পদ্মা সেতুর মাধ্যমে জনগণের স্বপ্ন পূরণ করেছে সরকার।

পদ্মা সেতুর মাধ্যমে জনগণের স্বপ্ন পূরণ করেছে সরকার।

শুকুর আলী শুভ, বাসস : বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সরকার নিজস্ব অর্থায়নে বহুল-প্রতীক্ষিত পদ্মা বহুমুখী সেতু নির্মাণ করে লাখো মানুষের স্বপ্ন পূরণ করেছে।

পদ্মা বহুমুখী সেতুর প্রকল্প পরিচালক শফিকুল ইসলাম বাসসকে বলেন, ‘পদ্মা নদীর ওপর স্বপ্নের সেতুটি রাজধানী ঢাকার সাথে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলীয় জেলাগুলোর সরাসরি যোগাযোগ স্থাপন করেছে।’

তিনি বলেন, লাখ লাখ মানুষ দেশের জন্য স্মরণীয় ও ঐতিহাসিক দিনটি উদ্‌যাপনের জন্য অপেক্ষা করছে। কারণ সরকার আগামী ২৫ জুন পদ্মার ওপর ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ ডাবল-ডেক রেল-রোড সেতু উদ্বোধন করবে।

পানিসম্পদ উপমন্ত্রী এ কে এম এনামুল হক শামীম বলেছেন, পদ্মা নদীর তীরে পদ্মা সেতুর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানটি হবে দেশের ইতিহাসে স্মরণীয় উৎসব।

তিনি বলেন, ‘একটি স্বার্থান্বেষী মহল সেতু নির্মাণের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করেছে। কিন্তু কোনও ষড়যন্ত্র বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সততা, আন্তরিকতা ও সাহসিকতাকে বাধাগ্রস্ত করতে পারে নি।’

পদ্মা সেতুকে নিয়ে ষড়যন্ত্র কখনোই সফল হয় নি, তাই উদ্বোধনকে ঘিরেও কোনও ষড়যন্ত্র সফল হবে না বলেই জানান তিনি।

বাসসের সঙ্গে আলাপকালে ঝালকাঠি-ঢাকা রুটে নিয়মিত যাতায়াতকারী মনিরুজ্জামান বলেন, ‘দূরদর্শী ও গতিশীল নেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সফলতার সাথে সেতুটি সম্পন্ন করে লাখো মানুষের স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দিয়েছেন।’

‘জননেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২৫ জুন সকাল ১০টায় সেতুটির উদ্বোধন করবেন। তাই সর্বস্তরের মানুষ সেতুটির উদ্বোধনী অনুষ্ঠান উদ্‌যাপনের জন্য প্রস্তুত।’

সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ পদ্মা সেতু মর্যাদার পাশাপাশি অপমানের প্রতিশোধের প্রতীক। 

তিনি বলেন, ‘এটি শেখ হাসিনার স্বপ্নের সেতু। পদ্মা সেতু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাহসের সোনালী ফসল। যা আমাদের সামর্থ্য ও সক্ষমতা প্রমাণ করেছে।’

বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের এ সাধারণ সম্পাদক বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সুযোগ্য কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণে বদ্ধপরিকর ছিলেন।

‘তিনি সেতুটি নির্মাণ করে বিশ্বকে দেখিয়ে দিয়েছেন যে, এমন একটি মেগা কাঠামো নির্মাণের সক্ষমতা ও সামর্থ্য বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশের রয়েছে।’

এদিকে পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তি চুক্তি বাস্তবায়ন ও মনিটরিং কমিটির আহ্বায়ক আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ সম্প্রতি বলেছেন, বর্তমান সরকার উন্নত বাংলাদেশ গড়তে নিরাপদ, টেকসই, পরিবেশবান্ধব ও সাশ্রয়ী যোগাযোগ নেটওয়ার্ক গড়ে তুলেছে।

