বিসিএস কর্মকর্তাদের প্রধানমন্ত্রীর আহ্বান : মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনে কাজ করুন

বিসিএস কর্মকর্তাদের প্রধানমন্ত্রীর আহ্বান : মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনে কাজ করুন

বাসস : প্রধানমন্ত্রী ও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনা নবীন বিসিএস কর্মকর্তাদের দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে দেশবাসীর ভাগ্যের পরিবর্তনে কাজ করার আহ্বান জানিয়েছেন।

তিনি বলেন, ‘আমি নবীন অফিসারদের দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ব হয়ে মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তনে কাজ করার আহ্বান জানাচ্ছি।’

প্রধানমন্ত্রী বুধবার (২ নভেম্বর) সকালে বিসিএস প্রশাসন একাডেমিতে ১২৪তম, ১২৫তম এবং ১২৬তম আইন ও প্রশাসন প্রশিক্ষণ কোর্সগুলোর সমাপনী ও সনদ বিতরণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি’র বক্তব্যে এ কথা বলেন।

শেখ হাসিনা সবাইকে স্মরণ করিয়ে দিয়ে বলেন, পাকিস্তান আমলে কোনও বাঙালি একমাত্র কর্ণেল ছাড়া সচিব, জেনারেল ও মেজর জেনারেল হতে পারতো না।

তিনি বলেন, ‘এখন আপনাদের (সরকারি কর্মকর্তা) মনে রাখা উচিত, দেশ স্বাধীন হওয়ার পর আমরা সবকিছুই হতে পারছি। সে কথা মনে রেখেই সবাইকে দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে বাংলাদেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনের ব্রত নিয়ে কাজ করার আহ্বান জানাচ্ছি।’

প্রধানমন্ত্রী বিসিএস প্রশাসন একাডেমি মিলানয়তন শাহবাগে অনুষ্ঠিত জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় আয়োজিত ওই অনুষ্ঠানে সশরীরে উপস্থিত থেকে ৩টি ব্যাচের ১০৩ জন কর্মকর্তার হাতে সনদ তুলে দেন এবং ফটোসেশনে অংশ নেন।

সরকারপ্রধান বলেন, আমাদের যাঁরা নবীন অফিসার, তাঁদের ওপর অনেক কিছু নির্ভর করে। তিনি যখন কোনও এলাকায় কাজ করেন, তখন সেই এলাকার উন্নয়নে বিশাল ভূমিকা রাখার সুযোগ পান।

প্রধানমন্ত্রী উদাহারণ দেন, কোথাও কাজে নিযুক্ত হলে বিভিন্নজন বিভিন্ন দেন-দরবার নিয়ে আসবে তবে সেদিকে ভ্রুক্ষেপ না করে সঠিক পরিকল্পনা অনুযায়ী এগুতে হবে। তাহলেই আমরা সঠিকভাবে উন্নতি করতে পারবো। আমি চাই, আমাদের নবীন অফিসাররা সেভাবেই ব্যবস্থা নিবেন।

‘কারণ, দেশের মানুষের কল্যাণ করার জন্যই বাপ-মা-ভাই হারিয়ে তিনি কাজ করে যাচ্ছেন এবং জাতির পিতা যে ভাগ্যাহত মানুষদের মুখে হাসি ফোটানোর জন্য আজীবন সংগ্রাম করে গেছেন, তাঁদের মুখে তিনি হাঁসি ফোটাবেন-এটাই তাঁর লক্ষ্য।’

সরকারপ্রধান স্মরণ করেন, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট সপরিবারে জাতির পিতাকে নৃশংসভাবে হত্যার পর ’৮১ সালে আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত হবার পর প্রবাস জীবন কাটাতে বাধ্য হওয়া অবস্থা থেকে এক রকম জোর করে দেশে ফিরে সমগ্র বাংলাদেশ তিনি চষে বেড়িয়েছেন। আর দেখেছেন হাড্ডিসার, কঙ্কালসার মানুষের সারি, পায়ে ন্যূনতম স্যান্ডেলটা নেই, ছিন্ন বস্ত্রের মানুষ।

