চলে গেলেন শর্মিলী আহমেদ ও আলম খান। সাংস্কৃতিক অঙ্গনে শোক।

চলে গেলেন শর্মিলী আহমেদ ও আলম খান। সাংস্কৃতিক অঙ্গনে শোক।

নিজস্ব প্রতিবেদন, বাঙলা কাগজ : প্রখ্যাত অভিনেত্রী শর্মিলী আহমেদ এবং ৬ বার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারপ্রাপ্ত সঙ্গীত পরিচালক ও সুরকার আলম খান মারা গেছেন। তাঁদের মৃত্যুতে সাংস্কৃতিক অঙ্গনে নেমে এসেছে শোকের ছায়া।

শর্মিলী আহমেদ : শুক্রবার (৮ জুলাই) সকাল ১০টার দিকে মারা যান প্রখ্যাত অভিনেত্রী শর্মিলী আহমেদ। 

অভিনয় শিল্পী সংঘের সভাপতি আহসান হাবিব নাসিম বাঙলা কাগজ ও ডনকে বলেন, ‘শর্মিলী আহমেদ ক্যানসারে আক্রান্ত ছিলেন, তাঁর চিকিৎসা চলছিলো। সকালে রাজধানীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। ’

ক্যারিয়ারের শুরুতে শর্মিলী আহমেদ ছিলেন ঢাকাই সিনেমার জনপ্রিয় অভিনেত্রী। পরে ছোট পর্দার মা, দাদি চরিত্রে অভিনয়ের মাধ্যমে দর্শকদের মনে শক্তিশালী অবস্থান তৈরি করেছিলেন।

১৯৪৭ সালে জন্ম নেওয়া এ জনপ্রিয় অভিনেত্রী অভিনয় শুরু করেন মাত্র ৪ বছর বয়স থেকে। এখন পর্যন্ত প্রায় চার শ নাটক ও দেড় শ চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন তিনি। অভিনয় জীবনে মঞ্চ, টিভি ও চলচ্চিত্রের বৈচিত্র্যপূর্ণ চরিত্রে অভিনয় করেছেন তিনি। সবার মন জয় করেছেন সাবলীল অভিনয় দিয়ে।

১৯৬৪ সালে তিনি তাঁর অভিনয় পেশা শুরু করেন। বেতারের মাধ্যমেই ক্যারিয়ারের সূচনা ঘটেছিলো তাঁর। তিনি বাংলাদেশের প্রথম ধারাবাহিক নাটক ‘দম্পতি’-তে অভিনয় করেন। ১৯৭৬ সালে মোহাম্মদ মহসিন পরিচালিত ‘আগুন’ সিনেমায় মায়ের ভূমিকায় প্রথম অভিনয় করেন তিনি। 

এদিকে অভিনেত্রী শর্মিলী আহমেদকে বাদ আসর রাজধানীর বনানী কবরস্থানে দ্বিতীয় জানাজার পর সমাহিত করা হয়।

এর আগে বাদ জুমা উত্তরায় ১১ নম্বর সেক্টর মসজিদের শর্মিলী আহমেদের প্রথম জানাজা অনুষ্ঠিত হয়।

আলম খান আর নেই : বাংলা গানের কিংবদন্তি সুরকার ও সঙ্গীত পরিচালক আলম খান আর নেই। শুক্রবার (৮ জুলাই) বেলা ১১টা ৩২ মিনিটে মারা গেছেন তিনি। এ খবর নিশ্চিত করেছেন তার পুত্র সঙ্গীত পরিচালক আরমান খান।

সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে আরমান খান লিখেছেন, ‘আব্বা চলে গেলেন না ফেরার দেশে। শুক্রবার বেলা ১১টা ৩২ মিনিটে।’

বাংলা সিনেমার গানে অবিস্মরণীয় নাম আলম খান। দীর্ঘ ক্যারিয়ারে তিনি অসংখ্য কালজয়ী গান সৃষ্টি করেছেন। তিনি একাধারে গীতিকার, সুরকার ও সঙ্গীত পরিচালক ছিলেন।

আলম খানের জন্ম ১৯৪৪ সালের ২২ অক্টোবর সিরাজগঞ্জের বানিয়াগাতি গ্রামে। ঢাকার সিদ্ধেশ্বরী স্কুল থেকে মেট্রিক পাশ করেন তিনি। এই স্কুলে থাকা অবস্থায়ই গানের প্রতি আগ্রহী হন এবং মায়ের উৎসাহে তিনি গানের চর্চা শুরু করেন। এরপর বাবাও সমর্থন দেন। তাঁর ছোট ভাই ছিলেন বাংলাদেশের কিংবদন্তি পপ শিল্পী আজম খান।

গানের ভুবনে আলম খানের আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হয় ১৯৬৩ সালে। সুরকার ও সঙ্গীত পরিচালক রবিন ঘোষের সহকারী হিসেবে তিনি ‘তালাশ’ সিনেমার সঙ্গীত পরিচালনা করেন।

৭ বছর সহকারি হিসেবে কাজের পর ১৯৭০ সালে আলম খান একক সঙ্গীত পরিচালক হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন। তবে সাফল্য পেতে অনেকটা দেরি হয় তাঁর। ১৯৭৮ সালে মুক্তি পাওয়া ‘সারেং বৌ’ সিনেমার জন্য তিনি তৈরি করেন ‘ও রে নীল দরিয়া’ গানটি। দেশজুড়ে এটি তুমুল জনপ্রিয়তা পায়। এখনো সমান জনপ্রিয় গানটি।

এরপর আলম খান আরও বহু কালজয়ী গান সৃষ্টি করেছেন। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে, ‘হায়রে মানুষ রঙিন ফানুস, দম ফুরাইলে ঠুস’, ‘আমি রজনীগন্ধা ফুলের মতো গন্ধ বিলিয়ে যাই’, ‘ডাক দিয়াছেন দয়াল আমারে’, ‘কি জাদু করিলা, পিরিতি শিখাইলা’, ‘তুমি যেখানে, আমি সেখানে’, ‘সবাই তো ভালবাসা চায়’, ‘ভালবেসে গেলাম শুধু’, ‘চাঁদের সাথে আমি দেবো না, তোমার তুলনা’, ‘আমি একদিন তোমায় না দেখিলে’, ‘তেল গেলে ফুরাইয়া’, ‘আমি তোমার বধূ, তুমি আমার স্বামী’, ‘জীবনের গল্প, আছে বাকি অল্প’, ‘মনে বড় আশা ছিলো’, ‘সাথীরে, যেও না কখনো দূরে’, ‘বেলি ফুলের মালা পরে’, ‘কাল তো ছিলাম ভালো’, ‘চুমকি চলেছে একা পথে’, ‘ভালবাসিয়া গেলাম ফাঁসিয়া’, ‘তুমি কি এখন আমারই কথা ভাবছো’, ‘আকাশেতে লক্ষ তারা, চাঁদ কিন্তু একটাইরে’ ইত্যাদি।

আলম খান তাঁর ক্যারিয়ারে ৬ বার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন। এর মধ্যে ৫ বার পেয়েছেন শ্রেষ্ঠ সঙ্গীত পরিচালক হিসেবে এবং ১ বার শ্রেষ্ঠ সুরকার হিসেবে।