প্রশ্ন : যাত্রীদের স্বার্থ দেখবে কে? : এ বার লঞ্চ চলাচল বন্ধ রাখার ঘোষণা

ডন প্রতিবেদন : সাধারণ মানুষের মনে প্রশ্ন, যাত্রীদের স্বার্থ দেখবে কে? কারণ ‘সরকার’ জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির ঘোষণা দিয়েই ক্ষান্ত। আর ভাড়া বৃদ্ধির জন্য ধর্মঘটে গণ ও পণ্যপরিবহনের মালিকেরা। আবার তাতে শনিবার (৬ নভেম্বর) যোগ হয়েছে লঞ্চ চলাচল। চলছে শুধু রেল। এমন অবস্থা যে, সরকারি না হলে ধর্মঘটে যেতো রেলও। সার্বিকভাবে, অধিকাংশ গণ ও পণ্যপরিবহন গ্যাসে চললেও তেলের দাম বাড়ার পর এসব বাহনের ধর্মঘট নিয়ে সাধারণের মনে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। এক্ষেত্রে সকল ধরনের (ডিজেল এবং গ্যাসে চালিত) বাহনের ভাড়া বৃদ্ধি করে পণ্যমূল্য বৃদ্ধির পাঁয়তারা চলছে বলেই মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। তাঁরা অবশ্য এও বলছেন, যখন জ্বালানি তেলের আমদানি মূল্য কম ছিলো, তখন কিন্তু তেলের দাম না কমিয়ে মুনাফা করা হয়েছিলো। আর এখন তেলের দাম বাড়ার পর প্রয়োজনে সরকারি ভর্তুকির মাধ্যমে তা নিয়ন্ত্রণে রাখতো। কিন্তু জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধি করার পর ভাড়া বৃদ্ধি তো সরকার কোনোভাবেই ঠেকাতে পারবে না, সেখানে কেনো সরকার ভর্তুকি দিলো না। আর এমন ব্যবস্থা কেনো, এখন পর্যন্ত নেওয়া হয় নি যে, যে গাড়ি গ্যাসে চলে; ডিজেলের দাম বাড়লে তার ভাড়া বাড়বে না। প্রয়োজনে কোন গাড়ি কীসে চালিত, তা লেখা থাকতে হবে গাড়িতে। ‘এমন ব্যবস্থা কেনো এখনও নেওয়া হলো না?,’ প্রশ্ন সাধারণের। সবমিলিয়ে বর্তমান পরিস্থিতি জনগণের ঘারের ওপর ‘মড়ার ওপর খাড়ার ঘা’। কারণ এমনিতেই গত বেশ কয়েকদিন ধরে প্রায় সকল সবজির দামই বাড়তি। এখন অবশ্য শীতের সবজিতে বাজার ভরপুর। এ অবস্থায় সবজির দাম কিছুটা কমতে শুরু করার সময়ই এলো জ্বালানি তেল বৃদ্ধির ঘোষণা। আবার এমন অবস্থায় এটি এলো যখন চলছে ভর্তি পরীক্ষা। এমন অবস্থায় ‘জনসাধারণের কথা কী সরকার একটুও ভাবে না’, এমন প্রশ্নও করছে জনসাধারণ। জানা গেছে, ডিজেলের মূল্যবৃদ্ধির কারণে এ বার ভাড়া বৃদ্ধির দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত দেশের অভ্যন্তরীণ নৌপথে লঞ্চ চালাবেন না বলে ঘোষণা দিয়েছেন লঞ্চমালিকেরা। শনিবার (৬ নভেম্বর) দুপুরে রাজধানীর সদরঘাটে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌচলাচল সংস্থার কার্যালয়ে সাধারণ লঞ্চমালিকদের সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভা শেষে মালিকেরা লঞ্চ না চালানোর অনানুষ্ঠানিক ঘোষণা দেন। তবে সংগঠনের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে