তৈরি পোশাকের সবচেয়ে দ্রুতবর্ধনশীল বাজার এখন ভারত

তৈরি পোশাকের সবচেয়ে দ্রুতবর্ধনশীল বাজার এখন ভারত

নিজস্ব প্রতিবেদন, বাঙলার কাগজ ও ডন : বাংলাদেশ থেকে পোশাক রপ্তানির প্রধান বাজার মূলত পশ্চিমা দেশগুলো। মোট পোশাক রপ্তানির ৭১ শতাংশের বেশি হয় যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলোয়। রপ্তানি গন্তব্যের এ কেন্দ্রীভবন থেকে পর্যায়ক্রমে বেরিয়ে আসতে শুরু করেছে বাংলাদেশ। সাম্প্রতিক পরিসংখ্যান বলছে, প্রবৃদ্ধি বিবেচনায় বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানির সবচেয়ে বড় দেশ এখন ভারত। প্রবৃদ্ধির ধারা অব্যাহত থাকলে চলতি অর্থবছর থেকে ভারতে শুধু পোশাক রপ্তানি হতে পারে ১ বিলিয়ন বা ১০০ কোটি ডলারের।

রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) পরিসংখ্যানে দেখা যাচ্ছে, গত ২০২১-২২ অর্থবছরে ভারতে বাংলাদেশের মোট রপ্তানির অর্থমূল্য ছিল ১৯৯ কোটি বা প্রায় ২ বিলিয়ন ডলার। পোশাক প্রস্তুত ও রপ্তানিকারকদের সংগঠন বিজিএমইএর তথ্য অনুযায়ী, এর মধ্যে শুধু পোশাকই রপ্তানি হয়েছে ৭১ কোটি ৫৪ লাখ ১০ হাজার ডলারের। গত অর্থবছরে ভারতে বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানিতে প্রবৃদ্ধি হয়েছে প্রায় ৭০ শতাংশ।

চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরেও প্রবৃদ্ধির ধারা অব্যাহত আছে। অর্থবছরের প্রথম দুই মাসে (জুলাই-আগস্ট) প্রবৃদ্ধি হয় ৯৯ শতাংশ। সর্বশেষ জুলাই-সেপ্টেম্বর প্রান্তিকে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৬৬ শতাংশ। প্রবৃদ্ধির এ ধারা অব্যাহত থাকলে চলতি অর্থবছর শেষে শুধু ভারতে পোশাক রপ্তানির অর্থমূল্য ১ বিলিয়ন ডলার ছাড়াবে বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা।

পোশাক রপ্তানিকারকেরা জানিয়েছেন, ভারতে পোশাক রপ্তানি বৃদ্ধি নিয়ে আগে থেকেই আত্মবিশ্বাসী ছিলেন তারা। এটি বাস্তবায়নে তারা কাজও করছিলেন, এরই প্রতিফলন দেখা যাচ্ছে রপ্তানির প্রবৃদ্ধিতে। ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশ প্রতিযোগিতায় নামবে না। বাংলাদেশ ও ভারত একে অন্যের পরিপূরক হিসেবে কাজ করবে। ভারতের সক্ষমতাকে কাজে লাগিয়ে বাংলাদেশ পণ্যে মূল্য সংযোজন করে রপ্তানি করবে।

জানতে চাইলে বিজিএমইএ সভাপতি ফারুক হাসান বাঙলার কাগজ ও ডনকে বলেন, বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানিকারকেরা ভারত থেকে তুলা  সুতা কাপড় কেনেন। ভারতে গিয়ে বিভিন্ন সময়ে আমি বলেছি, তারা যেন আমাদের প্রতিযোগী না ভাবে। গত কয়েক বছরে এ বিষয়গুলো আমরা ভারতকে বোঝাতে সক্ষম হয়েছি। সে হিসেবে ভারতে আমাদের রপ্তানি বেড়েছে। আমি আশা করি এ খারাপ সময়ের মধ্যেও দেশটিতে রপ্তানি প্রবৃদ্ধির গতি আমরা ধরে রাখতে পারব। অন্যান্য দেশে আমাদের প্রবৃদ্ধি নেতিবাচক। ভারতে প্রবৃদ্ধি ইতিবাচক থাকবে বলে আমি মনে করি। এ বিষয়ে আমি আত্মবিশ্বাসী।

