পাকিস্তানি ও আফগানিস্তানিদের নিয়ে দুবাইয়ে মঞ্জুরুলের মাদক কারবার

পাকিস্তানি ও আফগানিস্তানিদের নিয়ে দুবাইয়ে মঞ্জুরুলের মাদক কারবার

নিজস্ব প্রতিবেদন, বাঙলার কাগজ : শ্রমিক ভিসায় ২০১৩ সালে সংযুক্ত আরব আমিরাতে যান চট্টগ্রামের ফটিকছড়ির বাসিন্দা মঞ্জুরুল আলম। ২০১৯ সালে তিনি দুবাইয়ে মাদকসহ গ্রেপ্তার হন। তিন মাসের কারাভোগকালে পাকিস্তানের নাগরিক বোরহান ও আফগানিস্তানের নাগরিক আবদুর রহিমের সঙ্গে পরিচয় হয় তার। তিনজন মিলে পরে গড়ে তোলে মাদকের আন্তর্জাতিক নেটওয়ার্ক। কারাভোগ শেষে দেশে ফিরতে বাধ্য হলেও বন্ধ হয় নি তিনজনের কারবার। নিজ নিজ দেশে বসেই নিয়ন্ত্রণ করছে দুবাইয়ের মাদক কারবার। ওমান এবং বাহরাইনেও গড়েছে শক্ত নেটওয়ার্ক।

সম্প্রতি বাংলাদেশের মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরকে (ডিএনসি) পাঠানো সংযুক্ত আরব আমিরাতের ফেডারেল জেনারেল ডিপার্টমেন্ট অব এন্টি-নারকোটিকসের এক চিঠি থেকে এসব তথ্য জানা গেছে। মূলত দুবাইয়ে এ চক্রের বাংলাদেশি এক সদস্য মাদকসহ গ্রেপ্তার হলে সামনে আসে মঞ্জুরুলের নাম। পরে গত ৪ জানুয়ারি সহযোগীসহ তাকে গ্রেপ্তার করে ডিএনসির চট্টগ্রাম বিভাগীয় গোয়েন্দা কার্যালয়ের একটি দল।

ডিএনসির পরিচালক (অপারেশন ও গোয়েন্দা) তানভীর মমতাজ বলেছেন, মঞ্জুরুল আন্তর্জাতিক মাদক কারবারি। পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের নাগরিকদের নিয়ে তিনি দেশে বসেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার করে কারবার নিয়ন্ত্রণ করেছেন।

তদন্তসংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, ২০১৯ সালে দেশে ফিরতে বাধ্য হলে এরপর থেকে মঞ্জুরুল চট্টগ্রামেই বসবাস করছেন। তাদের নেটওয়ার্কের অধীনে ওমান ও বাহরাইন থেকে মাদক নিয়ে দুবাইয়ে পাচার করা হয়। সম্প্রতি তারা ৫ কেজি ক্রিস্টাল মেথ (আইস) পাচার করে। চট্টগ্রামে বসেই মঞ্জুরুল মাদক কারবারের কমিশনের অর্থ পায়। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে কমিশন হিসেবে আসে স্বর্ণবার। দুবাইয়ে অবস্থানরত চক্রের কেউ বাংলাদেশে এলে, তার মাধ্যমেই স্বর্ণের বারগুলো পেতো মঞ্জুরুল। এ ছাড়া হুন্ডির মাধ্যমেও কমিশনের টাকা পায় সে।

চিঠি সূত্রে জানা গেছে, গত ২২ ডিসেম্বর ২০ কেজি গাঁজাসহ দুবাইয়ে গ্রেপ্তার হয় বাংলাদেশের নাগরিক মোহাম্মদ তানভীরুল ইসলাম মোহাম্মদ তাইয়ুব। সংযুক্ত আরব আমিরাতের মাদকবিরোধী সংস্থার জিজ্ঞাসাবাদে তানভীরুল জানায়– দুবাইয়ের মাদক কারবারের অন্যতম নিয়ন্ত্রক বাংলাদেশের চট্টগ্রামের ফটিকছড়ির মঞ্জুরুল আলম (ডাকনাম রাফি)। সে-ই ওই গাঁজা সরবরাহ করেছে। অবশ্য তানভীরুল যে রাফির কথা বলেছে, এটি তার ছদ্ম নাম। তাঁর দেওয়া দুটি মোবাইল ফোন নম্বর ও ছবি পাঠিয়ে মঞ্জুরুলের বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে গত ২৫ ডিসেম্বর সংযুক্ত আরব আমিরাতের মাদকবিরোধী সংস্থার মহাপরিচালক আবদুল্লাহ হামাদ আল শামসি বাংলাদেশের ডিএনসির (অপারেশন ও গোয়েন্দা) পরিচালক তানভীর মমতাজকে চিঠি দেন। প্রধান কার্যালয় থেকে তদন্তের দায়িত্ব পেয়ে ডিএনসি চট্টগ্রাম বিভাগীয় গোয়েন্দা কার্যালয় খোঁজ নিয়ে জানতে পারে– রাফি নামের কেউ নেই। পরে মোবাইল নম্বর দুটি যাচাইয়ে তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় রাফির আসল পরিচয় বেরিয়ে আসে, তিনি মঞ্জুরুল আলম।

তদন্তসংশ্লিষ্টরা ছুটে যান ফটিকছড়ির দক্ষিণ রাঙ্গামাটিয়া গ্রামে। আরব আমিরাত থেকে পাঠানো ছবি স্ত্রীকে দেখালে বাকি তথ্যের বিষয়েও নিশ্চিত হন তাঁরা। স্ত্রী-সন্তান গ্রামের বাড়ি থাকলেও মঞ্জুরুল চট্টগ্রামের বায়েজীদ বোস্তামী থানার পাঠানপাড়ায় জেরিন টাওয়ারের একটি ফ্ল্যাটে ভাড়া থাকে।

ডিএনসির চট্টগ্রাম বিভাগীয় কার্যালয়ের উপপরিচালক রাশেদুজ্জামান বাঙলার কাগজকে জানিয়েছেন, তাঁর নেতৃত্বে একটি দল ৪ জানুয়ারি ওই বাসায় অভিযান চালিয়ে মঞ্জুরুল ও তাঁর ব্যক্তিগত গাড়িচালক মাজহারুল ইসলামকে গ্রেপ্তার করে। এ সময় তাদের কাছ থেকে ৫০ পিস ইয়াবা, মোবাইল ফোন ও মাদক সেবনের সরঞ্জাম জব্দ করেন তাঁরা।