নতুন অর্থবছরে ‘সংকোচনমুখী’ মুদ্রানীতি ঘোষণা।

নতুন অর্থবছরে ‘সংকোচনমুখী’ মুদ্রানীতি ঘোষণা।

নিজস্ব প্রতিবেদন, বাঙলা কাগজ : নতুন ২০২২-২৩ অর্থবছরে সংকোচনমুখী মুদ্রানীতি ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। যেখানে বেসরকারি খাতে ১৪ দশমিক ১০ শতাংশ ঋণ প্রবৃদ্ধির প্রক্ষেপণ করে মুদ্রানীতি ঘোষণা করা হয়েছে। আগের অর্থবছরে এই লক্ষ্যমাত্রা ছিলো ১৪ দশমিক ৮০ শতাংশ। ফলে নতুন মুদ্রানীতিতে এই ঋণ প্রবৃদ্ধি শূন্য দশমিক ৭০ শতাংশ কম ধরা হয়েছে। সে হিসাবে নতুন মুদ্রানীতিটি আগের তুলনায় ‘সংকোচনমুখী’।

বৃহস্পতিবার (৩০ জুন) বাংলাদেশ ব্যাংকের জাহাঙ্গীর আলম কনফারেন্স হলে এই মুদ্রানীতি ঘোষণা করেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবির। এ সময় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

বাংলাদেশ ব্যাংকের নতুন মুদ্রানীতিতে ২০২২-২৩ অর্থবছরে বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধির প্রক্ষেপণের মধ্যে ডিসেম্বর পর্যন্ত লক্ষ্য রাখা হয়েছে ১৩ শতাংশ ৬০ শতাংশ। অন্যদিকে, আগের অর্থবছরের মুদ্রানীতিতে এই লক্ষ্যমাত্রা ছিলো ১৪ দশমিক ৮০ শতাংশ। 

আর সার্বিকভাবে জুন পর্যন্ত প্রক্ষেপণ করা হয়েছে ১৪ দশমিক ১০ শতাংশ। শেষ হওয়া জুন পর্যন্ত বেসরকারি খাতে ঋণের প্রবৃদ্ধি হয়েছে মাত্র ১৩ দশমিক ১০ শতাংশ।

নতুন মুদ্রানীতিতে সরকারের লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী খাতটিতে ঋণ প্রবৃদ্ধি ধরা হয়েছে ৩৬ দশমিক ৩ শতাংশ। আর মোট অভ্যন্তরীণ ঋণের প্রবৃদ্ধি ধরা হয়েছে ১৮ দশমিক ২০ শতাংশ।

Monetary policy

মুদ্রানীতি ঘোষণাকালে গভর্নর ফজলে কবির বলেন, ২০২২-২৩ অর্থবছরের জন্য প্রক্ষেপিত ব্যাপক মুদ্রার প্রবৃদ্ধি ২০২১-২২ অর্থবছরের প্রক্ষেপিত প্রবৃদ্ধির (১৫ দশমিক শূন্য শতাংশ) তুলনায় কম। তবে তা ২০২২ সালের জুনের প্রাক্কলিত ৯ দশমিক ১ শতাংশ প্রবৃদ্ধির তুলনায় বেশি।

তিনি বলেন, ২০২১-২২ অর্থবছরের মতো ২০২২-২৩ অর্থবছরেও ব্যাংকিং খাতের নিট বৈদেশিক সম্পদের প্রবৃদ্ধি কিছুটা ঋণাত্মক হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। তবে ১২ দশমিক ১ শতাংশ প্রবৃদ্ধির মাধ্যমে সরকারি খাতে ৩৯ দশমিক ৪ শতাংশ এবং বেসরকারি খাতে ১৪ দশমিক ১ শতাংশ ঋণ বৃদ্ধিসহ মোট অভ্যন্তরীণ ঋণ ১৮ দশমিক ২ শতাংশ বাড়বে বলে প্রক্ষেপণ করা হয়েছে।

এ ছাড়া বাংলাদেশের রপ্তানি আয় ও আমদানি ব্যয় ২০২২-২৩ অর্থবছরে ঊর্ধ্বমুখী থাকার সম্ভাবনা থাকলেও উচ্চভিত্তির কারণে এগুলোর প্রবৃদ্ধি গত অর্থবছরের তুলনায় কম হতে পারে বলেই জানিয়েছেন গভর্নর ফজলে কবির।

তিনি বলেন, ২০২১-২২ অর্থবছরে জনশক্তি রপ্তানির পরিমাণ বৃদ্ধি পাওয়ায় ২০২২-২৩ অর্থবছরে রেমিট্যান্সের অন্তঃপ্রবাহ বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

এর আগে, ২০২২-২০২৩ অর্থবছরের বাজেটে জিডিপি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ৭ দশমিক ৫ শতাংশ ধরেছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। পাশাপাশি মূল্যস্ফীতি ৫ দশমিক ৬ শতাংশে রাখার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। জাতীয় সংসদে বৃহস্পতিবার বাজেট পাস হয়েছে। 

বাজেটের সঙ্গে সমন্বয় রেখেই মুদ্রানীতি ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

এদিকে চাহিদাজনিত মূল্যস্ফীতি চাপ কমানোর পাশাপাশি বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থান সৃষ্টিকারী খাতে ঋণ সরবরাহ নিশ্চিত করতে একদিন মেয়াদি রেপোর সুদহার ৫ শতাংশ থেকে ৫০ বেসিস পয়েন্ট বাড়িয়ে ৫ দশমিক ৫০ শতাংশ করা হয়েছে মুদ্রানীতিতে। এর আগে গত ২৯ মে এই হার ২৫ বেসিস পয়েন্ট বাড়িয়ে ৫ শতাংশ করা হয়েছিলো। 

তবে রিভার্স রেপোর হার আগের মতোই ৪ শতাংশ, বিশেষ রেপো হার ৮ শতাংশ এবং ব্যাংক রেট ৪ শতাংশ রাখা হয়েছে।

ব্যাংকগুলো যখন বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে ধার করে, তখন তার সুদহার নির্ধারিত হয় রেপোর মাধ্যমে। আর রিভার্স রেপোর মাধ্যমে ব্যাংকগুলো তাদের উদ্বৃত্ত অর্থ বাংলাদেশ ব্যাংকে জমা রাখে। বাংলাদেশ ব্যাংক বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে যে সুদহারে দীর্ঘমেয়াদী ঋণ দেয়, তাকে বলে ব্যাংক রেট। 

এসব সুদহারও মুদ্রানীতির মাধ্যমে নির্ধারণ (প্রক্ষেপণ) করা হয়ে থাকে।

বাংলাদেশ ব্যাংক সাধারণত মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ ও জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জনের মূল লক্ষ্য নিয়ে মুদ্রানীতি ঘোষণা করে থাকে। আগে এটি বছরে দুইবার ঘোষণা করা হলেও গত ২ বছর ধরে এটি বছরে একবার করে ঘোষণা করা হচ্ছে। আর গত দুই বছর করোনার কারণে তা শুধু ওয়েবসাইটেই প্রকাশ করেছিলো কেন্দ্রীয় ব্যাংক।