ঢাকা মেডিকেলে আহতদের পাশে প্রধানমন্ত্রী : আর্থিক সহায়তা প্রদান

ঢাকা মেডিকেলে আহতদের পাশে প্রধানমন্ত্রী : আর্থিক সহায়তা প্রদান

নিজস্ব প্রতিবেদন, বাঙলার কাগজ : কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে যারা আহত হয়েছেন, তাদের দেখতে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে (ঢামেক) গেছেন প্রধানমন্ত্রী এবং বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনা। এ সময় আহতদের চিকিৎসা ও রোজগারের ব্যবস্থা সরকার করবে বলে আশ্বাস দিয়েছেন তিনি। তখন প্রধানমন্ত্রী আহতদের আর্থিক সহায়তা প্রদান করেন।

এ সময় প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সাম্প্রতিক সহিংসতায় দলমতনির্বিশেষে আহত সবার চিকিৎসা ও আয়-রোজগারের ব্যবস্থা করবে সরকার।' শুক্রবার (২৬ জুলাই) বিকালে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে সহিংসতায় আহতদের দেখতে গিয়ে তিনি এ কথা বলেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, সহিংসতায় আহতদের চিকিৎসার জন্য যা যা দরকার সবই করবে সরকার। আহতরা যেই দলেরই হোক চিকিৎসার দায়িত্ব নেবে সরকার। সহিংসতায় যারা মারা গেছেন, তাদের আত্মার মাগফিরাত এবং আহতদের দ্রুত সুস্থতা কামনা করে শেখ হাসিনা বলেন, অত্যন্ত বেদনাদায়ক অবস্থা, আজকে এতগুলো মানুষ আহত-নিহত। 

তিনি বলেন, আমি তো আমার সব হারিয়েছি, বাবা-মা ভাই সব হারিয়েছি, আমি তো জানি মানুষের হারানোর বেদনা কী? আমার চেয়ে বোধহয় আর কেউ বেশি জানে না।

বর্বরতার বিরুদ্ধে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন,  দেশবাসীর কাছে এটুকু বলবো, যারা অপরাধী তাদের খুঁজে বের করতে হবে। সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে এ বর্বরতার বিরুদ্ধে, জঘন্য ঘটনার বিরুদ্ধে। তিনি বলেন, আমি আবারও বলব, যারা এ ধরনের জঘন্য কাজ করেছে, তাদের খুঁজে বের করব। তাদের উপযুক্ত শাস্তি দেওয়া হবে, যাতে কেউ আর কখনো এ দেশের মানুষের জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলতে না পারে।

তিনি বলেন, কখনোই চাই নি এভাবে মানুষ আপনজন হারাক, এভাবে মৃত্যুর মিছিল হবে এটা কখনো চাই নি। আজকে বাংলাদেশেও বর্বরতা সেটাই করল।

জামায়াত-শিবির, বিএনপির সমালোচনা করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘জামায়াত-শিবির, বিএনপি, ছাত্রদল কোটা আন্দোলনের সুযোগ নিয়ে দেশব্যাপী ধ্বংসাত্মক কাজ করে যাচ্ছে। এদের মধ্যে কোনও মনুষ্যত্ববোধ নেই, দেশের প্রতি কোনও মায়া-মমতা নেই, দেশের প্রতি কোনও দায়িত্ববোধ নেই। মানুষকে এরা মানুষ হিসেবেই গণ্য করে না।'

তিনি এতোগুলো মানুষের জীবন চলে যাওয়া এবং অনেক পরিবারের ক্ষতি সম্পর্কে বলেন, ‘আমার প্রশ্ন, এর মধ্যদিয়ে তাদের অর্জনটা কী হলো?’

শেখ হাসিনা  বলেন, ‘সেই ৭১ সালের কথা মনে পড়ে। ২০১৩ তে ৩ হাজার ৮০০ মানুষকে পোড়ানো, মেরে ফেলা হয়, আবার ২০১৪ তেও সেই একই কাজ করা হয়েছে। ২০২৩ এর ২৮ অক্টোবরে তারা পুলিশকে যেভাবে মেরেছে, এবার পুলিশকে শুধু মারাই হয় নি, মেরে লাশ ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে। আওয়ামী লীগের এক কর্মীকে মেরে ঝুলিয়ে রেখেছে। এ কেমন বর্বরতা?’

তিনি হাসপাতালের আহতদের চিকিৎসার কোনও ঘাটতি হয় নি উল্লেখ করে তাদের চিকিৎসায় যা যা প্রয়োজন সব করার ঘোষণা দেন। শেখ হাসিনা বলেন, আহতদের চিকিৎসার জন্য যা যা প্রয়োজন সরকার করে যাচ্ছে এবং করবে। চিকিৎসা শেষে তাদের অন্তত আয় রুজির ব্যবস্থা যাতে হয় সেটাও আমরা করব।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আমি মানুষকে মানুষ হিসেবে দেখি। এখানে দলমত নির্বিশেষে সবার জন্য আমি কাজ করি। আমি যা করি সব মানুষের জন্য করি। কে আমাকে সমর্থন করে, কে করে না- আমি সেটা চিন্তা করি না। কারণ আমি জাতির পিতা শেখ মুজিবুর রহমানের কন্যা। মানুষ আমাকে ভোট দিয়ে প্রধানমন্ত্রী করেছে, তাদের সেবা করতে। সেভাবেই আমি সেবা করি। শান্তিপূর্ণ পরিবেশ এবং দেশের সমৃদ্ধির জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমি চাচ্ছিলাম দেশে শান্তি থাকবে, দেশের মানুষের উন্নতি হবে, দেশের মানুষ সুন্দরভাবে বাঁচবে। আমি সব দিকে ব্যবস্থা করেছি।'

তিনি উল্লেখ করেন, কতবার আমাকে মারার চেষ্টা করেছে। তারপরও আমি সবকিছু ভুলে, সবকিছু মোকাবিলা করে আমি দেশের জন্য কাজ করে যাচ্ছি। মানুষ যেনো ভালো থাকে। 

তিনি বলেন, ‘অথচ সেইখানে আঘাত হানা হলো, মানুষের ওপর হামলা করা হলো। মানুষের সেবা করার প্রতিষ্ঠানগুলো ধ্বংস করা হলো। এর চেয়ে কষ্টের আর কিছু হতে পারে না। ’

সরকার কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সব দাবি মেনে নেওয়া হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আমরা তো সব দাবি মেনেই নিয়েছি। তারপরও কেন দাবি তোলা? এখানেই আমার প্রশ্ন। এটা কি জঙ্গিবাদকে সুযোগ করে দেওয়ার জন্য?’

দেশবাসীর কাছে দোয়া চেয়ে শেখ হাসিনা বলেন, দেশবাসীকে বলব আপনারা দোয়া করুন, যেন এই জঙ্গিবাদ এবং জুলুমের হাত থেকে মানুষ যেনো মুক্তি পান। মানুষের জীবনে যেনো শান্তি আসে।

এর আগে প্রধানমন্ত্রী ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন সাম্প্রতিক সহিংসতায় আহতদের খোঁজখবর নেন। তাঁদের সঙ্গে কথা বলেন এবং তাঁদের আর্থিক সহায়তা প্রদান করেন  এ সময় প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রী ডা. সামন্ত লাল সেন, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. রোকেয়া সুলতানা প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।