ফেসবুকে নগ্ন ভিডিও : কলেজছাত্রীর আত্মহত্যা।

ফেসবুকে নগ্ন ভিডিও : কলেজছাত্রীর আত্মহত্যা।

নিজস্ব সংবাদদাতা, বাঙলার কাগজ; টাঙ্গাইল : টাঙ্গাইলের মির্জাপুরে এক কলেজছাত্রীর ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। এ সময় তাঁর কক্ষ থেকে একটি সুইসাইড নোট উদ্ধার করেছে পুলিশ। যেখানে ফেসবুকে নগ্ন ভিডিও ছড়িয়ে দেওয়ায় এক যুবককে দায়ী করে আত্মহত্যার কথা উল্লেখ রয়েছে।

উপজেলার ভাতগ্রাম ইউনিয়নের সিংজুরী গ্রামে বুধবার (২১ সেপ্টেম্বর) রাত সাড়ে ৮টার দিকে এ ঘটনা ঘটে।

মির্জাপুর থানা পরিদর্শক (তদন্ত) মো. গিয়াস উদ্দিন বাঙলার কাগজ ও ডনকে এ তথ্য বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

তিনি জানান, সুইসাইড নোটে উল্লেখ রয়েছে- ‘আমারে তুমরা সবাই মাফ কইরা দিও, আমার জন্য তুমাগো অনেক মান-সম্মান নষ্ট হইছে, আমি চাই না তুমাগো আরো মান-সম্মান নষ্ট হোক। তোমরা জানো না, ঐতি কী কী করছে আমার সাথে। আমারে জোর কইরা ধর্ষণ করছে। তারপর আমার ছবি তুইলা সেই ছবি দিয়া আমার কাছে থাইকে দেড় লাখ টাকার জিনিস নিছে।’

মেয়েটির পরিবারের বরাতে পুলিশের এই কর্মকর্তা জানান, স্থানীয় একটি কলেজের একাদশ শ্রেণির মানবিক বিভাগের ছাত্রী ছিলো মেয়েটি। একই ইউনিয়নের সুজন নামের এক যুবকের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক ছিলো তাঁর। সুজন মেয়েটির সঙ্গে একাধিকবার শারীরিক সম্পর্কে মিলিত হন।

এরপর গোপনে তা ভিডিও করে ফেসবুকে ছেড়ে দেওয়ার ভয় দেখিয়ে বিভিন্ন সময় তাঁর কাছ থেকে টাকা আদায় করতেন যুবকটি। 

এ ছাড়া কলেজে যাওয়া-আসার পথে মারধর করাসহ নানাভাবে হয়রানি করা হতো তাঁকে।

সম্প্রতি ‘লোকাল সাফি’ নামের একটি ফেসবুক আইডি থেকে কলেজ ছাত্রীটির একটি নগ্ন ভিডিও ছড়িয়ে পড়ে। এতে মানসিকভাবে ভেঙে পড়ে সে। এরই মধ্যে বুধবার রাতে ঘরের নিজ কক্ষ থেকে ঝুলন্ত অবস্থায় তাঁর মরদেহ উদ্ধার করা হয়।

মায়ের বরাতে পুলিশ জানায়, রাতে মেয়ের কক্ষের দরজা লাগানো ছিলো। ডাকাডাকি করেও সাড়া পাওয়া যায় নি। পরে পুলিশ এসে সাড়ে ৮টার দিকে মরদেহ উদ্ধার করে। এ সময় তাঁর কক্ষ থেকে একটি সুইসাইড নোট উদ্ধার করে পুলিশ।

এদিকে এ খবর জানাজানি হওয়ার পর অভিযুক্ত সুজন গা ঢাকা দিয়েছেন।

কলেজছাত্রীর বাবা অভিযোগ করেন, ‘১৫ দিন আগে কলেজ থেকে ফেরার পথে সুজন আমার মেয়েকে আটকে রেখে মারপিট করে। খবর পেয়ে আমরা তাঁকে আটকে রাখি। ইউপি মেম্বার জাহাঙ্গীর আলম বাদশা এসে সুজনকে সতর্ক করে তাঁর বাবা-মার কাছে দিয়ে দেন। কিন্তু তারপরও সুজন আমার মেয়েকে নানাভাবে ভয়ভীতি ও হুমকি দিতে থাকে।’

ইউপি সদস্য জাহাঙ্গীর আলম বাদশা বাঙলার কাগজ ও ডনের কাছে এ ঘটনার সত্যতা স্বীকার করেছেন।

মেয়েটির বড় ভাইয়ের বর্ণনায়, ‘‘ভিডিও ছাড়ার আগে তাঁর দশম শ্রেণি পড়ুয়া এক ফুফাতো বোনের কাছে সুজন হুমকি দিয়ে এসএমএস পাঠায়। তাতে সে লেখে, ‘(মেয়েটির নাম) বেশি বুঝলো, ওর মরণ আছে’। এরপর ‘লোকাল সাফি’ আইডি থেকে ওই ভিডিও ছেড়ে দিলে আমার বোন মানসিকভাবে ভেঙে পড়ে এবং আত্মহত্যা করে।’’

মির্জাপুর থানা পরিদর্শক (তদন্ত) মো. গিয়াস উদ্দিন বাঙলার কাগজ ও ডনকে বলেন, ‘ওই কলেজছাত্রীর মরদেহে উদ্ধারের সময় একটি সুইসাইড নোট পাওয়া গেছে। তদন্তের মাধ্যমে আত্মহত্যার কারণ উদ্‌ঘাটন করা হবে। ময়নাতদন্তের জন্য মরদেহ টাঙ্গাইল সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে। এ ঘটনায় মামলা প্রক্রিয়াধীন।’