নগদ টাকায় এগিয়ে ওমর, মামলা বেশি মান্নানের, হিরো আলমের সঞ্চয়পত্র ৫৫ লাখ টাকার

নগদ টাকায় এগিয়ে ওমর, মামলা বেশি মান্নানের, হিরো আলমের সঞ্চয়পত্র ৫৫ লাখ টাকার

নিজস্ব প্রতিবেদন, বাঙলার কাগজ : বগুড়া-৬ (সদর) আসনের সংসদ উপনির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের মধ্যে জাতীয় পার্টি মনোনীত সাবেক সংসদ সদস্য নুরুল ইসলাম ওমরের নগদ অর্থের পরিমাণ দ্বিগুণেরও বেশি বেড়েছে। কমেছে ঋণের পরিমাণও। নির্বাচন কার্যালয়ে মনোনয়নপত্রের সঙ্গে দাখিল করা সম্পদ-বিবরণীসংক্রান্ত হলফনামায় এসব তথ্য উঠে এসেছে।

হলফনামা অনুযায়ী, আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী রাগেবুল আহসান রিপুর নগদ এবং ব্যাংকে জমা অর্থের চেয়ে বেশি ঋণ আছে। তবে ঋণের পরিমাণ এবং মামলার সংখ্যায় সবার শীর্ষে রয়েছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী সাবেক আওয়ামী লীগ নেতা আব্দুল মান্নান আকন্দ। আর অপর স্বতন্ত্র প্রার্থী সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আলোচিত আশরাফুল আলম ওরফে হিরো আলমের নগদ টাকা বেশি না থাকলেও সঞ্চয়পত্র আছে ৫৫ লাখ টাকার।

জাতীয় পার্টি মনোনীত প্রার্থী নুরুল ইসলাম ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত নির্বাচনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। ওই নির্বাচনে অংশগ্রহণের জন্য ২০১৩ সালের ডিসেম্বরে তাঁকে প্রথম সম্পদের বিবরণী দাখিল করতে হয়। এরপর ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বরে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে অংশগ্রহণের সময় তাঁকে আবারও সম্পদবিবরণী দাখিল করতে হয়। সর্বশেষ ২০১৯ সালের ২৪ জুন অনুষ্ঠিত উপনির্বাচনেও তিনি প্রার্থী হয়েছিলেন।

জাতীয় পার্টির প্রার্থী নুরুল ইসলামের ২০১৩, ২০১৮ এবং ২০২৩ সালে দাখিল সম্পদবিবরণী অনুসন্ধান করে দেখা গেছে, তাঁর সম্পদের পরিমাণ যেমন বেড়েছে, তেমনি কমেছে ব্যাংক ঋণও। ২০১৩ সালে তাঁর কাছে নগদ ৪০ লাখ ৬৬ হাজার ৩৪৪ টাকা ছিলো। ২০১৮ সালে তা ৮ লাখ বেড়ে হয় ৪৮ লাখ ৭২ হাজার ১৬৩ টাকা। আর ২০২৩ সালে দাখিল করা সম্পদবিবরণীতে তাঁর কাছে নগদ অর্থের পরিমাণ ১ কোটি ৬০ লাখ ৪৫ হাজার টাকা উল্লেখ করা হয়েছে।

অর্থাৎ, চার বছরের ব্যবধানে তাঁর নগদ অর্থের পরিমাণ দ্বিগুণের বেশি বেড়েছে। একই সময়ের ব্যবধানে তাঁর ঋণের পরিমাণও অর্ধেকেরও বেশি কমেছে। ২০১৩ সালে নুরুল ইসলাম ওমরের ১ কোটি টাকা ঋণ ছিলো। ২০১৮ সালে তা কমে ৬১ লাখ ৩৩ হাজার ৭৯৬ টাকায় দাঁড়ায়। আর বর্তমানে সেই ঋণের পরিমাণ আরও কমে হয়েছে ৩৭ লাখ ৬৩ হাজার ৭৬১ টাকা। তবে দীর্ঘদিন রাজনীতি করলেও এই রাজনীতিকের নামে কোনও মামলা নেই।