তিনি বলেন, আমি দেখেছি আমার মা-বোনরা এক টুকরো কাপড়ের অর্ধেক শুকাচ্ছে অর্ধেক পরে আছে। প্রতি বছর মঙ্গা লেগে থাকতো, আমরা ছুটে গেছি, লঙ্গরখানা খুলেছি, মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছি, সরকার কি করছে, সেদিকে দেখি নি। আমরা আমাদের দলের পক্ষ থেকে সব সময় মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছি।

শেখ হাসিনা বলেন, কাজেই আজকের নবীন কর্মকর্তারা যখন বিভিন্ন এলাকায় কাজ করতে যাবেন, তখন এই বিষয়টার দিকেই লক্ষ্য রাখবেন যে, মানুষের জন্য কতোটুকু করতে পারলেন, সেখানেই তৃপ্তি। যতোটুকু দিয়ে আসতে পারবেন, সেটাই মানুষ মনে রাখবে।

প্রধানমন্ত্রী ১৯৭২ সালের পহেলা ফেব্রুয়ারি সরকারি কর্মকর্তাদের উদ্দেশে দেওয়া জাতির পিতার ভাষণের চুম্বকাংশ তুলে ধরে প্রশাসনের নবীন কর্মকর্তাদের আরও জনসেবায় নিবেদিতপ্রাণ হবার পরামর্শ দেন। জাতির পিতা বলেছিলেন, ‘সরকারি কর্মচারি ভাইয়েরা আপনাদের জনগণের সেবায় নিজেকে উৎসর্গ করতে হবে এবং জাতীয় স্বার্থকে সবকিছুর ঊর্ধ্বে স্থান দিতে হবে।’ 

প্রধানমন্ত্রী বলেন, এখন থেকে অতীতের আমলাতান্ত্রিক মনোভাব পরিবর্তন করে নিজেদেরকে জনগণের খাদেম বলে বিবেচনা করতে হবে। অর্থাৎ জনগণের সেবক হিসেবেই নিজেদেরকে আত্মনিয়োগ করতে হবে। আমি চাই, জনগণের সেবা করে দেশকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে এবং উন্নত করতে হবে।

জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন। মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব কে এম আলী আজম এবং একাডেমির রেক্টর (সচিব) মোমিনুর রশিদ আমিন অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন। ১২৪, ১২৫ ও ১২৬তম ব্যাচে শীর্ষস্থান অর্জন করে রেক্টরস পদক লাভকারী তানিয়া তাবাসসুম, মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী ও ফারহানা নাসরিন অনুষ্ঠানে নিজস্ব অনুভূতি ব্যক্ত করেন।

প্রধানমন্ত্রী এই বিসিএস প্রশাসন একাডেমিতে দেওয়া ভাষণের একটি সংকলনের মোড়কও উন্মোচন করেন।

বিসিএস প্রশিক্ষণ একাডেমির কর্মকাণ্ডের ওপর অনুষ্ঠানে একটি প্রামাণ্যচিত্রও প্রদর্শন করা হয়।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদেরকে যেমন গবেষণার দিকে মনোযোগ দিতে হবে; দেশকে চেনা এবং মানুষের কল্যাণেও কাজ করতে হবে। কারণ, মানুষের আর্থ-সামাজিক উন্নতি যতো বেশি হবে, ক্রয় ক্ষমতা যতো বাড়বে, আমাদের দেশে শিল্পায়নও বাড়বে। আর শিল্পায়নের ক্ষেত্রে কৃষিভিত্তিক শিল্প ও খাদ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ শিল্প গড়ে তোলা এবং উৎপাদন বৃদ্ধির দিকে আমাদের নজর দিতে হবে।

