থ্যালাসেমিয়া রোধে বিয়ের আগে রক্ত পরীক্ষা করতে হবে : বিএসএমএমইউ উপাচার্য

থ্যালাসেমিয়া রোধে বিয়ের আগে রক্ত পরীক্ষা করতে হবে : বিএসএমএমইউ উপাচার্য

নিজস্ব প্রতিবেদন, বাঙলার কাগজ : বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, বাংলাদেশে জনসংখ্যার সাত শতাংশ অর্থাৎ প্রায় ১ কোটি ১০ লাখ মানুষ থ্যালাসেমিয়া রোগের বাহক। যেখান থেকে প্রতি বছর নতুন করে ৭ হাজার থ্যালাসেমিয়া আক্রান্ত শিশুর জন্ম হচ্ছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার এ তথ্যকে গুরুত্ব সহকারে নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। তাঁরা বলেছেন, বাংলাদেশকে থ্যালাসেমিয়া মুক্ত করতে বিয়ের আগে রক্ত পরীক্ষা করতে হবে। এক বাহক আরেক বাহককে বিয়ে করা যাবে না। দেশকে থ্যালাসেমিয়া মুক্ত করতে সরকারকে কঠোর ভূমিকা নিতে হবে। পাশাপাশি বেসরকারি খাতকে এগিয়ে আসতে হবে।

সোমবার (৮ মে) রাজধানীর একটি হোটেল বিশ্ব থ্যালাসেমিয়া দিবস উপলক্ষে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের হেমাটোলজি বিভাগের উদ্যোগে এক সেমিনারে বক্তারা এসব কথা বলেন।

বিএসএমএমইউ উপাচার্য অধ্যাপক ডা. শারফুদ্দিন আহমেদের সভাপতিত্বে সেমিনারে প্রধান অতিথি ছিলেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান ও জাতীয় সংসদে বিরোধী দলীয় উপনেতা জিএম কাদের। সেমিনারে সাইন্টিফিক পেপার উপস্থাপন করেন হেমাটোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক সালাউদ্দিন শাহ।

সেমিনারে আরও বক্তব্য দেন রোটারিয়ান ইঞ্জিনিয়ার এম এ ওয়াব, ডিসট্রিক্ট গভর্নর, হেমাটোলজি বিভাগের অধ্যাপক এ বি এম ইউনুস, অধ্যাপক এম এ আজিজ, ঢাকা মেডিকেল কলেজের হেমাটোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান অখিল রঞ্জন বিশ্বাস, বিএসএমএমইউ-এর হেমাটোলজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক শাহজাদা সেলিম।

জিএম কাদের বলেন, থ্যালাসেমিয়া বিশ্বব্যাপী জনস্বাস্থ্য সমস্যা। এটা আমাদের দেশেও বিপুল সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। সম্প্রতি থ্যালাসেমিয়া বাংলাদেশে ব্যাপক প্রকোপ ধারণ করেছে।

তিনি বলেন, থ্যালাসেমিয়া সংক্রান্ত আসল সমস্যা সরকারকে সমাধান করতে হবে। বেসরকারিভাবে নানা উদ্যোগ নেওয়া হলেও এটা কোনোভাবেই সমাধান হবে না। বর্তমানে থ্যালাসেমিয়া বন্ধ করতে সরকারের পক্ষ থেকে তেমন কোনো উদ্যোগ নেই।

তিনি আরও বলেন, থ্যালাসেমিয়া রোগীদের সরকারিভাবে নানা সহযোগিতা করতে হবে। জাতীয় পরিচয়পত্রে থ্যালাসেমিয়ার বাহক কিনা সেটা সংযুক্ত করতে হবে। এজন্য মানুষের মধ্যে সচেতনতা তৈরি করতে হবে। শুধু আইন করে এটা করা যাবে না।

বিএসএমএমইউ উপাচার্য বলেন, বিয়ের পাত্র-পাত্রী উভয়ই যদি থ্যালাসেমিয়ার বাহক হয়, তাহলে সন্তানও থ্যালাসেমিয়ায় আক্রান্ত হবে। তাই বিয়ের আগে থ্যালাসেমিয়ার উপস্থিতি শনাক্তে প্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা কার্যক্রম আরও বাড়াতে হবে।

অধ্যাপক সালাউদ্দিন শাহ বলেন, থ্যালাসেমিয়া রোগ রক্তের হিমোগ্লোবিনের গ্লোবিন জিনের বংশগত ত্রুটির কারণে হয়ে থাকে। ফলশ্রুতিতে থ্যালাসেমিয়া রোগীদের রক্তে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক কম থাকে এবং রক্তের মাধ্যমে শরীরে অক্সিজেন ও পুষ্টি পরিবহন ব্যাহত হয়। ফলে শরীরের বৃদ্ধি কম হয় এবং বিভিন্ন হাড়ের গঠনে বিকৃতি দেখা দিতে পারে। লিভার, হৃদপিণ্ডসহ বিভিন্ন অঙ্গের কার্যক্ষমতা হ্রাস পেতে পারে। বাবা-মা উভয়ে বাহক হলে সাধারণত সন্তান থ্যালাসেমিয়া রোগে আক্রান্ত হয়ে থাকে। থ্যালাসেমিয়া বাহকদের পরস্পরের মধ্যে বিয়ে পরিহার করা সম্ভব হলে থ্যালাসেমিয়া রোগীর সংখ্যা কমানো সম্ভব হবে।