শরীয়তপুর জেলার শিবচরে পদ্মা সেতু পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের তিনি বলেছেন, যোগাযোগ ব্যবস্থাকে শিল্প ও ব্যবসাবান্ধব করতে সরকার পদ্মা বহুমুখী সেতু নির্মাণ করেছে।

‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাহসী ভূমিকার কারণেই পদ্মা সেতু নির্মাণ সম্ভব হয়েছে’ উল্লেখ করে হাসনাত বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গতিশীল নেতৃত্বে বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে।

একজন অর্থনীতিবিদের মতে, পদ্মা বহুমুখী সেতু বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের অর্থনৈতিক দৃশ্যপটকে পাল্টে দেবে। পাশাপাশি এটি দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার অনেক দেশকে সংযুক্ত করবে। এবং যোগাযোগ, বাণিজ্য, শিল্প ও পর্যটনসহ বিভিন্ন খাতে অবদান রাখবে।

তিনি বলেন, ২৫ জুন বহুল-প্রতীক্ষিত পদ্মা সেতু উদ্বোধনের পর দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে অবস্থিত বন্দরগুলোর মাধ্যমে বৈদেশিক বাণিজ্য বাড়বে বলেই আশা করা হচ্ছে।

বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ও সুন্দরবন একাডেমির পরিচালক অধ্যাপক আনোয়ারুল কাদির বলেন, ‘পদ্মা সেতু চালু হওয়ার পর মোংলা সমুদ্রবন্দর আরও কর্মমুখর হবে।’

‘এর ফলে ব্যবসায়ীরাও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে বিনিয়োগে আকৃষ্ট হবে’ উল্লেখ করে তিনি বলেন, মোংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দর এবং বেনাপোল ও ভোমরা স্থলবন্দর থেকে আমদানি-রপ্তানি বাড়বে।

পদ্মা সেতু এ অঞ্চলে নতুন শিল্প স্থাপনে উদ্যোক্তাদের আকৃষ্ট করবে বলেই আশা প্রকাশ করছেন এ শিক্ষাবিদ।

রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পদ্মা সেতু বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর সবচেয়ে বড় নির্মাণ অবকাঠামো। তাই এটির গুরুত্ব অনেক বেশি।

বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষের (বিবিএ) কর্মকর্তাদের মতে, ওপরের ডেকে ৪ লেনের রাস্তাসহ প্রায় ২২ মিটার চওড়া কংক্রিটের ডেক স্ল্যাব (দুই পাশে ২ দশমিক ৫ মিটার হার্ড শোল্ডার) এবং নিচের ডেকে একটি সিঙ্গেল ট্র্যাক ডুয়েল গেজ রেল লাইন রয়েছে। ডেকের উচ্চতা ১৩ দশমিক ৬ মিটার। ৭৬০ মিলিমিটার ডায়া গ্যাস ট্রান্সমিশন লাইন, ১৫০ মিলিমিটার ডায়া ফাইবার অপটিক্যাল ও টেলিফোন ডাক্ট, হাইভোল্টেজ ইলেকট্রিক লাইন, প্রধান সেতুর ২ কিলোমিটার ভাটির দিকের নদীতে পাইল ফাউন্ডেশনের ওপর প্ল্যাটফর্ম রয়েছে।

প্রকল্পের বিবরণ অনুযায়ী, সরকারের নিজস্ব অর্থায়নে ২০১৫ সালের ডিসেম্বরে নির্মাণ কাজ শুরু হয়। সেতুটির নির্মাণ ব্যয় ৩০ হাজার ১৯৩ কোটি টাকা। ২০১৭ সালের ৭ অক্টোবর শরীয়তপুরের জাজিরা পয়েন্টে পদ্মা সেতুর প্রথম স্প্যান বসানো হয়।
এরপর ২০১৮ সালের ২৮ জানুয়ারি দ্বিতীয় স্প্যান বসে। তৃতীয় স্প্যানটি বসানো হয় ২০১৮ সালের ১১ মার্চ। সেতুর চতুর্থ ও পঞ্চম স্প্যান বসানো হয় একই বছরের ১৩ মে ও ২৯ জুন।