নরসিংদীর ৯ যুবক সমুদ্রপথে ইতালি যাওয়ার সময় নিখোঁজ

নরসিংদীর ৯ যুবক সমুদ্রপথে ইতালি যাওয়ার সময় নিখোঁজ

নিজস্ব প্রতিবেদক, বাঙলার কাগজ; নরসিংদী : দালালের মাধ্যমে অবৈধভাবে লিবিয়া হয়ে সমুদ্রপথে ইতালি যাওয়ার সময় নিখোঁজ হয়েছেন নরসিংদীর বেলাব উপজেলার ৯ যুবক। এ খবরে পরিবারগুলোতে চলছে শোকের মাতম। শনিবার (১২ আগস্ট) সকালে নিখোঁজ হওয়া ৯ যুবকের স্বজনেরা সাংবাদিকদের কাছে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

নিখোঁজরা হলেন : উপজেলার নারায়ণপুর ইউনিয়নের কাঙ্গালিয়া গ্রামের রফিকুল ইসলামের ছেলে মোখলেছুর রহমান (২০), একই এলাকার মৃত হাছেন আলীর ছেলে আনোয়ার হোসেন ওরফে কামাল হেসেন (৩৪), ভাটের গ্রামের হাসান উদ্দিনের ছেলে মাসুদ রানা (২২), দুলালকান্দি গ্রামের হারুন রশিদের ছেলে মনির হোসেন (২২), একই এলাকার আ. মোতালিব মিয়ার ছেলে রবিউল (৩৩), রায়হান (২২), টান লক্ষ্মীপুর গ্রামের মহরম আলীর ছেলে স্বাধীন মিয়া (২০), নিলক্ষিয়া গ্রামের আমান মিয়া (২১) ও দেওয়ানেরচর গ্রামের আলমাছ আলীর ছেলে ইমন (২০)।

স্বজনদের দাবি, ১০ থেকে ১২ লাখ টাকা খরচ করে স্থানীয় দুই দালালের (দুলালকান্দি গ্রামের লাল মিয়ার ছেলে জাকির হোসেন এবং তার ফুফু একই এলাকার নুর কাসেমের স্ত্রী শাহিনুর) মাধ্যমে অবৈধভাবে ইতালি যাওয়ার উদ্দেশ্যে দেশ ছাড়েন।

নিখোঁজ কামাল হোসেনের ছোট ভাই জামাল মিয়া বলেন, ৫ থেকে ৬ মাস আগে তাঁর ভাইকে ১২ লাখ টাকা চুক্তিতে ইতালি নেওয়ার উদ্দেশ্যে প্রথমে লিবিয়া নিয়ে যাওয়া হয়। বেশ কিছুদিন গেম ঘরে রেখে গত বুধবার রাত ৮টায় সাগরপথে ইতালির উদ্দেশ্যে যাত্রা করার ৪০ মিনিট পর বহনকারী বোট ভূমধ্যসাগরে ডুবে যায়। জাকিরের তত্ত্বাবধানে থাকা ২০ জনের মধ্যে ১১ জন তীরে ফিরে আসলেও ৯ জন নিখোঁজ হয়ে যায়। 

নিখোঁজ রবিউলের ভাই ইব্রাহিম বলেন, ৮ মাস আগে ভৈরবের দালাল রবিউল্লার মাধ্যমে লিবিয়া যান তাঁর ভাই। কিন্তু সেখানে তাঁর ভাইকে বৈধ কোনও কাগজ করে দেওয়া হয় নি। দুলালকান্দি এলাকার দালাল জাকির হোসেন ইতালি যাওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে আমাদের কাছ থেকে ৯ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়। এখন খবর পেলাম আমার ভাই নিখোঁজ।

রবিউলের স্ত্রী সাথী আক্তার বলেন, ১৭ দিন আগে আমার স্বামীর সঙ্গে কথা হয়েছিলো। তিনি জানিয়েছিলেন, তাঁরা গেম ঘরে আছেন। বুধবার বোটে তুলবে, এ কথা বলে মোবাইল বন্ধ করে দেয়। তারপর থেকে আর যোগাযোগ করতে পারি নি।

বেলাব থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) তানভীর আহমেদ বাঙলার কাগজকে বলেন, কোনও অভিযোগ আসে নি। লোকমুখে খবর শুনে খোঁজখবর নিয়েছি। যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

বেলাব উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আয়েশা জান্নাত তাহেরা বাঙলার কাগজকে বলেন, ইতালি যাওয়ার পথে বেশ কয়েকজন নিখোঁজের সংবাদ শুনেছি। পরিবারের পক্ষ থেকে আমাদের সঙ্গে কেউ যোগাযোগ করেন নি। নিখোঁজের বিষয়ে জানতে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে যোগাযোগ করার চেষ্টা করছি।

এর আগে গত এক বছরে জেলার রায়পুরা, বেলাব, মনোহরদী এলাকার প্রায় ২৭ জন ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিতে গিয়ে নৌকা ডুবে নিখোঁজ হয়েছেন। এর মধ্যে ৯ জনের লাশ দেশে আনা হয়েছিলো।