ডাকাতির টাকায় স্ত্রীর নামে গাজীপুরে তিনতলা বাড়ি!

ডাকাতির টাকায় স্ত্রীর নামে গাজীপুরে তিনতলা বাড়ি!

নিজস্ব প্রতিবেদন, বাঙলার কাগজ : গায়ে সাদা রঙের পাঞ্জাবি, মাথায় কালো টুপি। হাতে একটি ব্যাগ নিয়ে পা খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে একটি সোনার দোকানে ঢুকলেন এক ব্যক্তি। তাঁর ইশারায় একে একে দোকানে ঢুকলেন আরও চারজন। ব্যাগ থেকে সাদা রঙের একটি পিস্তল বের করে দোকানে থাকা স্বপন মণ্ডলের মাথায় ঠেকালেন ওই ব্যক্তি। এ সময় ডাকাত দলের অন্য সদস্যরা দোকানের তাক ভেঙে স্বর্ণালঙ্কার ব্যাগে ভরতে থাকেন। স্বপন মণ্ডল বাধা দিতে গেলে পিস্তল হাতে থাকা ব্যক্তি তাঁর ডান পায়ের হাঁটুর ওপর গুলি করেন। ডাকাতি শেষে পাঁচ–সাতটি হাতবোমার বিস্ফোরণ ঘটিয়ে পালিয়ে যান তাঁরা।

গত ১৭ আগস্ট দুপুরে ঢাকার দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের আবদুল্লাহপুর এলাকার আল আমিন জুয়েলার্সে এই ডাকাতির ঘটনা ঘটে। দোকানে থাকা সিসি ক্যামেরায় পুরো দৃশ্যটি ধরা পড়ে। দুটি মোটরসাইকেলে এসে মাত্র তিন মিনিটে ডাকাতি করে পালিয়ে যান ডাকাত দলের সদস্যরা। এ ঘটনায় দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানায় মামলা করা হলেও সোমবার (২৬ ডিসেম্বর) পর্যন্ত কেউ ধরা পড়েন নি।

এর এক মাস আগে ময়মনসিংহ জেলার ভালুকা থানায় একই কায়দায় ডাকাতি হয় প্রদীপ জুয়েলারি নামের আরেক স্বর্ণালঙ্কারের দোকানে। দোকানমালিক কৃঞ্চ কর্মকার বাদি হয়ে মামলা করলেও আসামিরা গ্রেপ্তার হন নি।

সম্প্রতি রাজধানীর খিলগাঁও এলাকার একটি ডাকাতির ঘটনা তদন্তে নেমে সোনার দোকানে ডাকাতিতে জড়িত একটি চক্রকে শনাক্ত করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। ওই চক্রের সদস্যরাই কেরানীগঞ্জ ও ভালুকার ডাকাতিতে জড়িত।

এ ছাড়া দেশের বিভিন্ন জেলার অর্ধশতাধিক সোনার দোকানে হানা দিয়ে কোটি কোটি টাকার স্বর্ণালঙ্কার ডাকাতি করেছে চক্রটি।

ময়মনসিংহ জেলার পুলিশ সুপার মাসুম আহমেদ ভূঁইয়া সোমবার বাঙলার কাগজ ও ডনকে বলেন, ‘প্রদীপ জুয়েলারির দোকানে ডাকাতির হোতাকে আমরা শনাক্ত করেছি। তাঁকে গ্রেপ্তারের পর বিষয়টি আনুষ্ঠানিকভাবে জানানো হবে।’

ডিবি সূত্র বলছে, এই ডাকাত দলের হোতার নাম হাসান জমাদ্দার। তাঁর বাড়ি বরিশালের বাকেরগঞ্জের রূপারজোর এলাকায়। ১৩ বছর ধরে ডাকাতি করছেন তিনি। তাঁর বিরুদ্ধে ঢাকা, মানিকগঞ্জ, ময়মনসিংহ, চট্টগ্রাম, ঝলকাঠিসহ বিভিন্ন জেলায় করা ১৪টি মামলায় গ্রেপ্তারি পরোয়ানা রয়েছে। দেশে ডাকাতি করে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবা সীমান্ত দিয়ে ভারতে গিয়ে থাকেন এই ব্যক্তি। সেখানে আধার কার্ড রয়েছে তাঁর। ভারত থেকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ইমো ও হোয়াটসঅ্যাপ ব্যবহার করে দলের অন্য সদস্যদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। সেখান থেকে এসে ডাকাতিতে অংশ নেন।

সূত্রমতে, প্রতিটি ডাকাতির ঘটনায় হাসান জমাদ্দারের নেতৃত্বে অংশ নেন ছয় থেকে আটজন সদস্য। ডাকাতির জন্য দোকান নির্দিষ্ট করার পর ভাড়া করা প্রাইভেটকার বা মোটরসাইকেলে করে সেখানে যান। ডাকাতির সোনা পুরান ঢাকার নির্দিষ্ট দোকানে বিক্রি করে টাকা ভাগাভাগির পর আত্মগোপনে চলে যান সবাই।

সোনার দোকানে ডাকাত চক্রের মূল হোতা হাসান জমাদ্দারকে দীর্ঘদিন ধরে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে বলেই জানান ডিবির অতিরিক্ত উপকমিশনার শাহিদুর রহমান।

পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, ঢাকার একটি ডাকাতির ঘটনায় ২০১২ সালে হাসানকে গ্রেপ্তার করেছিলেন ডিবির সদস্যরা। চট্টগ্রামে ডাকাতি করতে গিয়ে ২০১৪ সালে পুলিশের সঙ্গে গোলাগুলির ঘটনায় পায়ে গুলিবিদ্ধ হয়েছিলেন তিনি। ডাকাতির টাকায় স্ত্রীর নামে গাজীপুরে তিনতলা বাড়ি করেছেন হাসান।