ডিজেলের দাম বেশি কমিয়ে অকটেন-পেট্রোল থেকে ভর্তুকি নিলেও সমস্যা হতো না।

ডিজেলের দাম বেশি কমিয়ে অকটেন-পেট্রোল থেকে ভর্তুকি নিলেও সমস্যা হতো না।

কালাম আঝাদ’র কলাম : ডিজেলের দাম নিয়ন্ত্রণে রাখলে পণ্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে থাকে; প্রয়োজনে ডিজেলের দামের কিছু ভর্তুকি অকটেন এবং পেট্রোল থেকে নেওয়া যেতো। সবমিলিয়ে ডিজেলের দাম আগের দামই রেখে অর্থাৎ ১ টাকাও না বাড়িয়ে অকটেন এবং পেট্রোলের কিছু দাম বাড়ানো যেতো (প্রথম দফায়)। অথচ প্রথম দফায় সব ধরনের জ্বালানি তেলের দাম এমনভাবে বাড়ানোয় এখন ট্রাক ভাড়া থেকে শুরু করে সব ধরনের পণ্যমূল্যও বেড়ে গেছে। এমনকি বাস ভাড়া, লঞ্চ ভাড়াও বেড়ে গেছে। যে গাড়িটি গ্যাসে চলে, সেটিকেও ডিজেল চালিত লিখে চালানো হচ্ছে। সার্বিকভাবে একজন সাধারণ মানুষের ওপর যে কী পরিমাণ খড়গ পড়েছে, তা কোনোভাবেই বোঝানো যাবে না। এই অবস্থায় এখন জ্বালানি তেলের দাম কিছু কমালেও তা সাধারণ মানুষ পর্যন্ত পৌঁছাবে না। কারণ জিনিসপত্রের দাম তো বেড়েছে, বেড়েছেই; এখন আর সেটা কমানো সম্ভব নয়। সুতরাং যে কোনও সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে খুব ভেবেচিন্তে নেওয়া উচিত। সরকারের গত কয়েক মাসের বেশ কয়েকটি সিদ্ধান্তের কারণে একমাত্র লাভবান হয়েছে এবং হচ্ছে শুধু ব্যবসায়ীরাই; আর দেশের সকল মানুষই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। সুতরাং এটি জনমতে বড় ধরনের বিরূপ প্রভাব ফেলছে। যা বিএনপির আন্দোলনে ঘি ঢালছে। সুতরাং এ ধরনের সিদ্ধান্ত অর্থাৎ ঘরের কোনও শত্রু এসব বিষয়ে ভূমিকা রাখছে কি-না; তা আমাদেরকে কঠোরভাবে খতিয়ে দেখতে হবে। আমাদের মনে রাখতে হবে, জনবান্ধব সরকার না হয়ে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের উদাহরণ দেওয়া কোনোভাবেই যৌক্তিক নয়। কারণ সেসব উন্নত দেশের একজন মানুষের যে পরিমাণ আয়, তা আমাদের দেশের ৩০ থেকে ৪০ জন এমনকি অর্ধশত মানুষের আয়েরও সমান। সুতরাং তাঁদের দেশে কিছু পরিমাণ দাম বাড়লে, সেটা তাঁরা ম্যানেজ করে নিতে পারবে। কিন্তু আমাদের দেশের হুটহাট সিদ্ধান্ত নিয়ে জনগণকে ভোগান্তিতে ফেললে তা ‘শ্রীলঙ্কার মতো উসকানি দেবে’; যা কোনোভাবেই কাম্য হতে পারে না। সবমিলিয়ে চালে শুল্ক কমানোর পরও এখন আমরা দেখবো, ব্যবসায়ীরা লাভবান হচ্ছেন; আর অকটেন এবং পেট্রোলের দাম কমিয়ে যে পরিমাণ রাখা হয়েছে, তা ঠিক থাকলেও ডিজেলের দাম ঠিক নেই। তা অনেক কমানোর প্রয়োজন ছিলো। প্রয়োজনে অকটেন এবং পেট্রোলের বর্তমান দাম থেকেই কিন্তু ডিজেল এবং কেরোসিনের দামের ভর্তুকির সমন্বয় হয়ে যেতো; তাতে অবশ্য সরকারের কিছুটা লাভ কম হতো; কিন্তু জনগণ স্বস্তিতে থাকতো। আমাদেরকে জনবান্ধব হতে হবে; জনগণের সরকার হতে হবে। কারণ অকটেন এবং পেট্রোল একজন গরীব মানুষের প্রয়োজন নেই; ধনী মানুষের প্রয়োজন- সুতরাং এই পণ্য দুটির দাম কিছু বেশি থাকলেও সমস্যা নেই; সমস্যা ডিজেলের দাম বেশি থাকলে- তা পণ্যমূল্য বাড়িয়ে দেয় হু হু করে। সুতরাং আমাদের সিদ্ধান্তগুলোকে অধিকতর যৌক্তিক এবং জনবান্ধব করার এখনই সময়, এখনই।