তিনি আরও বলেন, আমরা এখন কটনবহির্ভূত রপ্তানি বৃদ্ধির জন্য ম্যান মেড ফাইবার বা কৃত্রিম তন্তু নিয়ে কাজ করছি। বাংলাদেশ এখনো ম্যান মেড ফাইবারের টেক্সটাইল সক্ষমতার দিক থেকে প্রতিযোগিতামূলক অবস্থায় নেই। প্রাপ্যতা নেই বললেই চলে। ভারত ম্যান মেড ফাইবারে অনেক শক্তিশালী। দেশটি থেকে আমরা কাঁচামাল আনছি। এদিকে আমাদের রপ্তানি বাড়ছে। আমরা পারস্পরিক সহযোগিতা শুরু করে দিয়েছি। এখনো আমরা এলডিসি হিসেবে শুল্ক সুবিধা কাজে লাগাচ্ছি। আশা করি আরো বেশ কয়েক বছর করব। এ অবস্থায় রপ্তানি বিকাশে ভারতের ডিজাইনার বা কারিগরি সক্ষমতা ব্যবহার করে আমাদের মূল্য সংযোজন সক্ষমতা বাড়াব। সব মিলিয়ে যৌথভাবে পারস্পরিক সহযোগিতা বৃদ্ধির মাধ্যমে প্রবৃদ্ধির ধারা অব্যাহত রাখা সম্ভব হবে বলে আমরা মনে করি।

পোশাক রপ্তানিকারকেরা বলছেন, ভারতের সঙ্গে বাণিজ্যের ক্ষেত্রে দুই ধরনের সুবিধার ক্ষেত্র আছে। এখন পশ্চিমা বাজারগুলো অর্থনৈতিক মন্দায় চলে গিয়েছে। পোশাক ক্রয়ে ব্যয় একেবারেই কমে এসেছে। ক্রেতাদের আর্থিক দায় বেড়েছে। খাদ্যশস্যের দামও বেড়ে গিয়েছে। আগে পোশাক ক্রয়ে যে ধরনের ব্যয় সক্ষমতা ছিল সেটিও এখন ঘাটতির দিকে যাচ্ছে। এ কারণে ভারতের বাজার খুব কাজে লাগছে। আরেকটি সুবিধার ক্ষেত্র হলো মৌসুম। যুক্তরাষ্ট্র-কানাডায় শীত মৌসুম শুরুর আগেই শীতের পোশাক রপ্তানি করতে হয়। গ্রীষ্মের পোশাক পাঠাতে হয় চার-ছয় মাস আগে। এতে অফ সিজনের মধ্যে থাকতে হয়। কিন্তু ভারতে অনেক আগে পাঠাতে হয় না। কোনো অফ সিজন থাকে না। এ কারণে ভারতে সারা বছরের মৌসুম সুবিধা কাজে লাগানো সম্ভব।

সাম্প্রতিক সময়ে পশ্চিমা দেশগুলোয় পোশাক রপ্তানি প্রবৃদ্ধির চিত্র ভারতের চেয়ে ভালো নয়। বিজিএমইএর পরিসংখ্যান অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে কানাডায় রপ্তানি প্রবৃদ্ধি ছিলো ১৭ দশমিক ৪ শতাংশ, ইউরোপে ১২ দশমিক ৪৩, অস্ট্রেলিয়ায় ১৪ দশমিক ২১, জাপানে ১৬ দশমিক ৬ ও কানাডায় ছিলো ১৭ দশমিক ৪ শতাংশ। আর প্রতিবেশি দেশ ভারতে রপ্তানি প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৬৬ শতাংশেরও বেশি।

তবে এখনো ভারতের সঙ্গে পোশাক রপ্তানির পথ মসৃণ হওয়ার পথে অনেক বাধা দেখতে পাচ্ছেন রপ্তানিকারকেরা। তাঁদের ভাষ্যমতে, ভারতে রপ্তানি বাড়াতে বাংলাদেশে পণ্য আমদানি সহজীকরণ প্রয়োজন। স্থলবন্দরগুলোর মধ্যে ব্যবহার করা যায় শুধু একটি। সেখানেও আংশিক জাহাজীকরণের অনুমতি নেই। এটি বাংলাদেশের পক্ষ থেকে একটা বাধা। প্রতিবেশী দেশ হিসেবে ভারতের সঙ্গে বাণিজ্যে পরিবহন খরচ কম। আবার সে দেশেও পরীক্ষা-নিরীক্ষা সংক্রান্ত বাধা রয়েছে। এছাড়া পণ্যের ন্যূনতম মূল্যসীমা নিয়েও দেশটির আপত্তি আছে। এক্ষেত্রে বিশেষ অনুমোদনের প্রয়োজন হয়। এতে পণ্য সরবরাহে বিলম্ব হয়। ভারতের সঙ্গে বাণিজ্য বৃদ্ধির ক্ষেত্রে এসব অশুল্ক বাধা রয়েছে, যা দূর করা প্রয়োজন।