আসনটিতে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী রাগেবুল আহসান রিপু ব্যবসা ও হাটের ইজারা থেকে প্রতিবছর আট লাখ টাকা আয় করেন। পৈতৃকসূত্রে ১৫ বিঘা জমির মালিক রাগেবুল আহসান রিপুর নয়তলা বাড়ি এবং নয় একরের একটি মৎস্যখামার রয়েছে। ব্যাংকে তাঁর নামে ৩১ লাখ ১৫ হাজার ৬২২ টাকা জমা থাকলেও ঋণ আছে দ্বিগুণ ৬৬ লাখ ৪০ হাজার টাকা। আর তাঁর স্ত্রীর নামে রয়েছে আরও ১৬ লাখ ৬০ হাজার টাকার ঋণ। বগুড়া জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক রাগেবুল আহসান রিপুর নামেও কোনও মামলা নেই।

তবে মামলা এবং ঋণে ওই দুই প্রার্থীকে ছাড়িয়ে গেছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী সাবেক আওয়ামী লীগ নেতা আব্দুল মান্নান আকন্দ। হলফনামায় তিনি তাঁর নামে ১০টি মামলার তথ্য দিয়েছেন। আব্দুল মান্নান আকন্দের নিজের নামে ব্যাংকে প্রায় ৮১ লাখ টাকার ঋণের কথা উল্লেখ করেছেন। নিজেকে ব্যবসায়ী হিসেবে উল্লেখ করে তিনি বছরে সাড়ে ১২ লাখ টাকা আয়ের তথ্য দিয়েছেন। 

এ ছাড়া তাঁর নামে সাড়ে চার একর কৃষিজমি, ১৯ শতাংশ অকৃষিজমি, তিনটি ফ্ল্যাট, একটি মাইক্রোবাস এবং পৈতৃকসূত্রে পাওয়া তিনতলা একটি বাড়ি রয়েছে।

অপর স্বতন্ত্র প্রার্থী সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আলোচিত আশরাফুল আলম ওরফে হিরো আলম নিজেকে স্বশিক্ষিত বলে উল্লেখ করেছেন। তাঁর আয়ের প্রধান খাত হলো ব্যবসা। সেখান থেকে বছরে আড়াই লাখ টাকা পান তিনি। পৈতৃকসূত্রে পাওয়া দেড় বিঘা জমি থেকে তাঁর আয় ছয় হাজার টাকা। নয় শতাংশ অকৃষিজমির মালিক হিরো আলমের কাছে নগদ আছে মাত্র ৩০ হাজার টাকা। অবশ্য নগদ টাকার পরিমাণ কম থাকলেও ১০ ভরি স্বর্ণালংকার এবং ৫৫ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র রয়েছে তাঁর।

চার বছরের ব্যবধানে নগদ অর্থের পরিমাণ বৃদ্ধির কারণ জানতে চাইলে জাতীয় পার্টির প্রার্থী নুরুল ইসলাম ওমর বলেন, ‘সম্পত্তি বিক্রির কারণে নগদ অর্থ কিছুটা বেড়েছে এবং একই কারণে ঋণের পরিমাণও কমেছে।’

আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী রাগেবুল আহসান রিপু জানিয়েছেন, তাঁর ও তাঁর স্ত্রীর নামে যে ঋণ দেখানো হচ্ছে, সেটি আসলে সমমূলধন সহায়তা।

মামলা এবং ঋণের পরিমাণ বেশি হওয়ার কারণ জানতে চাইলে স্বতন্ত্র প্রার্থী আব্দুল মান্নান আকন্দ বলেন, ‘আমাকে দমিয়ে রাখার জন্য বিভিন্ন সময় মামলা দেওয়া হয়েছে। সে কারণে মামলার সংখ্যা বেড়েছে। আর ঠিকাদারি কাজের কারণে কিছু অর্থ ঋণ নিতে হয়েছে। তবে আগের চেয়ে ঋণ অনেক কমেছে।’