পবিত্র আষাঢ়ী পূর্ণিমা উপলক্ষে পানছড়ি অরণ্য কুটিরে অনুষ্ঠান
নিজস্ব প্রতিবেদক, বাঙলার কাগজ; এস চাঙমা সত্যজিৎ, খাগড়াছড়ি : মহাকারুণিক ভগবান গৌতম বুদ্ধের জন্ম জয়ন্তীর পর আষাঢ়ী পূর্ণিমা ত্রিলোক বিখ্যাত। এই পবিত্র আষাঢ়ী পূর্ণিমা তিথিতে বুদ্ধত্ব লাভের পূর্বে প্রতিসন্ধি গ্রহণ, অভিনিষ্ক্রমণ (গৃহ ত্যাগ), তীর্থখ্যাত মৃগদাবে পঞ্চবর্গীয় শিষ্যদের ধর্মচক্র প্রবর্তন ও বর্ষাব্রত বা ত্রৈমাসিক বর্ষাবাস অধিস্থান গ্রহণ।
খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলার পানছড়ি উপজেলায় পানছড়ি শান্তিপুর অরণ্য কুটিরে যথাযোগ্য ধর্মীয় মর্যাদায় ভাবগাম্ভীর্যের মাধ্যমে আনন্দ উৎসবে চতুর্মাত্রিক পূর্ণিমা বা পবিত্র আষাঢ়ী পূর্ণিমা পালন করা হয়েছে।
শুক্রবার (২৮ জুলাই) সকাল পৌনে আটটায় খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলার পানছড়ি উপজেলার পানছড়ি শান্তিপুর অরণ্য কুটিরে চতুর্মাত্রিক-স্মৃতি বিজরিত পূর্ণিমা বা পবিত্র আষাঢ়ী পূর্ণিমা উপলক্ষে কুটির উন্নয়ন কমিটি, পালা সিয়ং দানকারী, কুটির সংশ্লিষ্ট দায়ক-দায়িকাসহ বিভিন্ন এলাকার পূণ্যার্থীরা এর আয়োজন করে। এই আষাঢ়ী পূর্ণিমা পালন উপলক্ষে বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী পূণ্যার্থীদের পবিত্র তীর্থস্থান পানছড়ি শান্তিপুর অরণ্য কুটিরের প্রতিষ্ঠাতা ও অধ্যক্ষ পরম মৈত্রেয় লাভী শ্রীমৎ শাসন রক্ষিত মহাথের তাঁর শিষ্যসঙ্ঘকে নিয়ে অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।
পানছড়ি শান্তিপুর অরণ্য কুটিরে চতুর্মাত্রিক-স্মৃতি বিজরিত আষাঢ়ী পূর্ণিমা উদযাপন উপলক্ষে আটাশ (২৮) বুদ্ধ পূজা, সীবলী পূজা, উপগুপ্ত ভন্তে ও বনভন্তের পূজা অনুষ্ঠিত হয়। অনুষ্ঠানে আরও বুদ্ধ মূর্তি দান, সঙ্ঘ দান, অষ্টপরিস্কার দান, প্রাণী দান, কুশিনারার ওয়ার্ল্ড বুদ্ধিস্ট টেম্পল প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্যে টাকা দান, পিণ্ডদান ও নানাবিধ দানের আয়োজন করা হয়।
পরম পবিত্র চতুর্মাত্রিক পূর্ণিমা বা শুভ আষাঢ়ী পূর্ণিমা উদ্যাপন উপলক্ষে আয়োজিত পূণ্যানুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন কুটির প্রতিষ্ঠাতা ও পরম মৈত্রেয় লাভী শ্রীমৎ শাসন রক্ষিত মহাথের। অনুষ্ঠান সঞ্চালনায় ছিলেন কুটিরের বিশিষ্ট দায়ক জুনেল চাকমা (ভূবন জয় চাকমা)।
অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন কুটির উন্নয়ন কমিটির উপদেষ্টা পরিষদের প্রধান, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের খাগড়াছড়ি জেলা কমিটির সহ-সভাপতি, পানছড়ি সরকারি ডিগ্রি কলেজের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ সমীর দত্ত চাকমা। পানছড়ি শান্তিপুর অরণ্য কুটির উন্নয়ন কমিটির সহ-সভাপতি অসেতু বিকাশ চাকমা। পূণ্যানুষ্ঠানের প্রধান ও একক ধর্ম দেশনা প্রদান করেন বিচিত্র ধর্ম কথিক কুটিরের প্রতিষ্ঠাতা ও অধ্যক্ষ পরম মৈত্রেয় লাভী শ্রীমৎ শাসন রক্ষিত মহাথের।
উল্লেখ করা যেতে পারে, চতুর্মাত্রিক-স্মৃতি বিজরিত শুভ আষাঢ়ী পূর্ণিমা ২৫৬৭ বুদ্ধাব্দে অর্থাৎ বুদ্ধের জন্মের পূর্ব মুহূর্তে প্রতিসন্ধি গ্রহণ, বুদ্ধের জন্মের পরবর্তী অভিনিষ্ক্রমণ, বুদ্ধের বুদ্ধত্ব লাভের পরপরই মৃগধাবে ধর্মচক্র প্রবর্তন ও বুদ্ধের প্রথম বর্ষাবাসের অধিস্থান। তাই চতুর্মাত্রিক-স্মৃতি বিজরিত শুভ আষাঢ়ী পূর্ণিমা তিথি বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের নিকট অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি পূর্ণিমা। তাই বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের কাছে বৌদ্ধ জাতির গৌরবময় বুদ্ধের ইতিহাস, মহাকারুণিক ভগবান গৌতম বুদ্ধের অমোঘ সত্য বাণীর ইতিহাস, বুদ্ধের সত্য জ্ঞান ধর্মের প্রচারের ইতিহাস, একত্রিশ লোকভূমির সকল সত্ত্বগণের হিতসুখ মঙ্গলের ইতিহাস, সকল প্রাণীর মুক্তির ইতিহাস, অহিংসা পরম ধর্মের ইতিহাস, সারা বিশ্বের শান্তির ললিত বাণীর ইতিহাস, বুদ্ধের জন্মের ইতিহাস, বুদ্ধত্ব লাভের ইতিহাস, মহাপরিনির্বাণের ইতিহাস স্মরণীয় ইতিহাস। এই সব স্মরণীয় চতুর্মাত্রিক ইতিহাসকে নিয়ে প্রতি বছর যথাযোগ্য ধর্মীয় মর্যাদায় ভাবগাম্ভীর্যের মাধ্যমে পরম পবিত্র আষাঢ়ী পূর্ণিমা উদ্যাপন করা হয়ে থাকে।
সব্বে সত্ত্বা সুখীতা ভবন্তু, জগতের সকল প্রাণী সুখী হোক। সকল প্রকার দুঃখ থেকে মুক্তি লাভ করুক। সাধু সাধু সাধু।