খোলা খাবার পরিহার করা, পর্যাপ্ত পানি পান করা ও হাত ধোয়ার পরামর্শ দিয়েছেন চিকিৎসক বাহারুল আলম।
তিনি বলেন, ‘স্বাস্থ্যবিধি মেনে চললে ডায়রিয়া থেকে রক্ষা পাওয়া যাবে। সেক্ষেত্রে পানি ফুটিয়ে খেতে হবে। বাইরে গেলে সম্ভব হলে লেবুর পানি নিয়ে যেতে হবে।’
কীভাবে সামলাচ্ছে? : ডায়রিয়া আক্রান্তরা সাধারণত আইসিডিডিআর,বি হাসপাতালে বেশি যাওয়ায় সেখানেই চাপ বেশি থাকে বরাবরই। ফলে ঢাকার অন্য হাসপাতালের চিত্র স্বাভাবিক সময়ের মতোই।
স্যার সলিমুল্লাহ মেডিক্যাল মিডফোর্ড হাসপাতালের পরিচালক রশিদ উন নবী বাঙলা কাগজ ও ডনকে জানান, তাদের হাসপাতালে ডায়রিয়া রোগীর সংখ্যা বাড়েনি।
শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক খলিলুর রহমান বাঙলা কাগজ ও ডনকে বলেন, ‘এটার জন্য কলেরা হাসপাতালেই সবাই যান। সেখানেই রোগীরা যাচ্ছে, এখানে বাড়ে নি।’
আইসিডিডিআর,বি হাসপাতালে যাওয়া অধিকাংশই ২৪ ঘণ্টার মধ্যে চিকিৎসা নিয়ে বাসায় ফিরে যায়। যাদের সমস্যা বেশি, তাদের হাসপাতালে রেখে চিকিৎসা দেওয়া হয়।
ডা. বাহারুল বলেন, ‘আমাদের চাপ বেড়েছে। তবে আমরা কাউকেই ফেরাই না চিকিৎসা ছাড়া।’
‘রোগী বেড়ে গেলেই আমরা তাঁবু করি। আমাদের এই অভিজ্ঞতাটা অনেক আগে থেকেই। সেজন্য রোগীর চাপ বাড়লেও আমাদের তেমন সমস্যা হয় না,’ বলেন তারিফুল।