তিনি বলেন, ১ শটি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তুলেছি এই উদ্দেশ্যে যে, যত্রতত্র কেউ যেনো কোনও শিল্প গড়ে তুলতে না পারে। কারণ, আমার কৃষিজমি বাঁচাতে হবে।

সরকারপ্রধান বলেন, শিল্পায়ন যেখানে হবে এরসঙ্গে বর্জ্য ব্যবস্থাপনাও নিশ্চিত করতে হবে। প্রত্যেকটি গ্রামাঞ্চল পর্যন্ত বর্জ্য ব্যবস্থাপনার দিকে দৃষ্টি দিতে হবে। আবার বর্জ্য থেকে সার এবং বিদ্যুৎ উৎপাদন হয়, সেদিকেও আমাদের লক্ষ্য রাখতে হবে। সঙ্গে সঙ্গে মানুষকেও সচেতন করতে হবে।

শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের দেশের মানুষকে একটু সুযোগ দিলে বা বোঝাতে পারলে তাঁরা কিন্তু অসাধ্য সাধন করতে পারে। যেমন জাতির পিতা মুক্তিযুদ্ধের সময় বলেছেন, ‘যাঁর যা কিছু আছে, তাই নিয়ে শত্রুর মোকাবিলা করতে হবে’- এ দেশের মানুষ কিন্তু তা করেছে। বিজয় এনে দিয়েছে। 

‘এখন আমরা দেশকে অর্থনৈতিকভাবে উন্নত করবো। উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছি, সেখান থেকে দেশকে আমরা উন্নত করবো। বৈশ্বিক করোনা মহামারির অভিঘাতের পাশাপাশি রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ফলে নিষেধাজ্ঞা ও পাল্টা নিষেধাজ্ঞার কারণে যেসব জিনিস বিদেশ থেকে আমদানি করতে হয়; তার দাম বেড়ে যাচ্ছে এবং উন্নত দেশগুলোও হিমশিম খাচ্ছে,’ অনুষ্ঠানে জানান প্রধানমন্ত্রী।

এই পরিস্থিতিতে আমাদের করণীয় সম্পর্কে তিনি বলেন, আমি বহু আগে থেকেই এটা বলে যাচ্ছি যে, এক ইঞ্চি জমি যেনো খালি না থাকে। কারণ, আমাদের নিজের খাদ্য নিজেদেরই উৎপাদন করতে হবে। খাদ্য প্রক্রিয়াজাত করার জন্য আমাদের শিল্পায়ন দরকার এবং দেশের মানুষের খাদ্যে এবং পুষ্টির নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।

তিনি বলেন, আমরা এখন একটা অত্যন্ত কঠিন সময় অতিক্রম করছি। কাজেই সেই অবস্থায় আমরা যদি নিজেরা দাঁড়াতে পারি, সেটাই আমাদের জন্য সবচেয়ে ভালো হয়। সেজন্য আমাদের সবাইকে কৃচ্ছ্রতা সাধন করতে হবে। কৃচ্ছ্রতা সাধন করেই আমাদের চেষ্টা করতে হবে।   

প্রধানমন্ত্রী ১৯৪৮ সালের পর থেকে জাতির পিতার আত্মজীবনী এবং ‘সিক্রেট ডকুমেন্টস অব ইন্টেলিজেন্স ব্রাঞ্চ অন ফাদার অব দ্য নেশন, বাংলাদেশ: বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান’ শীর্ষক পাকিস্তানের গোয়েন্টা রিপোর্টের ভিত্তিতে তাঁর সম্পাদিত বইয়ের সিরিজটিও নবীন প্রশানসিক কর্মকর্তাদের পড়ার আহ্বান জানান। এতে তাঁরা দেশের প্রকৃত ইতিহাস জানার পাশাপাশি দেশকে নতুন করে চিনতে এবং দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে দেশবাসীর ভাগ্যের পরিবর্তন করতে পারবেন বলেও উল্লেখ করেন তিনি।