কোনো ঘোষণা দেওয়া হয় নি। ‘সাধারণ’ লঞ্চমালিকদের সভা শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে সংগঠনের প্রেসিডেন্ট মাহাবুব উদ্দিন আহমদ বলেন, ‘গতকাল (শুক্রবার : ৫ নভেম্বর) আমরা চিঠি দিয়ে পরিষ্কার বলে দিয়েছি, ভাড়া বাড়াতে। বিআইডব্লিউটিএর চেয়ারম্যান দায়িত্ব নিয়ে আমাকে বলেছিলেন দুপুর ১২টার মধ্যে জানাবেন। কিন্তু তিনি কোনো খবর নেন নি, একটা ফোন পর্যন্ত করেন নি। আমারসঙ্গে এখানে লঞ্চমালিকেরা বলছেন, তাঁদের তেল কেনার টাকা নেই। এই অবস্থায় আমরা কেউই লঞ্চ চালাতে পারবো না।’ মাহাবুব উদ্দিন আরও বলেন, লঞ্চ চলাচলের বিষয়ে কারও ঘোষণা দেওয়ার প্রয়োজন নেই। আমরা আমাদের দাবি চেয়ারম্যানকে জানিয়েছি। ভাড়া বৃদ্ধিসহ এগুলো পূরণ না হওয়া পর্যন্ত মালিকেরা লঞ্চ চালাবেন না। শুক্রবার (৫ নভেম্বর) রাতে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ চলাচল সংস্থা থেকে বিআইডব্লিউটিএর চেয়ারম্যানের কাছে ভাড়া বৃদ্ধির প্রস্তাবের চিঠি পাঠানো হয়। অভ্যন্তরীণ নৌ চলাচল সংস্থার প্রেসিডেন্ট মাহবুব উদ্দিন আহমদ স্বাক্ষরিত চিঠিতে বলা হয়, ৩ নভেম্বর সরকার হঠাৎ করে জ্বালানি তেল তথা ডিজেলের মূল্য লিটারপ্রতি ১৫ টাকা বৃদ্ধির ঘোষণা দেয় এবং ওই দিন রাত ১২টা থেকে কার্যকর করার নির্দেশনা দেওয়া হয়। এই পরিস্থিতিতে নৌযান পরিচালনা ব্যয় বহুগুণ বেড়ে যায়। সঙ্গত কারণে সারাদেশে লঞ্চমালিকেরা যাত্রী ভাড়া বৃদ্ধি করার জন্য সংস্থাকে অনুরোধ করেন। অন্যথায় জাহাজ পরিচালনায় অপারগতা প্রকাশ করেন। ‘জ্বালানি তেলের মূল্য লিটারপ্রতি ১৫ টাকা বেড়েছে। তাই ব্যবসায় টিকে থাকার লক্ষ্যে লঞ্চ ভাড়া ১শ কিমি পর্যন্ত ১ টাকা ৭০ পয়সার পরিবর্তে ৩ টাকা ৪০ পয়সা এবং ১শ কিলোমিটারের ঊর্ধ্বে ১ টাকা ৪০ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ২ টাকা ৮০ পয়সা নির্ধারণের জন্য অনুরোধ করা হলো।’ মাহবুব উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘জ্বালানি তেলের দাম বেড়েছে ২৩ শতাংশ। স্টিলের দাম বেড়েছে ২০-২৫ শতাংশ। এসব কিছু মিলিয়ে আমরা শতভাগ বৃদ্ধির প্রস্তাব করেছি।’ চিঠিতে বিআইডব্লিউটিএ চেয়ারম্যানকে শনিবার (৬ নভেম্বর) দুপুরের মধ্যে ভাড়া বৃদ্ধি বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য জানাতে বলা হয়েছিলো। ভাড়া বৃদ্ধি বিষয়ে রবিবার (৭ নভেম্বর) বিকেল সাড়ে ৩টায় বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষেরসঙ্গে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌচলাচল সংস্থা ও লঞ্চ মালিক সমিতির বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে।